ছবি : সংগৃহীত

রমজানে সদকাতুল ফিতর আদায় করা মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত। নবীজি (সা.) একে আবশ্যক করেছেন সামর্থ্যবান অভিভাবক ও তাদের অধীনদের প্রতি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন এক সা’ খেজুর বা যব কিংবা আধা সা’ গম। স্বাধীন-পরাধীন, নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় প্রত্যেকের ওপর।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬২২)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)- এর সময়ে আমরা এক সা’ খাদ্য অথবা এক সা' যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা' পনির অথবা এক সা’ কিশমিশ সদকাতুল ফিতর হিসেবে দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫১০)

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন- ‘রাসুল (সা.)-এর যুগে আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম— দুই মুদ্দ গম দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬/৩৫৫)

এক সা’ হলো চার মুদ্দ। তাহলে দুই মুদ্দ হলো অর্ধ সা’। পরিমাপ হিসেবে এক সা’ হলো প্রায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। আর অর্ধ সা’ হলো প্রায় ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম।

সদকাতুল ফিতরের বিধান সম্বলিত হাদিসগুলোতে আমরা মোট পাঁচ প্রকার খাদ্য পণ্য— যব, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও গমের উল্লেখ দেখতে পাই। যার প্রতিটি প্রকারই ঐচ্ছিক। অর্থাৎ যেকোনো একটিকে অনুসরণ করে ফিতরা আদায় করলে, সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

ফিতরা হিসেবে যা দেবেন

তবে মুসলমানদের যে সকল আর্থিক ইবাদতে অসহায় মানবতার কল্যাণ নিহিত আছে তাতে  ইসলামের অন্তর্নিহিত শিক্ষা ও মূলনীতি হলো, দান গ্রহণকারী দরিদ্রদের সুবিধা ও কল্যাণের দিককে প্রাধান্য দেওয়া। এ জন্যে সবচেয়ে উত্তম হলো, আল্লাহ যাদের সম্পদ ও সুযোগ দিয়েছেন তারা নিজেদের সামর্থ্য বিবেচনায় রেখে ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।

নবীজি (সা.)- এর নির্দেশনা, যারা খেজুর, কিশমিশ, পনির এবং যব এই চার প্রকার খাদ্য থেকে কোনো একটি দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চায়— তারা মাথাপিছু ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম হিসেব করে দেবে। আর গম বা আটার ক্ষেত্রে এর অর্ধেক, অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম হিসেবে ফিতরা দিলেও চলবে।

এটা ওজনের দিক দিয়ে তফাৎ। আর মূল্যের পার্থক্য তো আছেই। দ্রব্যগুলোর মূল্য যেহেতু উঠানামা করতে থাকে, তাই ফিতরা আদায়ের আগে বাজার-মূল্য যাচাই করে নেয়া আবশ্যক। 

২০২১ সালের সদকাতুল ফিতরের সম্ভাব্য মূল্য তালিকা - 
এক. যব ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম - ২৮০ টাকা।
দুই. কিশমিশ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম - ১৩২০ টাকা।
তিন. খেজুর ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম - ১৬৫০ টাকা।
চার. পনির ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম - ২৩১০ টাকা।
পাঁচ. গম বা আটা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম - ৭০ টাকা।

কোরআনের নির্দেশনা- ‘অবশ্য কেউ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো পুণ্যের কাজ করে (নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে আরও বাড়িয়ে দেয়) তবে তা তার পক্ষে শ্রেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

ফিতরা গরিবের হক

সদকাতুল ফিতর নিতান্তই গরিবের হক। ফিতরার টাকায় গরীবের ঈদ- আয়োজন, সাধারণ প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকায় কিছুটা সহযোগিতা হয়।

তাই ফিতরার সর্বনিম্ন হিসাব ও হার নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে ফিতরার অন্য হারগুলোকে আমলে আনলে অসহায় মানুষেরাই উপকৃত হবে।

এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বড় বড় বিত্তশালী ব্যক্তিগণ যদি সাধারণ সম্পাদশালীদের মতো একই মানের সদকাতুল ফিতর আদায় না করে হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্য থেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুপাতে খাদ্যমূল্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে তা-ই উত্তম হবে।

আরও পড়ুন : ফিতরা যাদের দেওয়া যাবে

এক্ষেত্রে ইমাম, খতিব ও ওলামায়ে কেরাম ভূমিকা নিতে পারেন। তারা সদকাতুল ফিতরের সবগুলো হারকে উল্লেখপূর্বক উচ্চহারে ফিতরা আদায়ের জন্য সমাজের সচ্ছল, সক্ষম ও বিত্তবান লোকদের উৎসাহিত অনুপ্রাণিত করতে পারেন। তারা জোর দিয়ে ফিতরার উচ্চ হারগুলো বর্ণনা করলে সুফল বেশি আসবে বলে আশা করা যায়।

ফিতরা একটি আর্থিক ইবাদত

ফিতরার উচ্চ হারগুলো বাস্তবায়িত হলে বেশিসংখ্যক অভাবী মানুষের ঈদ আনন্দকে স্পর্শ করবে ফিতরার দান। সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) সদকাতুল ফিতরের বিধান দান করেছেন রোজাদারকে অর্থহীন কথা-কাজ ও অশালীন আচরণ থেকে পবিত্র করার জন্যে এবং মিসকিনদের খাবারের সুব্যবস্থা হিসেবে। যে ব্যক্তি তা (ঈদের) নামাজের আগে আদায় করবে সেটা সদকাতুল ফিতর হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যে (ঈদের) নামাজের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

নিজের ইবাদতকে পরিচ্ছন্নরূপে আল্লাহর দরবারে পেশ করতে এই ফিতরা আমাদের কাজে আসবে। রোজাকে করে তুলবে প্রাণশক্তিপূর্ণ। দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের প্রতি রহম করুন, যেনো অসহায় মানুষের কল্যাণে নিজেদের দায় ও কর্তব্য পালনে ইনসাফ করতে পারি। আমিন।