পাকিস্তানের করাচির বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন বেশ কিছু মসজিদ। যা শহরটির ঐতিহাসিক অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে করাচিতে ছোট-বড় মিলিয়ে বিশ হাজারেরও বেশি মসজিদ রয়েছে। ঐতিহাসিক অবস্থান ছাড়াও এই মসজিদগুলো সৌন্দর্য এবং স্থাপত্য শৈলীর জন্যও বিখ্যাত। এখানে করাচির কয়েকটি ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদের বিবরণ তুলে ধরা হলো—

করাচি ঈদগাহ মসজিদ

করাচি লিয়ারির ফকির মুহাম্মদ খান দাদা রোডে অবস্থিত শহরটির প্রথম ও প্রাচীনতম ঈদগাহ মসজিদ। আড়াইশ বছর আগে সিন্ধুতে মীরদের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল ঈদগাহটি। আইয়ুব খানের সামরিক আইনের সময়ে ঈদগাহটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। 

১৯৪৭ সালে ভারত থেকে ভাগ হয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ঈদের নামাজে দেশটিতে কায়েদে আজম বলে পরিচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে শেষ কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। 

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ শেষ কাতারে দাঁড়ানোর কারণ ছিল, তিনি ঈদের নামাজে দেরিতে পৌঁছেছিলেন। ঈদগাহের ইমাম মাওলানা জহূরুল হাসান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আগমনের অপেক্ষায় দেরিতে নামাজ শুরু করতে অস্বীকৃতি জানান। ইমামের এই মনোভাবের প্রশংসা করেছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

জামিয়া মসজিদ থানবী

করাচির প্রাচীন ও সুন্দর মসজিদগুলো অন্যতম জামিয়া মসজিদ থানভি। পাকিস্তান স্বাধীনের আট দিন আগে মাওলানা এহতেশাম-উল-হক থানবী এই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন এটি একটি ছোট মসজিদ ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১১ সালে বালুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

১৯৬০ সালে, দিল্লির জামে মসজিদের আদলে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এ  সময় মসজিদটি সম্প্রসারণের পাশাপাশি, দুটি বৃহৎ মিনার নির্মিত হয়েছিল, প্রতিটি একশ ফুট লম্বা।

জামিয়া মসজিদ থানবীর মূল অংশে প্রায় ৯০০ জন মুসল্লি একসাথে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের বারান্দা এবং উঠোনে ১,৫০০ জন এবং উপরের তলায় ১,০০০ মুসল্লির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।

নিউ মেমন মসজিদ

করাচির অন্যতম প্রধান মসজিদ নিউ মেমন মসজিদ। ১৯৪৯ সালের ২৪ আগস্ট  মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং অল্প সময়েই মসজিদটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৪৯ সালের ১৫ জুলাই মসজিদটিতে প্রথমবার আজান দেওয়া হয়। 

করাচির ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে নামাজিদের সংখ্যা সবসময়ই বেশি থাকে। পবিত্র রমজান মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়, এবং এ সময় প্রতিদিন হাজারো রোজাদারের জন্য সচ্ছল ও দানশীল ব্যক্তিদের উদ্যোগে বিনামূল্যে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়।

রমজানে ইসলামি শিক্ষার বিশেষ আয়োজনও এখানে করা হয়। শেষ দশকে এ মসজিদ থেকে ‘শবিনা’ মাহফিল সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়, যেখানে করাচির বিভিন্ন হাফেজ কোরআন তিলাওয়াত করেন। মসজিদের সঙ্গেই যুক্ত ‘ইকবাল ক্লথ মার্কেট’ মসজিদের সম্পত্তির অংশ।

প্রসঙ্গত, মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)