প্রতীকী ছবি

রমজান আমল ইবাদত এবং পরকালের পুঁজি সঞ্চয়ের মৌসুম। এ সময় বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আমলের পাল্লা ভারী করার পাশাপাশি গুনাহ মাফের চেষ্টা করা উচিত প্রত্যেকের। কারণ, রমজানেও যে ব্যক্তি নিজেকে গুনাহমুক্ত করতে পারে না তার জন্য আফসোস প্রকাশ করেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রমজানে গুনাহ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা...

এক হাদিসে তিনি বলেছেন ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস, ৩৫৪৫)। 

অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে ওঠার সময় তিনবার ‘আমিন’ বললেন। এখানে তো দোয়া করা হয়নি বা সূরা ফাতেহা তেলাওয়াত করা হয়নি, তাহলে আমিন বললেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নামার পর সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মিম্বরে আরোহণের সময় আমরা আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি, যা আর কখনো শুনিনি।

নবীজির ধ্বংস কামনা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি মিম্বরে ওঠার সময় জিবরাইল আলাইহিস সালাম এসেছিলেন, তিনটি বদদোয়া করেছেন। আমি সে বদদোয়াগুলোর পর আমিন বলেছি।

প্রথম বদদোয়া হলো : আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান পেল, কিন্তু গোনাহ মাফ করাতে পারল না। দ্বিতীয় বদদোয়া হলো : ওই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক, যার সামনে আপনার নাম আলোচিত হয়েছে, অথচ সে দুরূদ পাঠ করেনি। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম তৃতীয় বদদোয়া করেছিলেন : ওই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক যে তার বাবা-মা উভয়কে বা তাদের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেনি। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস, ১৭৩১৭)।

রমজানে যেভাবে আমলের পরিকল্পনা করবেন

রমজানে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে নিষ্পাপ করতে আগে থেকেই রমজান কেন্দ্রিক আমলের পরিকল্পনা সাজানো যেতে পারে। এতে সহজেই আমল করা যাবে। আমলের পরিকল্পনাগুলো যেভাবে সাজাতে পারেন—

>> প্রতিদিন সময়মতো জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।

>> প্রতিদিন ফজর ও ইশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায়ের চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ মানুষের কাজের সময়ের সাথে এই দুই ওয়াক্তের সম্পৃক্ততা নেই। তাই এ সময় ব্যস্ততা কম। আর এই দুই ওয়াক্তের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করলে পুরো রাত নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার সওয়াব প্রদান করা হবে।

>> প্রতিদিন নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। তারাবি নামাজ ফরজ ওয়াজিব না হলেও এর মাধ্যমে বিপুল সওয়াব লাভ হবে এবং আধ্যাত্মিকতা অর্জনে সহায়ক হবে।

>> রমজান কোরআন নাজিলের মাস। তাই প্রতিদিন ফজরের পর বা দিনের কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত রাখুন। এ মাসে রাসূল সা. বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। সাহাবি, পূর্বসূরীদের অনুসরণে বর্তমান সময়ের আলেম এবং ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিরাও রমজানে বেশি বেশি তিলাওয়াত করেন। আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিত।

>> প্রত্যেক কাজের আগের দোয়াগুলো ঠিকমতো পড়ার চেষ্টা করুন। যেমন ইফতার, খাবার, বাথরুমে যাওয়া-আসা, ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করুন।

>> পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করুন।

>> নিজের অধীনস্ত কর্মচারী ও গৃহকর্মীদের কাজের চাপ কমিয়ে দিন।

>> রমজানে সময় কাজে লাগিয়ে কোরআনে ছোট ও গুরুত্বপূর্ণ সূরাগুলো মুখস্ত করার চেষ্টা করুন।

>> সাধ্যমতো দান-সদকা করুন এবং অসহায় গরিবদের ইফতার-সেহরির খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করুন।

>> যাদের ওপর জাকাত ফরজ গড়িমসি না করে ঠিকমতো জাকাত আদায় করুন।

>> সময়মতো সদকাতুল ফিরত আদায় করুন।

>> রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফের চেষ্টা করুন।

>> রমজানের শেষ ১০ দিনের ইবাদত ও ইতিকাফ নির্বিঘ্নে আদায়ের জন্য ঈদের কেনাকাটা আগেই করে রাখুন।

>> রমজান সংশ্লিষ্ট সব ইবাদতে শিশুদের নিজের সঙ্গে রাখুন। যেন শিশুরা ছোট থেকেই আপনাকে দেখে ইবাদতের প্রতি আগ্রহী হয়।