প্রতীকী ছবি

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে সব থেকে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ইসলামপূর্ব জাহিলী যুগে মানুষজন তাকে আবদু শামস বলে ডাকতো। পরবর্তীকালে যখন তিনি হেদায়াতের নূর পেলেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, নাম কি? তিনি জবাব দিলেন, আবদু শামস (অরুণ দাস।)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ থেকে তোমার নাম আব্দুর রহমান।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার নামে কুরবান হোক। আজ থেকে আমার নাম আবদুর রহমান-ই হবে।

তার কুনিয়াত বা উপনাম আবু হুরায়রা। তিনি এই নামেই বিশ্বের প্রত্যেক মুসলমানের কাছে পরিচিত। আবু হুরায়রা বা বিড়াল ওয়ালা উপনাম পাওয়ার পেছনে সুন্দর একটি ঘটনা আছে। ছোট বেলায় তিনি একটি বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে সবসময় খেলা করতেন। তা দেখে তার সঙ্গীরা তার নাম দেন আবু হুরায়রা (বিড়াল শাবকওয়ালা)।

ধীরে ধীরে এই নামেই তিনি পরিচিত হন এবং তার আসল নাম ঢাকা পড়ে যায়। 

ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যখন তার  সম্পর্ক গভীর হয় তখন মাঝে মাঝে তিনি আদর করে ডাকতেন “আবু হিররিন' ৷ তাই তিনি- আবু হরাইরার পরিবর্তে - আবু হিররিন নামটিকেই প্রাধান্য দেন । তিনি বলতেন, আমার হাবীব আল্লাহর রাসূল আমাকে এ নামেই ডেকেছেন । আর হিররুন পুরুষ বিড়ালের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় আর হুরায়রা স্ত্রী বিড়ালের ক্ষেত্রে।

তার আবু হুরায়রা নাম নিয়ে আরেকটি বর্ণনায় ইমাম তিরমিজি রহিমাহুল্লাহ আব্দুল্লাহ ইবনে রাফে রহিমাহুল্লাহর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ‘আবু হুরায়রা’ উপনামে কেন ভূষিত হলেন? তদুত্তরে তিনি বললেন, (ছোটবেলায়) আমি আমাদের ছাগল চরাতাম। বিড়ালের একটি বাচ্চা ছিল আমার। আমি তাকে রাতের বেলা গাছের ওপর ছেড়ে দিতাম। আর দিনের বেলা সঙ্গে রাখতাম; তাকে নিয়ে খেলা করতাম। লোকজন তা দেখে আমাকে ‘আবু হুরায়রা’ ডাকতে শুরু করল। (একসময় এতেই আমি প্রসিদ্ধ হয়ে গেলাম।) (তিরমিজি, হাদিস, ৩৮৪০)

অপর বর্ণনামতে ইসলামগ্রহণের পর একবার তিনি বিড়ালের একটি বাচ্চা জামার হাতার মধ্যে রাখলেন।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে বলেন, তুমি ‘আবু হুরায়রা’ (বিড়াল-ওয়ালা)। এরপর তিনি এ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান। (আল-ইসাবাহ: ৭/৩৪৮- ৩৪৯)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামে দীক্ষিত হন প্রখ্যাত সাহাবী তুফায়িল ইবন আমর আদ-দাওসীর হাতে। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি স্বীয় দাওস গোত্রের সাথেই অবস্থান করতে থাকেন।

ষষ্ঠ হিজরী সনে তার গোত্রের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে তিনিও এলেন মদীনায় রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। আমর ইবনুল গালাস বলেন, মদীনায় তার প্রথম আগমন হয় খাইবার বিজয়ের বছর সপ্তম হিজরীর মুহাররাম মাসে।

মদীনা আসার পর দাওস গোত্রের এ যুবক (আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা) নিরবচ্ছিনভাবে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমত ও সাহচর্য অবলম্বন করেন। রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা মসজিদেই অবস্থান করতে থাকেন। সব সময় রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তালীম ও তারবিয়াত লাভ করতেন এবং তারই ইমামতিতে নামাজ আদায় করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তর স্ত্রী বা সন্তান সম্ততি ছিল না। একমাত্র তার বৃদ্ধা মা ছিলেন। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আবু হুরায়রার ভালোবাসা অনেক গভীর ছিল। তিনি রাসূলের দিকে এক দু'বার মাত্র তাকিয়ে পরিতৃপ্ত হতেন না। তিনি বলতেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর ও দীপ্তিমান কোন কিছু আমি দেখিনি । তার চেহারায় যেন সূর্যের কিরণ ঝলমল করতে থাকে।’ 

আবু হুরায়রা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যেমন নিবেদিত ছিলেন, তেমনি ছিলেন জ্ঞানের প্রতিও কুরবান। জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞানচর্চা তার অভ্যাস ও প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল। তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার অন্যতম সদস্য। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তিনিই সর্বোচ্চ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি। তিনি ৫৭ হিজরিতে ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

(আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ১/১৫০)

এনটি