ইসলামের প্রথম যুগে মক্কায় মুসলমানদের ওপর কুরাইশ-কাফেরদের নির্যাতন বেড়ে যাওয়া এবং মক্কায় অবস্থানের মতো কোনো পরিস্থিতি না থাকার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মদিনায় হিজরতের অনুমতি দেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আনুষ্ঠানিকভাবে মদিনায় হিজরতের অনুমতির অনেক আগেই আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা.-কে স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাকে হিজরত করতে হতে পারে। স্বপ্নে তাকে খেজুর গাছের সারি ঘেরা একটি জায়গা দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি নিশ্চিত হন যে, সেই জনপদ হচ্ছে ইয়াসবির (মদিনা)।

নবুওয়তের একাদশ বছরে ইয়াসবির (মদিনা) থেকে খাযরাজ বংশের কিছু লোক হজ করতে এলেন মক্কায়। এ সময় রাতের আধারে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে বের হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মক্কার কয়েক মাইল দূরে আকাবা নামক জায়গায় অন্ধকারের ভেতর কয়েকজন তীর্থযাত্রীকে কথা বলতে শুনতে পেলেন তিনি। তিনি তাদের কাছে গেলেন। খেয়াল করে দেখলেন সেখানে ৬ জন মানুষ কথা বলছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পেলেন, তারা ইয়াসরিব (মদিনা) থেকে হজ করতে এসেছেন ৷ 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন। কোরআন শরিফের আয়াত তিলাওয়াত করে শোনালেন। তারা পরস্পরে মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করলেন এবং তৎক্ষণাৎ ঈমান আনয়ন করলেন। 

মদিনায় ফিরে যাবার সময় তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মদিনায় ফিরে তারা নিজ গোত্রের লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেবেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারে কাজ করবেন।

মদিনায় ফিরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন তারা। নিজ গোত্রের লোকদের কাছে পৌঁছে দিলেন ইসলামের বার্তা। এভাবে ধীরে ধীরে ইসলামের আলোচনায় মুখর হয়ে উঠলো মদিনার অলি-গলি। এ সময়ের মধ্যে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। ‍ওদিকে মক্কায় মুসলমানদের ওপর কুরাইশদের নির্যাতন সব সীমা ছড়িয়ে পড়ে।

এর দুই বছর পর অর্থাৎ, নবুওয়তের ১৩তম বছরে ৭২জন মুসলমান মদিনা থেকে আবারও মক্কায় এলেন। তারা আকাবা নামক সেই স্থানে আবারো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এবং তারা রাসূল সা. ও মক্কাবাসী মুসলমান সাহাবিদের মদিনায় স্বাগত জানান। তাদের সঙ্গে কথা বলে মদিনায় যাওয়ার বিষয়ে সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের দিনক্ষণ নির্ধারণের জন্য আল্লাহ তায়ালার আদেশের অপেক্ষা করতে থাকেন।

এদিকে মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে মহানবী সা.- এর আলোচনা ও পরামর্শের বিষয়টি জানতে পারল মক্কার কাফেররা। একথা জানার পর তারা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন আগের তুলনায় আরও বাড়িয়ে দিল। তাদের নির্যাতন এতোটাই বেড়ে গেল যে মক্কায় নিজেদের বাড়ি ঘরে অবস্থান করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছিল মুসলমানদের জন্য।

এমন পরিস্থিতিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরতের অনুমতি দিলেন। অনুমতি পেয়েই মুসলমানেরা নিজের ঘরবাড়ি, মাতৃভূমি, আত্মীয়-স্বজনের মায়া ছেড়ে মদিনায় হিজরত শুরু করলেন।

কুরাইশরা যখন দেখলো, মুসলমানেরা ইসলামের জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দূর দেশে পাড়ি দিতে প্রস্তুত এবং সেখানে গিয়ে তারা শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করবে। এটা তাদের সহ্য হলো না, তারা মুসলমানদের হিজরতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে লাগলো। বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও এক, দুইজন করে মদিনায় হিজরত করতে লাগলেন মুসলমানেরা। শেষ পর্যন্ত শুধু কিছু দুর্বল মুসলমান অপারগ হয়ে মক্কায় রয়ে গেলেন।

(ইসলামের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ১২৩)