ছবি : সংগৃহীত

মারা গেছেন হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। কোরআন নাজিলের মাসে এই কোরআনপ্রেমীর ইন্তেকালের খবরে শোকে ভাসছেন অনেকে।

অনেকের শৈশবের স্মৃতিতে...

তিনি অনেকের কাছেই জনপ্রিয় কোরআন প্রগিযোগিতার বিচারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকের শৈশব-কৈশোরের রমজানের বিকেলবেলার স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি। সারাদিন রোজা রেখে শেষ বিকেলে ইফতারের আগ মুহূর্তে টিভিতে কোরআন প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফকে দেখা ছিল এক সময়ের চিরায়ত দৃশ্য। 

কোরআন বিষয়ক ইসলামিক রিয়েলিটি শো শুরুর ভাবনা

আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৯ সালে বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেলে কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু হলেও আরও আগে ২০০৫ সালে মিডিয়ার বাইরে এ ধরনের কার্যকম শুরু করেন মাওলানা আবু ইউসুফ। তখন বিভিন্ন মসজিদে কিংবা অন্য কোনো জায়গায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হতো।

এনটিভিতে গানের প্রতিভা অন্বেষণে ‘ক্লোজ আপ ওয়ান-তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি দেখার পর টিভিতে কোরআনের হাফেজদের নিয়ে একটি রিয়েলিটি শো করার ভাবনা আসে তার মাথায়। এরপর ২০০৯ সালে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু হয়। যা এখনো চলমান।

হাফেজদের প্রতিভা বিকাশের ভাবনা

হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ কোরআন প্রতিযোগিতামূলক ইসলামিক রিয়েলিটি শো শুরুর ইচ্ছে ও কারণ হিসেবে বলেন, এক সময় অনেকেই হজ ওমরা করতে গিয়ে সেখানকার ইমামদের তিলাওয়াত শুনে দেশে এসে তাদের সুললিত কণ্ঠের প্রশংসা করতেন। এখান থেকেই তার মনে হয়েছিল, বাংলাদেশের ক্ষুদে হাফেজে কোরআনদের মাঝে আল্লাহ তায়ালা সুপ্ত প্রতিভা দিয়েছেন। তাদের কণ্ঠে অন্যকে মুগ্ধ করার মতো মায়া দিয়েছে। তাদের সেই প্রতিভা ও সুললিত কণ্ঠ সবার সামনে প্রকাশ করার ইচ্ছে থেকে তিনি এই অনুষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেন। এবং ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সফল বলে জানিয়েছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। 

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হয়েছে অনেকের

তিনি বলেন, এখন অনেকেই বাংলাদেশের হাফেজদের তিলাওয়াতের প্রশংসা করেন। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিভার বিষয়টি সবার সামনে প্রকাশের ক্ষেত্রেও এই প্রতিযোগিতা ভূমিকা রেখেছে এবং যারা এক সময় মনে করতেন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মেধা কম, তাদের সেই ধারণা পরিবর্তন হয়েছে।

হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফের জন্ম ও বেড়ে ওঠা

জনপ্রিয় কোরআন প্রতিযোগিতার বিচারক হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ ১৯৮০ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে। তার পিতার নাম আবুশ কাশেম এবং মাতার নাম ফাতেমা বেগম। 

পড়াশোনা ও কর্মজীবন

১৯৮৩ সালে পবিত্র কোরআনুল কারিম হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি এবং ১৯৯৮ সালে ঢাকাস্থ মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন। বিএসটিআই জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে মাওলানা আবু ইউসুফের কর্মজীবনের সূচনা ঘটে এবং সেই ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছর তিনি একই মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

তিনি বাংলাদেশের মিডিয়ায় সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ ইসলামিক রিয়েলিটি শো হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিভার সন্ধানে অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও পরিচালক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কুরআনের আলো ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিএসটিআই জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।