প্রতীকী ছবি

অন্যকে সহযোগিতার যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো দান-সদকা। দান-সদকার মাধ্যমে শুধু একজন দরিদ্র বা অভাগ্রস্তকে সাহায্য করা হয় না এর ফলাফল দাতাও পাবেন পরকালে কয়েকগুণ বেশি। পরকালে দান-সদকার সওয়াব হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। পরকালের বিনিময়ের পাশাপাশি দুনিয়াতেও দাতা ব্যক্তি বিশেষ কদর পেয়ে থাকেন মানুষের কাছে। নিরহংকার ও একনিষ্ঠ মনে যিনি দান করেন তাকে সবাই ভালোবাসেন। তার বিপদে আপদেও নির্দ্বিধায় এগিয়ে আসেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর হেরা গুহায় ওহী নাজিলের প্রথম প্রহরে যখন তিনি কিছুটা অস্থির হয়েছিলেন, তখন উম্মুল মুমিনীন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাকে যেসব কথা বলে শান্ত্বনা দিয়েছিলেন তার মাঝে নবীজির দানের কথাও উল্লেখ করেছিলেন।

আম্মাজান খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৩)

খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার এই উক্তির মাধ্যমে বোঝা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত লাভের আগে থেকেই মানুষকে সহযোগিতা করতেন, দান করতেন। নবুওয়ত লাভের পর তিনি সাহাবিদের দান-সদকা ও কল্যাণকর সব কাজের শিক্ষা দিয়েছেন।

দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে এতো গোপনে দান করত যে, তার ডান হাতের দান বাম হাতও টের পেত না। (বুখারি, হাদিস, ৬৬০, মুসলিম, হাদিস, ১০৩১)

অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো-তা এক টুকরা খেজুর দান করার বা একটি ভালো কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন’। (বুখারি, হাদিস, ৬৫৪০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে থেকে তার বিভিন্ন বাণী শুনে সাহাবায়ে কেরাম দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। দান-সদকা ও কল্যাণকর কাজের এমন সব নজির তারা রেখে গেছেন যা ১৫শ বছর পরও উম্মতকে অন্যের প্রয়োজনে দান-সদকা ও সহযোগিতা করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

আয়েশা রা. যেভাবে দান করতেন

আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা গরিব-দুঃখীকে এতো বেশি দান-সদকা ও সহযোগিতা করতেন যে তিনি নিজের প্রয়োজনের কথা ভুলে যেতেন। একবার  উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা.-এর কাছে প্রায় লক্ষাধিক দেরহাম ভর্তি দু’টি বস্তা হাদিয়ে এলো। তিনি থালা ভর্তি করে সব দেরহাম দান করতে শুরু করলেন। এভাবে দান করতে করতে নিজের জন্য কিছু না রেখেই সন্ধ্যার মধ্যেই সব দেরহাম দান করে দিলেন। 

ঘটনার দিন রোজা রেখেছিলেন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা.। সন্ধ্যায় তিনি বাঁদীকে ইফতারের জন্য কিছু আনতে বললেন। সে একটি রুটি ও যায়তুনের তেল নিয়ে এসে বললো, বস্তা ভর্তি দেরহাম থেকে অন্তত এক দেরহাম রেখে দিলে কিছু গোশত আনিয়ে আমরা ভালভাবে ইফতার করতে পারতাম। একথা শুনে উম্মুল মুমিমীন বললেন, এখন না বলে, আগে স্মরণ করিয়ে দিতে, তাহলে কিছু আনিয়ে রাখা যেত।

দান-সদকার প্রতি তার আগ্রহ এতো বেশি ছিল যে তার বেশি দান-সদকা নিয়ে মন্তব্য করায় একবার প্রিয় ভাগিনা আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সঙ্গে অভিমান করে তার সঙ্গে কথা না বলার শপথ করে মানত করলেন। খালার অসন্তুষ্টি ও শপথের কথা জেনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর অত্যন্ত বেদনাহত হলেন। রাগ ভাঙ্গাতে অনেকের মাধ্যমে সুপারিশ করালেন ।

কিন্তু হযরত আয়েশা রা. নিজের শপথের অপারগতার কথা জানালেন। এতে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আরও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পরবর্তীতে রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতৃবংশের দু’জন ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসাবে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। 

‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও বেঁচে যাওয়া অর্থকে আল্লাহর রাস্তায় দানের জন্য রেখো না। বা বেঁচে যাওয়া অর্থ থেকে দান করবে এই অপেক্ষায় থেকো না।  এই অপেক্ষায় থাকলে প্রয়োজন কখনো শেষ হবে না। তা সব সময় বাড়তেই থাকে। আর প্রয়োজনীয় সম্পদ থেকে সদকা করলে তার কারণে কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।’

যখন তারা পর্দার আড়াল থেকে হজরত আয়েশার সঙ্গে কথা বলছিলেন, এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর খালাকে জড়িয়ে ধরে অনুনয়-বিনয় করে কাঁদতে লাগলেন। সেই দুই সুপারিশকারী তখন মুসলমানদের সঙ্গে কথোপকথন বন্ধ করে দেয়া সম্পর্কিত হাদিস স্মরণ করালেন।

এ হাদিস শুনে হজরত আয়েশা রা. কেঁদে ফেললেন এবং ভাগিনা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে ক্ষমা করে দিলেন এবং তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। তবে তার সেই কসমের কাফ্ফারা স্বরূপ বারবার গোলাম আজাদ করতেন, এমনকি ৪০ জন গোলাম পর্যন্ত আজাদ করলেন। 

যখনই তার ওই শপথ ভঙ্গের কথা মনে হতো তখনই এতোটা কাঁদতেন যে চোখের পানিতে তার ওড়না পর্যন্ত ভিজে যেত। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আদবুল মুফরাদ, হাদিস, ৩৯৮)

এনটি