বছরের শ্রেষ্ঠতম সময় পবিত্র রমজান। কোনও কিছু দিয়ে রমজানের তুলনা করা সম্ভব নয়। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অফুরন্ত কল্যাণের। যে সময় চলে যায়, তা যারা কাজে লাগাতে পারে, তারা সফল। যারা হেলায়-অবহেলায় কাটায়, তারা বড় দুর্ভাগা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ সম্পাদন করল।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯৬৫)

দশ থেকে সাতশ গুণ সওয়াব
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যেকোনো নেক কাজ যদি আদম সন্তান করে, তাহলে তার জন্য ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সাওম (রোজা) ছাড়া, যেহেতু সাওম (রোজা) আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। সাওম (রোজা) পালনকারী আমারই কারণে স্বীয় কামাচার এবং পানাহার পরিত্যাগ করে। সাওম (রোজা) পালনকারীর জন্য সাওম (রোজা) ঢালস্বরূপ। সাওম (রোজা) পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, তার ইফতারের সময় এবং তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। আর সাওম (রোজা) পালনকারীর (ক্ষুধাজনিত কারণে নির্গত) মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে কস্তুরীর সুগন্ধি থেকেও অধিক পছন্দনীয়। (নাসায়ি, হাদিস : ২২১৫)

তা ছাড়া মহান আল্লাহ এই মাসকে পাপমোচনের মাস হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যারা এই মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে, মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে, মহান আল্লাহ তাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮)

যাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই...
কিন্তু এর বিপরীতে যারা রমজানকে অবহেলায় কাটিয়ে দেয়, তাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। যারা এই মাসেও তার গুনাহ মাফ করাতে সক্ষম হয় না রাসুল (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান : ১৬৬৮)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) মিম্বারে আরোহন করেন। অতঃপর বলেন, আমিন, আমিন, আমিন। সেখান থেকে অবতরণের পর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, আমার কাছে জিবরাইল এসে বলল, ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে সে আমার দরুদ পাঠ করেনি। আপনি আমিন বলুন। আমি আমিন বললাম। ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক, যে রমজান মাস পেল। কিন্তু পাপ মোচনের আগেই তা অতিবাহিত হলো। আপনি আমিন বলুন। আমি আমিন বললাম। ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে বাবা-মাকে বার্ধক্যে পেল। কিন্তু সেবার মাধ্যমে তাঁরা তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। আপনি আমিন বলুন। আমি আমিন বললাম।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৫১, তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

রমজানের হিসাব-নিকাশ জরুরি
এরই মধ্যে আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো রমজান পার হয়ে গেছে। পার হয়ে গেছে এই রমজানের বেশ কিছুদিন। আমাদের জীবনের বিগত রমজানগুলো এবং এই রমজানের পার হয়ে যাওয়া দিনগুলোকে আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি, তা হিসাব করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আমরা কেউ জানি না যে মহান আল্লাহ আরেকটি রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াত রেখেছেন কি না? যদি এই রমজানেই আমাদের অতীতের গুনাহ মাফ না করিয়ে নিতে পারি, তাহলে রাসুল (সা.) অভিশাপের পাত্র হয়ে যাই কি না?

অফুরন্ত রহমতের এই মাসে আমরা মহান আল্লাহর জন্য কত রাকাত নামাজ পড়তে পেরেছি, কোরআন নাজিলের মহিমান্বিত এই মাসে আমরা কত সময় কোরআন তিলাওয়াতে ব্যয় করেছি। অগণিত সওয়াবের এই মাসে আমরা কত টাকা সদকা করেছি, কতজন রোজাদারকে ইফতার করিয়েছি, করোনাকালের এই রমজানে আমরা কতজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি— তা হিসাব করার সময় এখনই, যাতে পরবর্তী দিনগুলো আমরা আমাদের আমলের ত্রুটিগুলো পুশিয়ে নিতে পারি; মহান আল্লাহর দরবারে দিন-রাত তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি; পাশাপাশি দুনিয়ার সব বিপদাপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।