মুরাবাহা মূলত ইসলামী ফিকহে ক্রয়-বিক্রয়ের একটি মেথড। এটি এটি ইসলামী অর্থায়ন পদ্ধতি নয়। মুরাবাহার মূল বক্তব্য হচ্ছে, ক্রয় মূল্য উল্লেখপূর্বক নির্দিষ্ট মুনাফার ভিত্তিতে ওই পণ্যটিকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়া।

সাধারণ বেচাকেনা ও ‍মুরাবাহার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে, সাধারণ বেচাকেনা ক্রয়মূল্য উল্লেখ করা অপরিহার্য নয়। পক্ষান্তরে মুরাবাহাতে ক্রয় মূল্য উল্লেখ করা অপরিহার্য।

মুরাবাহা যেহেতু বেচাকেনার একটি পদ্ধতি তাই বেচাকেনার যে সমস্ত অপরিহার্য শর্ত রয়েছে সেগুলো এখানে মেনে চলতে হবে। যেমন যে বস্তুটি বিক্রি করা হবে তা বাস্তবে অস্তিত্বে থাকা এবং বিক্রেতার মালিকানায় থাকা ইত্যাদি।

ইসলামিক ব্যাংকিং ফাইন্যান্সে, মুরাবাহাকে অর্থায়ন হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেসব গ্রাহকদের পণ্য ও সম্পদ ক্রয়ের জন্য ঋণের প্রয়োজন হয় তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য মুরাবাহাকে ব্যবহার করা হয়।

ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মুরাবাহার ব্যবহার শরীয়াহ আইনের নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সুদ গ্রহণের পরিবর্তে ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে সম্পদ ক্রয় করে পূর্বের মূল্য ও খরচ উল্লেখপূবর্ক একজন নির্দিষ্ট কাস্টমারের কাছে বিক্রি করে দিযে মুনাফা গ্রহণ করাকে বিজ্ঞ মুফতিগণ সাময়িকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এটি স্থায়ী কোনো অর্থায়ন পদ্ধতি নয়।  

পণ্য ও সম্পদ ক্রয়ের জন্য অর্থায়ন প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মুরাবাহা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (আওফি) এর মতে, `মুরাবাহা হলো একটি চুক্তি যেখানে একটি ব্যাংক বা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাপ্লায়ারের কাছ থেকে একটি পণ্য ক্রয় করে পণ্যের খরচ ও লাভ মার্জিন যোগ করে ক্লায়েন্টের কাছে একটি সম্মত মূল্যে বিক্রি করে। গ্রাহক কিস্তিতে পণ্যটির মূল্য সাধারণত কয়েক মাস বা বছরের মধ্যে শোধ করে। মার্ক-আপ মূল্য হলো সেই মুনাফা যা ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে অর্জন করে।

ইসলামিক ফাইন্যান্সে মুরাবাহা-ধারণাটি লাভ ও ঝুঁকি ভাগাভাগির নীতির উপর ভিত্তিশীল। ব্যাংক লেনদেনের ঝুঁকি বহন করে। কাস্টমারের পক্ষ থেকে ওয়াদার ভিত্তিতে ব্যাংক সাপ্লায়ারের কাছ থেকে পণ্য খরিদ করে। কাস্টমার যদি পরবর্তীতে মুরাবাহা ট্রানজেকশন করতে অস্বীকৃতি জানায় সে ক্ষেত্রে ব্যাংক তার পণ্যটি অন্যত্র বিক্রি করার ঝুঁকি বহন করে। যদিও অন্যত্র বিক্রি করার ক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যের চেয়ে কম বিক্রি করলে কমের অংশটুকু কাস্টমারের কাছ থেকে কম্পেনসেশন করা জায়েজ। 

মুরাবাহা ইসলামী অর্থব্যবস্থার একটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত রূপ এবং এটি বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে: 

রিয়েল এস্টেট: ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে একটি সম্পত্তি ক্রয় করে নির্দিষ্ট লাভে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। গ্রাহক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল্যটা ব্যাংককে ফেরত দেন। অন্য সব বিভাগে একই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।

কার ফাইন্যান্স, কনজিউমার ফাইন্যান্স, ট্রেড ফাইন্যান্স ইত্যাদি।

তবে মুরাবাহা নীতির বাস্তব প্রয়োগ ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। এখানে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো। 

স্বচ্ছতা: তাত্ত্বিকভাবে, মুরাবাহা লেনদেন স্বচ্ছ হওয়া উচিত। ব্যাংকের উচিত পণ্যের প্রকৃত মূল্য ও লাভের পরিমাণ গ্রাহকের কাছে প্রকাশ করা। বাস্তবে, কিছু ব্যাংক এই তথ্য সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারে না। যার ফলে লেনদেন সম্পর্কে বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি হয়। স্বচ্ছতার এই অভাব ব্যাংক এবং গ্রাহকের মধ্যে আস্থার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ঝুঁকি: তাত্ত্বিকভাবে, মুরাবাহা লেনদেন ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে ঝুঁকি ভাগাভাগি করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি গ্রাহক সময়মতো অর্থপ্রদান করতে না পারেন, তাহলে ব্যাংক অতিরিক্ত ফি বা জরিমানা নিতে পারে না। বাস্তবে, ব্যাংক গ্রাহকের উপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরিমানা বা ফি নিয়ে থাকে। এতে ব্যাংকের যে ঝুঁকি বহন করার কথা ছিল তা বহন করা হয় না।

উদ্দেশ্য: তাত্ত্বিকভাবে, মুরাবাহাকে পণ্য ও সম্পদ ক্রয়ের অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা উচিত। বাস্তবে, কিছু ব্যাংক মুরাবাহাকে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। 

পণ্য: তাত্ত্বিকভাবে, মুরাবাহা কোনো ভৌত পণ্য, যেমন সোনা বা শস্য, যা ব্যাঙ্কের মালিকানাধীন কোনো পণ্য  কেনার জন্য ব্যবহার করা উচিত। বাস্তবে, কিছু ব্যাংক ভার্চুয়াল পণ্য বা আর্থিক উপকরণ হিসেবে মুরাবাহাকে ব্যবহার করতে পারে। যা শরীয়াহ আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

যাইহোক, ব্যাংকিং মরা পাহাড় ক্ষেত্রে শরিয়া ঝুঁকি কমানোর জন্য, অবশ্যই বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখা উচিত।

উপসংহারে বলা যায়, ইসলামিক ফাইন্যান্সে মুরাবাহার নীতি যদিও স্পষ্ট নীতির উপর ভিত্তিশীল, বাস্তবে এর প্রয়োগ জটিল। এই কারণে, AAOIFI এর মতো প্রতিষ্ঠানের প্রণীত বিধানগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা উচিত।