প্রতীকী ছবি

আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বহন করে। নামাজের জন্য আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। আজানের মাধ্যমেই মুসলমানরা বুঝতে পারেন নামাজের সময় হয়েছে। এজন্য ফরজ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আজান ও একামতের গুরুত্ব অপরিসীম। যিনি আজান দেন তাকে মুয়াজ্জিন বলা হয়। মুয়াজ্জিনকে মুসলিম সমাজে সম্মানের চোখে দেখা হয়। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

একজন মুয়াজ্জিন কেমন হবেন বা আজান দেওয়ার জন্য তার মাঝে কি ধরনের গুণাগুণ থাকতে হবে- এ বিষয়ে আলেমরা বলেন, আজান দেওয়ার জন্য মুয়াজ্জিনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো গুণ থাকা জরুরি নয়। নামাজের সময় হয়ে গেলে যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি আজান দিতে পারবেন। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে একজন যেন আজান দেয়। আর বয়সে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি যেন ইমামতি করে। (বুখারি, হাদিস, ৬২৮, মুসলিম, হাদিস, ৬৭৪)

আজানের বিনিময়ে জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি এসেছে হাদিস শরিফে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ১২ বছর আজান দেয়, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার প্রত্যেক আজানের বিনিময়ে ৬০ নেকি এবং ইকামতের বিনিময়ে ৩০ নেকি অতিরিক্ত লেখা হয়। (ইবন মাজাহ, হাদিস, ৬০০)

অপর এক হাদিসে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِنَّ الْمُؤَذِّنَ يُغْفَرُ لَهُ مَدَى صَوْتِهِ، وَيُصَدِّقُهُ كُلُّ رَطْبٍ وَيَابِسٍ سَمِعَ صَوْته، وَالشَّاهِدُ عَلَيْهِ لَهُ خَمْسَ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً 

মুয়াজ্জিনকে তার কণ্ঠস্বর পৌঁছার প্রান্তদেশ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য ও সমর্থন দিবে তার আওয়াজ শুনা প্রত্যেকটি সজীব ও নির্জীব বস্তু; যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে সালাতে আসবে তার জন্য থাকবে তাদের উপরে পঁচিশটি মর্যাদা। (আহমাদ,২/৪২৯ ও ৪৫৮; ইবনু হিব্বান, ১৬৬৪; আবূ দাউদ, ১/৭৯) 

আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেকোনো মানুষ ও জিন অথবা যেকোনো বস্তু মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ শুনবে সে কিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। (বুখারি, হাদিস, ৬০৯)

আজানের সূচনা হয় দ্বিতীয় হিজরিতে কিবলা পরিবর্তনের পর। আবু উমাইর ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের জন্য লোকদের কিভাবে একত্র করা যায়, সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তা দেখে সাহাবিদের কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন, নামাজের সময় হলে একটা পতাকা উড়ানো হোক। তা দেখে একে অন্যকে নামাজের সংবাদ জানিয়ে দেবে।

কিন্তু এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট পছন্দ হলো না। কেউ কেউ প্রস্তাব করল, শিঙ্গা-ধ্বনি দেওয়া হোক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও পছন্দ করলেন না। কেননা তা ছিল ইহুদিদের রীতি। কেউ কেউ ঘণ্টা ধ্বনি ব্যবহারের প্রস্তাব করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওটা নাসারাদের রীতি। 

উপস্থিত সাহাবিদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা. নামে একজন সাহাবি ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিন্তার কথা মাথায় নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। অতঃপর (আল্লাহর পক্ষ হতে) স্বপ্নে তাকে আজান শিখিয়ে দেওয়া হলো। 

পরদিন ভোরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি অবহিত করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কিছুটা তন্দ্রাছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক আগন্তুক এসে আমাকে আজান ও (ইকামত) শিখিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, একইভাবে ওমর রা. ও ২০ দিন আগেই স্বপ্নেযোগে আজান শিখেছিলেন। কিন্তু তিনি কারো কাছে তা ব্যক্ত না করে গোপন রেখেছিলেন। 

অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলার পর তিনিও তার স্বপ্নের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আগে বললে না কেন? তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা.) এ বিষয়ে আমার আগেই বলে দিয়েছেন। এ জন্য আমি লজ্জিত। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বেলাল! ওঠো, এবং আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ তোমাকে যেরূপ নির্দেশ দেয় তুমি তাই করো। অতঃপর বেলাল রা. আজান দিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস, ৪৯৮)

এনটি