প্রতীকী ছবি

মক্কায় কাফেরদের নিয়ার্তন বেড়ে গেলে আল্লাহর নির্দেশে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবিরা মদিনায় হিজরত করেন। মক্কাবাসী সাহাবিদের সানন্দে গ্রহণ করেন মদিনার সাহাবিরা। দ্বীন-ঈমান ও জীবন জীবিকার সর্বক্ষেত্রে তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করেন মদিনাবাসী সাহাবিরা।

মুহাজির সাহাবিদের নিজের ভাইয়ের মতো আপন করে নিয়েছিলেন তারা। এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ইসলামের মাধ্যমে তাদের মাঝে যেই ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠেছিল তা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুসরণীয়। এই ভ্রাতৃত্ব শুধু সাহায্য-সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। মুহাজিরদের নিজেদের উত্তরাধিকারী বানানোর দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন আনসার সাহাবিরা। 

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘরে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। সে সময় ৯০ জন সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। অর্ধেক মুহাজির ও অর্ধেক আনসার। ভ্রাতৃত্ববন্ধনের মূল কথা ছিল তারা পরস্পরের দুঃখে দুঃখী এবং সুখে সুখী হবেন। মৃত্যুর পর আত্মীয়দের পরিবর্তে পরস্পরের সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেন। উত্তরাধিকারী হওয়ার এই নিয়ম বদরের যুদ্ধ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর সুরা আনফালের ৭৫ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের বিধানটি রহিত করা হয়।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ১৯৪; সিরাতে মোস্তফা: ৪২০)

এ কারণেই পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে মুহাজিরদের পাশাপাশি আনসারদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের জন্যও, মুহাজিরদের আসার আগে যারা এই নগরীতে বসবাস করেছে ও ইমান এনেছে। তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা (আনসার) তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়; নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। অন্তরের কার্পণ্য থেকে যাদের মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর, আয়াত, ৯)

হাদিসে এসেছে, সাআদ ইবনে রাবি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মুহাজির ভাই আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, ‘দেখো, এই আমাদের ধন-সম্পদ। এর অর্ধেক তোমার। যেটা খুশি গ্রহণ করো। আমার দুজন স্ত্রী। এদের মধ্যে তোমার কাকে পছন্দ বলো। আমি তাকে তালাক দিই এবং তোমার সঙ্গে বিয়ে দিই।’ মুহাজিররাও আত্মমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব রক্ষা করেই চলতেন। ফলে আনসার ভাইয়ের উত্তরে আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘আল্লাহ তোমার ঘরে-বাইরে ও ধনসম্পদে বরকত দান করুন। দয়া করে তুমি আমাকে বাজারের রাস্তাটা দেখিয়ে দাও। ওখানে আমি আমার ভাগ্য পরীক্ষা করব।’ (বুখারি: ৩৭৮১; নবীয়ে রহমত, পৃ. ২০৫)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বনু কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দেওয়া হলো। যখন তিনি ঘরে ফিরলেন, সঙ্গে কিছু পনির ও ঘি নিয়ে এলেন। এরপর প্রতিদিন সকালে বাজারে যেতে লাগলেন। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এমন অবস্থায় এলেন যে তার শরীর ও কাপড়ে হলুদ রঙের চিহ্ন ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ব্যাপার কী?’ তিনি  বললেন, ‘আমি বিয়ে করেছি।’ (বুখারি, হাদিস. ৩৭৮০)

অর্থাৎ, তিনি আনসার সাহাবির ওপর নির্ভর করে বসে থাকেননি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং নিজের ঘর-সংসার নিজেই সাজিয়ে নিয়েছেন। মোট কথা, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনায় সাহাবিরা এমন সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন যে, নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে মদিনায় চলে আসা মানুষকে যেমন আনসার সাহাবিরা ভালোবাসার চাদরে আবৃত করে নিয়েছিলেন, তেমনি মুহাজিররাও নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিলেন। 

এনটি