প্রতীকী ছবি

সূরা লাইল পবিত্র কোরআনের ৯২ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ২১। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ এবং কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত।

সূরা লাইল 

وَالَّیۡلِ اِذَا یَغۡشٰی ۙ ١ وَالنَّہَارِ اِذَا تَجَلّٰی ۙ ٢ وَمَا خَلَقَ الذَّکَرَ وَالۡاُنۡثٰۤی ۙ ٣ اِنَّ سَعۡیَکُمۡ لَشَتّٰی ؕ ٤ فَاَمَّا مَنۡ اَعۡطٰی وَاتَّقٰی ۙ ٥ وَصَدَّقَ بِالۡحُسۡنٰی ۙ ٦ فَسَنُیَسِّرُہٗ لِلۡیُسۡرٰی ؕ ٧ وَاَمَّا مَنۡۢ بَخِلَ وَاسۡتَغۡنٰی ۙ ٨ وَکَذَّبَ بِالۡحُسۡنٰی ۙ ٩ فَسَنُیَسِّرُہٗ لِلۡعُسۡرٰی ؕ ١۰ وَمَا یُغۡنِیۡ عَنۡہُ مَالُہٗۤ اِذَا تَرَدّٰی ؕ ١١ اِنَّ عَلَیۡنَا لَلۡہُدٰی ۫ۖ ١٢ وَاِنَّ لَنَا لَلۡاٰخِرَۃَ وَالۡاُوۡلٰی ١٣ فَاَنۡذَرۡتُکُمۡ نَارًا تَلَظّٰی ۚ ١٤ لَا یَصۡلٰىہَاۤ اِلَّا الۡاَشۡقَی ۙ ١٥ الَّذِیۡ کَذَّبَ وَتَوَلّٰی ؕ ١٦ وَسَیُجَنَّبُہَا الۡاَتۡقَی ۙ ١٧ الَّذِیۡ یُؤۡتِیۡ مَالَہٗ یَتَزَکّٰی ۚ ١٨ وَمَا لِاَحَدٍ عِنۡدَہٗ مِنۡ نِّعۡمَۃٍ تُجۡزٰۤی ۙ ١٩ اِلَّا ابۡتِغَآءَ وَجۡہِ رَبِّہِ الۡاَعۡلٰی ۚ ٢۰ وَلَسَوۡفَ یَرۡضٰی ٪ ٢١

সূরা লাইল অর্থ : 

শপথ রাতের, যখন তা আচ্ছন্ন করে।এবং দিনের, যখন তা উদ্ভাসিত হয়। এবং সেই সত্তার, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। বস্তুত তোমাদের প্রচেষ্টা বিভিন্ন রকমের। সুতরাং যে ব্যক্তি (আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ) দান করেছে ও তাকওয়া অবলম্বন করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি (আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ) দান করেছে ও তাকওয়া অবলম্বন করেছে। 

আমি তাকে স্বস্তিময় গন্তব্যে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেব। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কৃপণতা করল এবং (আল্লাহর প্রতি) বেপরোয়াভাব দেখাল। এবং সর্বোত্তম বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করল। আমি তার যাতনাময় স্থানে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেব। সে যখন ধ্বংস-গহ্বরে পতিত হবে, তখন তার সম্পদ তার কোন কাজে আসবে না। বস্তুত, পথ দেখিয়ে দেওয়া আমারই দায়িত্ব। এবং অবশ্যই, আখেরাত ও দুনিয়া আমারই কর্তৃত্বাধীন। 

অতএব আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিলাম এক লেলিহান আগুন সম্পর্কে। তাতে প্রবেশ করবে কেবল সেই, যে নিতান্ত হতভাগ্য। যে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এবং তা থেকে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকীকে। যে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য নিজ সম্পদ (আল্লাহর পথে) দান করে। অথচ তার উপর কারও অনুগ্রহ ছিল না, যার প্রতিদান দিতে হত। বরং সে (দান করে) কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়।নিশ্চয়ই সে অচিরেই খুশী হয়ে যাবে।

সূরা লাইলে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা রাত ও দিনের শপথ করেছেন। এরপর মানুষের সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করে বলেছেন, তাদের দুই ভিন্ন ভিন্ন সত্ত্বা অর্থাৎ, নারী ও পুরুষে সৃষ্টি করেছেন। 

এরপর মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষ যে কর্মপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেগুলোও বিভিন্ন ধরনের এবং বিপরীতমুখী। কেউ ভালো কাজ করে, আবার কেউ খারাপ কাজ করে। অর্থাৎ, কেউ সৎকর্ম করে; সুতরাং তার প্রতিদান হবে জান্নাত। আর কেউ অসৎ কর্ম করে; আর তার পরিণাম হবে জাহান্নাম।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ সকাল বেলায় উঠে নিজেকে ব্যবসায়ে নিয়োজিত করে। অতঃপর কেউ এই ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করে এবং নিজেকে আখেরাতের আজাব থেকে মুক্ত করে; আবার কেউ নিজেকে ধ্বংস করে।’ (মুসলিম, হাদিস, ২২৩)

কর্ম প্রচেষ্টার ভিত্তিতে মানুষকে দু’ভাগে বিভক্ত করার পর প্রত্যেকের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। প্রথমে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন তা একমাত্র তারই পথে ব্যয় করে, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তায়ালা যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তা থেকে দূরে থাকে। অথবা উত্তম প্রতিদানকে সত্যজ্ঞান করে। অর্থাৎ, এ কথায় বিশ্বাস রাখে যে, দান করা এবং আল্লাহকে ভয় করার উত্তম প্রতিদান পাওয়া যাবে তার কাছে।

যে ব্যক্তি এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে পালন করে, তার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার সব উত্তম কাজ করা ও উত্তম কাজের উপায় সহজ করে দেন, আর খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ করে দেন। 

এরপর মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার আরেকটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ এখানে তাদের তিনটি কর্ম উল্লেখ করে বলেছেন যে, আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন তা তার পথে ব্যয় করার ব্যাপারে কৃপণতা করে তথা ফরয-ওয়াজিব-মুস্তাহাব কোন প্রকার সদকা দেয় না, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের পরিবর্তে, তার প্রতি ইবাদত করার পরিবর্তে বিমুখ হয়ে নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করে এবং উত্তম কলেমা তথা ঈমানের যাবতীয় বিষয়কে মিথ্যা মনে করে; তার জন্য কঠিন পথে চলা সহজ করে দিব। এখানে কঠিন পথ অর্থ কঠিন ও নিন্দনীয় অবস্থা তথা খারাপ কাজকে সহজ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

আল্লাহ নির্দেশ মতো তার দেওয়া সম্পদ ব্যয় না করার কারণে কি ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর যখন সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন এই মাল-ধন, যা সে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করত না, তা সেদিন কোন কাজে আসবে না।

এরপর বলা হয়েছে, হেদায়াতপূর্ণ সরল পথ আল্লাহ তা'আলার সান্নিধ্যে পৌছে দেয়, যেমনিভাবে ভ্রষ্টপথতা জাহান্নামে পৌছে দেয়। এরপর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দুনিয়া আখেরাত উভয়ের মালিক আমিই। আমি যেভাবে চাই, সেভাবেই উভয়কে পরিচালনা করি। এই জন্য উভয়ের কিংবা তার একটির প্রার্থী যেন আমারই নিকট প্রার্থনা করে। কেননা, প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে আমিই আমার ইচ্ছানুযায়ী দান করে থাকি।

এরপর আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে সর্তক করেছেন। এ লেলিহান আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন যে জাহান্নামীর সবচেয়ে হাল্কা আজাব হবে তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার পায়ের নীচে আগুনের কয়লা রাখা হবে এতেই তার ঘিলু উৎরাতে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস, ৬৫৬১, মুসলিম, হাদিস, ২১৩)

জাহান্নামে কারা যাবে- সে বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, নিতান্ত হতভাগা ব্যক্তিই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, যে আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক উম্মতই জান্নাতে যাবে তবে যে অস্বীকার করবে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই আমাকে অস্বীকার করল। (বুখারি, হাদিস, ৭২৮০)

তবে খোদাভীরু ব্যক্তির ভয় নেই। তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে স্থান দেওয়া হবে। এরপরে সৌভাগ্যশালী মুত্তাকীদের প্রতিদান বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া শক্তভাবে অবলম্বন করে এবং একমাত্র আল্লাহর পথে নিজের গোনাহ থেকে বিশুদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যয় করে, তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে।

এরপরে সেই মুত্তাকী ব্যক্তির আরও বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সে যে নিজের অর্থ যাদের জন্য ব্যয় করে, আগে থেকেই তার কোন অনুগ্রহ তার ওপর ছিল না, যার প্রতিদান বা পুরস্কার দিচ্ছে অথবা ভবিষ্যতে তাদের থেকে কোনো স্বাৰ্থ উদ্ধারের অপেক্ষায় তাদেরকে উপহার-উপঢৌকন ইত্যাদি দিয়ে ব্যয় করছে; বরং সে নিজের মহান ও সর্বশক্তিমান রবের সন্তুষ্টিলাভের জন্যই এমন-সব লোককে সাহায্য করছে, যারা ইতোপূর্বে তার কোন উপকার করেনি এবং ভবিষ্যতেও তাদের উপকার পাওয়ার আশা নেই। ইখলাসের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাত লাভের জন্য খরচ করে।

এরপর বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এই সমস্ত গুণের অধিকারী হবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের নিয়ামত এবং সম্মান ও মর্যাদা দান করবেন। যার কারণে সে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।

এনটি