উজরা মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে ছোট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ৩২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষদ্বীপ। দ্বীপটির রাজধানীর নাম কাভারাট্টি। পুরো অঞ্চলটি একটি জেলা ও ১০টি মহকুমায় বিভক্ত।

ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে কাশ্মির ছাড়া একমাত্র মুসলিমপ্রধান এলাকা হলো লক্ষদ্বীপ।

লক্ষদ্বীপ ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অধীনে আসে এবং এটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলরূপে গড়ে ওঠে। 

মুসলিম জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে অঞ্চলটির জনসংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো, তবে এখন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারে।

লক্ষ দ্বীপের মোট ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মুসলিম। এছাড়া হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মাবলম্বীদের বাসও রয়েছে। মুসলিমরা দ্বীপটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেন এবং দ্বীপের উন্নতির জন্য একযোগে কাজ করেন।

লক্ষদ্বীপে ইসলামের আগমন

সপ্তম শতকে লক্ষ দ্বীপে মুসলমানদের আগমন ঘটে এবং এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম আগমের আগে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের বৌদ্ধ জাতকের কাহিনীতে এ দ্বীপপুঞ্জটির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বিভিন্ন সময়ে লক্ষদ্বীপ

দ্বীপপুঞ্জটিতে মুসলমানদের আগমনের আগে কোনো প্রাচীন আদিবাসীর সন্ধান পাওয়া যায় না।ত বে ইতিহাসবিদদের গবেষণায় জানা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে এ অঞ্চলটিতে মানববসতির পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণের চিহ্ন রয়েছে। অতীত কাল থেকে দ্বীপপুঞ্জটি নাবিকদের কাছে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগে এ অঞ্চলটি চোল সাম্রাজ্য এবং কান্নুর রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। 

১৪৯৮ সালে অঞ্চলটিতে ক্যাথলিক পর্তুগিজদের আগমন ঘটে। পরবর্তীতে তারা ১৫৪৫ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হন। এরপর এ অঞ্চলটি প্রথমে আরাক্কালের মুসলিম হাউজ এবং এরপরে মুসলিম শাসক টিপু সুলতানের শাসনাধীন ছিল। টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর এ অঞ্চলটি মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে ব্রিটিশদের অধীন চলে যায়। ব্রিটিশ কর্তৃক ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রদান পরবর্তী ১৯৫৬ সালে দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা লাভ করে।

মুসলিম ধর্মীয় বিধান পালন

লক্ষদ্বীপে বেশ গুরুত্ব দিয়ে রমজান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করা হয়। কোরবানির ঈদে লাক্ষাদ্বীপের মুসলমানরা বকরি জবাই করে গোশত বিলি-বন্টন করেন। ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন।

মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসাগুলোতে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লক্ষদ্বীপে রয়েছে দেওবন্দের সিলেবাস অনুসরণে পরিচালিত কয়েকটি মাদরাসাও। নারীরা হিজাব পরিধান করে ঘর-সংসারের কাজ সামাল দেন। 

জীবনযাপন

এখানকার মানুষ অতি সহজ ও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কৃষি কাজ, মাছ ধরা ও নারকেলের চাষ এখানকার অধিবাসীদের জীবিকা অর্জনের প্রধান মাধ্যম। তাছাড়া নারকেল সম্পর্কিত অনেক শিল্প এখানে গড়ে উঠেছে। পর্যটন শিল্পও তাদের আর্থিক উপার্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।

মালায়লাম স্থানীয় ভাষা হিসাবে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তবে এখন ইংরেজি ও হিন্দির প্রচলন ঘটছে। দ্বীপটিতে স্বাক্ষরতার হার ৯২.২৮ শতাংশ। সেখানকার পাঠ্যক্রমে কেরালা রাজ্যকে অনুসরণ করা হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে।

ভারতীয় মূল-ভূখন্ডের কোচি থেকে প্রতিদিনই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট যাতায়াত করে। লক্ষ দ্বীপের একটমাত্র এয়ারপোর্টের নাম আগাট্টি। এটি একটি দ্বীপেরও নাম। এ ছাড়া কয়েকটি জাহাজ বিভিন্ন দ্বীপে চলাচল করে।

লক্ষদ্বীপে মসজিদ

লক্ষদ্বীপে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় মসজিদ রয়েছে। তন্মধ্যে উজরা, জুমা মসজিদ, উবায়দুল্লাহ মসজিদ, আগাট্টি মসজিদ বেশি প্রসিদ্ধ। শুধু রাজধানী কাভারাট্টিতে ৫২টি মসজিদ রয়েছে। জনসংখ্যা অনুপাতে পৃথিবীর আর কোথাও এত বেশি মসজিদ আছে কিনা জানা নেই।

উজরা মসজিদ চত্বরে একটি কূপ রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস এর পানি পানে বিভিন্ন রোগের নিরাময় ঘটে। উজরা মসজিদের দেয়ালে প্রাচীন রীতিতে করা আরবি ক্যালিগ্রাফির কারুকাজ দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন।

লাক্ষাদ্বীপের মসজিদে উবায়দুল্লাহও বেশ প্রসিদ্ধ। এখানে একজন ধর্ম প্রচারকের কবর রয়েছে। তার নামেই মসজিদটি প্রসিদ্ধ। তিনি দ্বীপটিতে প্রথম ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন।

এনটি