প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারীর সব গুনাহ মাফ করে দেন আল্লাহ তায়ালা। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

তোমাদের কারও বাড়ির সামনে যদি একটি প্রবহমান নদী থাকে এবং প্রতিদিন পাঁচবার তাতে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে কি? সাহাবাগণ বললেন, না। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর সাহায্যেই আল্লাহ তার যাবতীয় গুনাহ দূর করে দেন।’ (বুখারি ৫২৮, মুসলিম ৬৬৭, নাসায়ী ৪৬২, তিরমিজি, ২৮৬৮)

নামাজ আদায়ের পুরস্কার বর্ণনার পাশাপাশি নামাজে অবহেলাকারীর শাস্তির কথাও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।  এ বিষয়ে হজরত উবায়দা বিন সামেত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

‘আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি সময় অনুযায়ী উত্তমরূপে অজু করে, রুকু-সিজদা পূর্ণ করে, পূর্ণ মনোযোগসহ নামাজ আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা- তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। যে তা করবে না, তার প্রতি আল্লাহর কোনও দায়িত্ব নেই। ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন আবার না-ও পারেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, ২৩৬)

এই দু্ই হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, একজন মুসলমান চাইলে সহজেই নিজেকে প্রতিদিন গুনাহ মুক্ত করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বানাতে পারে। আবার একটু অবহেলা, অলসতা বা নফসের প্রতারণার কবলে পড়লেই সে আল্লাহর শাস্তির হুঁশিয়ারির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। এজন্য সবসময় সতর্ক থাকতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার বিধান পালন করতে হবে।

নামাজ যেকোনো অবস্থায় যেকোনো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। নিজ বাড়ি, ভ্রমণ-সফর, স্থলে-জলে বা নৌযানে যেখানেই থাকুন না কেন— নামাজ আদায় করতে হবে।

যেকোনো ধরনের নৌযানে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে নৌযান যদি উপকূলে নোঙর করা থাকে, শান্ত থাকে, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়, তবে দাঁড়িয়েই নামাজ পড়তে হবে। 

আর যদি নৌযান নোঙর করা আছে এবং সাগর অশান্ত হওয়ায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়, তবে বাইরে গিয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ আছে, তাহলে লঞ্চে নামাজ বৈধ নয়। তবে চলন্ত নৌযানে দাঁড়াতে না পারলে সর্বসম্মতিক্রমে বসে নামাজ আদায় করা যাবে। 

আর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার কারণে মাথা চক্কর দিলে সর্বসম্মতিক্রমে বসেই নামাজ পড়া যাবে।  

তবে নৌযানে কিবলার দিকে ফিরে নামাজ শুরু করার পর তা ঘুরে গেলে নামাজিকেও কিবলার দিকে ঘুরে যেতে হবে এবং কিবলার দিকে ফিরেই নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। আর নামাজের মধ্যে লঞ্চ ঘুরে গেছে জানা সত্ত্বেও যদি কেউ কেবলামুখী না হয় তাহলে নামাজ হবে না।

(কিতাবুল আছল ১/২৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৩২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০১)