ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ২০২৩ সালের শেষ দিনের রাতে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ডিএমপির এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফানুস উড়ানো হয় এবং পটকা ফোটানো হয়। ফানুস থেকে লাগা আগুনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন জায়গায়। রাজধানীর কামরাঙ্গীচরে তিনজন দগ্ধও হয়েছেন। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের আয়োজন করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে  মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ এবং পরিবেশের ক্ষতির কথা জানিয়ে আলেম সমাজের পক্ষ থেকেও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের প্রতি অনুৎসাহিত করা হয়েছে। বছরের প্রথম প্রহরে উদযাপন না করার আহ্বান জানিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেছেন জনপ্রিয় চার আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ, লেখক ও আলোচক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মালয়েশিয়া প্রবাসী মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, খতিব ও আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। 

শায়খ আহমাদুল্লাহ 

নিজের ফেসবুক পেইজে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন,  থার্টি ফার্স্ট নাইট এখন এক আতঙ্কের নাম হয়ে গেছে নগরবাসীর জীবনে। 
যে আগুন এক মুহূর্তে ছাই করে দিতে পারে আমাদের সম্পদ, জীবন এবং সাজানো সংসার; সেই আগুন হয়ে উঠেছে আমাদের বর্ষবরণের প্রধান উপকরণ।

একটা প্রজন্ম কতটা উন্মাদ, অবিবেচক, উচ্ছৃঙ্খল হলে আগুন আর পটকা নিয়ে উৎসব করতে পারে!

গত দুই বছরে থার্টি ফার্স্ট নাইটের উন্মত্ততা যেন লাগামছাড়া হয়ে গেছে। উল্লাসকারীদের পটকার আওয়াজে একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার ঘটনা এখনো আমাদের হৃদয় রক্তাক্ত করে। সর্বস্ব দিয়ে গড়ে তোলা সেই দরিদ্র নারী উদ্যোক্তা, ফানুসের আগুনে যার প্লাস্টিক কারখানা সম্পূর্ণ ভস্ম হয়ে গিয়েছিল, তার কথা ভেবে এখনো আমরা বিষণ্ন হই। 

একটু ভাবুন, নিহত ওই শিশুটি যদি আপনার সন্তান হতো! নিংস্ব ওই নারীটি যদি হতো আপনার বোন! বিগত দিনের এইসব ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলোর কথা চিন্তা করে হলেও আমাদের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ বন্ধ করা উচিত। 

যে শহরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে বৈদ্যুতিক তার, সেই শহরের যুবকেরা যখন ফানুসের নামে টাকা পোড়ায়, তাদের বুক কি একটুও কেঁপে ওঠে না দুর্ঘটনার শঙ্কায়!

আমরা জীববৈচিত্র্যের কথা বলি। প্রকৃতির শোভা বর্ধনে পাখিদের অবদানের কথা বলি৷ অথচ উৎসবের নামে অযৌক্তিক এই উন্মাদনার কারণে যে আমাদের পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, তার বেলায় আমরা কেন চুপ!

নতুন বছরের আগমন যদি আনন্দের কারণ হয়, তবে পুরনো বছরের বিদায় বেদনার কারণ হওয়া উচিত। নববর্ষে যারা আনন্দ উদযাপন করে, হারিয়ে ফেলা বছরটির জন্য তারা কি কখনো বেদনা অনুভব করে?

মানুষকে আল্লাহ বিবেক দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বিবেকসম্পন্ন মানুষের পাশবিক উন্মাদনায় পাখিরা যদি আতঙ্কে ডানা ঝাপটায়, রাস্তার কুকুর যদি দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে ভয়ে, গরিবের মাথাগোঁজার আশ্রয় যদি ছাই হয় ফানুসের আগুনে, পটকার বিকট শব্দ যদি খালি করে মায়ের কোল, তবে মানুষ তোমার শ্রেষ্ঠত্ব রইল কোথায়!

শরীফ মুহাম্মদ

জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক ও লেখক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ নিজের ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, কত রকম জরুরত, সংকট সামনে যায়, যে তারুণ্য আওয়াজ করে না, বছর শেষের রাতে সেই তারুণ্যের পটকা-উদ্যমে কান বাঁচানো দায়। রাত ৯ টা থেকে শুরু হয়েছে, উত্তরোত্তর বাড়ছেই। ...

যেই সময়ে যেই পৃথিবীতে আবু উবায়দারা দুনিয়াটাকে চমকে দিচ্ছে, সেই সময়েই তাদের জাতি ভাইদের অনেকে বিভিন্ন ভূখণ্ডে শুধু ফুর্তি আর উৎসবের পটকায় জীবন বরবাদ করছে। এটাই হয়তো তাকদির।

মিজানুর রহমান আজহারী

বছরের প্রথম প্রহরে নতুন প্ল্যান সাজানোর কথা জানিয়ে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, আরও একটি ইংরেজি বর্ষের সমাপ্তি। স্বভাবতই ঘরের কোণে পুরাতন ক্যালেন্ডারের বদলে শোভা পাবে নতুন ক্যালেন্ডার। আচ্ছা! এমন করলে কেমন হয়? যদি নতুন বছরে— ঘরে শুধু নতুন ক্যালেন্ডারই নয় বরং নতুন একটি চর্চারও সূচনা হয়? যেটা পরিবারের সকল সদস্যদের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর হবে? ঘরটা হবে রহমতের চাদরে আবৃত!

আসুন, নতুন বছরের নতুন প্ল্যান সাজাই। প্রতি মাসে একটি সূরা, বারো মাসে বারোটি। তিলাওয়াত, একে অপরকে তিলাওয়াত শুনানো এবং তাদাব্বুরে কুরআন তথা অর্থ অনুধাবন। এভাবেই শুরু হোক কুরআনের সাথে সম্পর্কের সূচনা। সখ্যতা গড়ে উঠুক আল্লাহর বাণীর সাথে। নতুন বছর হোক কুরআনময়। কুরআনের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের প্রতিটি পরিবার।

আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

বর্ষবরণের এমন উন্মদনায় না মাতার আহ্বান জানিয়ে খতিব ও আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের অবস্থান আজ গাজা বা ফিলিস্তিনে হলে টের পেতাম আকাশ রাঙা শব্দের মুল্য জীবন দিয়ে চুকানো আতংক কেমন!

অবশ্য এখানে থেকেও মৃত্যুর পরে তা টের পাওয়ার দারুন সুযোগ আছে!! যে যাদের অনুসরণ করবে হাশর নাশর তাদের সাথেই হবে। এ সত্য আপনার মানা বা না মানাতে পরিবর্তন হবেনা। মাইন্ড ইট।

এনটি