বিয়ের আগে কনে নির্বাচন ও কনে দেখা একটি স্বতসিদ্ধ নিয়ম। পছন্দ অনুযায়ী পাত্রী নির্বাচনে উৎসাহিত করে ইসলাম। হাদিসে পাত্রী দেখার স্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীর চারটি বিষয় দেখে মানুষ বিয়েতে আগ্রহী হয়। তার ধন-সম্পদ, তার মর্যাদা ও আভিজাত্য, তার রূপ-সৌন্দর্য, তার দ্বীন। তবে তোমরা নারীর দ্বীনকে প্রাধান্য দিও। (বুখারি ও মুসলিম)

আমাদের সমাজ ও দেশে বিয়ের কনে দেখার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতি-নীতি মানা হয় না এবং এসব বিষয়ে গুরুত্বও দেওয়া হয় না। বিয়ের জন্য কনে দেখার সময় বরের বাবা, ভাই, বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘটা করে মেয়ে দেখার প্রচলন চালু আছে, এই রীতি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েজ ও হারাম। পুরুষ সদস্য বাদ দিয়ে শুধু নারী সদস্য নিয়েও ঘটা করে মেয়ে দেখা সমীচীন নয়।

কারণ, এভাবে ঘটা করে কনে দেখার পর যদি কোনো কারণবশত, বিয়ে না হয় তাহলে এটা ওই মেয়ে পক্ষের জন্য রীতিমতো বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে অন্য মেয়ের ব্যাপারে নানা রকম সন্দেহের মধ্যে পড়ে। ফলে এই মেয়ের বিয়ে দেওয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো মানুষকে এভাবে বিপদে ফেলা ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছে। 

হবু বর হবু স্ত্রী দেখার ক্ষেত্রে শুধু কনের হাত ও মুখ দেখা যেতে পারে। অবশ্য কাপড়ের ওপর দিয়ে যদি শরীরের সামগ্রিক অবয়ব দেখে নেওয়া হয়, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আর হ্যাঁ, শুধু বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কনে দেখতে পারবে—এ ছাড়া নয়। 

এটা হলো কনে দেখার ইসলামের বিধান, যা অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। এতে না আছে বাড়াবাড়ি, না আছে ছাড়াছাড়ি। এই দর্শন ও নীতিমালা মেনে কনে দেখলে মেয়ে পক্ষও আপদমুক্ত থাকবে, আবার ছেলে পক্ষরও কনে দেখার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে না।

উপমহাদেশীয় কালচার অনেকটা এমন—কনে দেখবে ছেলের অভিভাবকরা। ছেলে কনেকে দেখলে দোষের মনে করা হয়। এই চিন্তাও ভুল। কারণ কনে দেখাসংক্রান্ত হাদিসগুলোতে বরকেই কনে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে অভিভাবকদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। 

আর বর কনেকে না দেখে শুধু অভিভাবকরা দেখে বিয়ে সম্পাদন করলে বরের কনেকে পছন্দ নাও হতে পারে। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে দাম্পত্য জীবনে সৃষ্টি হয় অশান্তি। এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে সমাজে। তাই বর কনেকে দেখে নেওয়াটাই বেশি সংগত ও নিরাপদ।

(বুখারি : ২/৭৬৮; মুসলিম :১/৪৫৬; আবু দাউদ : ১/২৮৪; তিরমিজি : ১/২০৭; ফাতওয়া-মাহমুদিয়া : ৩/২১২) (হিদায়া : ৪/৪৪৩; আলমুগনি : ৭/৭৪)

এনটি