প্রতীকী ছবি

হজরত নূহ আলাইহিস সালাম তার জাতিকে বহু বছর আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বান করেছেন। তাদেরকে ঈমানের গুরুত্ব, পবিত্র জীবনের সুফল এবং পরকালের শাস্তি, চিরস্থায়ী সুখের আবাসের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। 

নূহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে আসমান-জমিন, চাঁদ-সূর্যের সৃষ্টি নৈপূন্যের কথা স্মরণ করিয়ে এর স্রষ্টার ঈমান আনার কথা বলতেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 

فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ  اِنَّہٗ کَانَ غَفَّارًا ۙ ١۰ یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا ۙ ١١ وَّیُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّبَنِیۡنَ وَیَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّیَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡہٰرًا ؕ ١٢ مَا لَکُمۡ لَا تَرۡجُوۡنَ لِلّٰہِ وَقَارًا ۚ ١٣ وَقَدۡ خَلَقَکُمۡ اَطۡوَارًا ١٤ اَلَمۡ تَرَوۡا کَیۡفَ خَلَقَ اللّٰہُ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ۙ ١٥ وَّجَعَلَ الۡقَمَرَ فِیۡہِنَّ نُوۡرًا وَّجَعَلَ الشَّمۡسَ سِرَاجًا ١٦ وَاللّٰہُ اَنۡۢبَتَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ نَبَاتًا ۙ ١٧ ثُمَّ یُعِیۡدُکُمۡ فِیۡہَا وَیُخۡرِجُکُمۡ اِخۡرَاجًا ١٨ وَاللّٰہُ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ بِسَاطًا ۙ ١٩ لِّتَسۡلُکُوۡا مِنۡہَا سُبُلًا فِجَاجًا ٪

বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরওয়া করছ না! অথচ তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পৰ্যায়ক্রমে। তোমরা কি লক্ষ্য করনি আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করে। তিনি তোমাদেরকে উদ্ভূত করেছেন মাটি হতে। তারপর তাতে তিনি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেবেন এবং পরে নিশ্চিতভাবে বের করে নিবেন। আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিস্তৃত।  যাতে তোমরা সেখানে চলাফেরা করতে পার প্রশস্ত পথে। (সূরা নূহ, (৭১), আয়াত, ১০-২০)

কিন্তু তারা আল্লাহর নবীর কোনো আহ্বান কানে তুলেনি। উল্টো একত্ববাদের বাণীর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ প্রদর্শন করেছিল। নূহ আলাইহিস সালাম যখন তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে আল্লাহর ওপর ঈমান আনার কথা বলতেন তখন তারা দৌঁড়িয়ে পালাতো এবং নিজেদের কানে আঙ্গুল দিয়ে রাখতো। তখন নূহ আলাইহিস সালাম অপরগতা প্রকাশ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে ফরিয়াদ করে বললেন, 

قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ دَعَوۡتُ قَوۡمِیۡ لَیۡلًا وَّنَہَارًا ۙ ٥ فَلَمۡ یَزِدۡہُمۡ دُعَآءِیۡۤ اِلَّا فِرَارًا ٦

 
নিশ্চয় আমি আমার জাতি দিন-রাত দাওয়াত দিয়েছি। কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের শুধু সত্য পথ থেকে পলায়ন প্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে। (সূরা নূহ, (৭১), আয়াত, ৫-৬) 

এমন অবাধ্যতার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা অবিশ্বাসী কাফেরদের এক মহাপ্লাবনের মাধ্যমে ধ্বংস করেছিলেন। সেই অবিশ্বাসীদের মধ্যে নূহ আ.-এর ছেলে কেনানও ছিল, তাকে এই বিধ্বংসী প্লাবন থেকে রক্ষার জন্য নূহ আ. আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিছিলেন ‘সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়’। এবং  আল্লাহ নূহ আ.-কে বলেন, আপনি যে আপনার কাফের সন্তানের জন্য আমার শরনাপন্ন হয়েছেন এ কাজটা সৎ কাজ নয়। আপনার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কিছু চাওয়া ভাল কাজ নয়।

সূরা হুদে যে দোয়া বর্ণিত হয়েছে

নূহ আ. যখন জানতে পারলেন তার প্রার্থনা ঠিক হয়নি, তখন অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে নিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট তার দয়া ও ক্ষমার প্রার্থী হয়ে এই দোয়া করলেন—

رَبِّ اِنِّیۡۤ اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِهٖ عِلۡمٌ ؕ وَ اِلَّا تَغۡفِرۡ لِیۡ وَ تَرۡحَمۡنِیۡۤ اَکُنۡ مِّنَ الۡخٰسِرِیۡنَ

উচ্চারণ : রাব্বি ইন্নি- আয়ুযুবিকা-আন আছআলাকা মা-লাইছা-লিয়া-বিহি ইলম, ওয়া-ইল্লা তাগফিরলি ওয়াতারহামনি, আকুম-মিনাল খাছিরিন 

অর্থ : 

‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হতে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। যদি তুমি আমাকে ক্ষমা না কর আর আমার প্রতি দয়া না কর তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা হুদ, (১১), আয়াত, ৪৭)

এনটি