গাছ-গাছালি ও বৃক্ষ-তরুলতা- মহান আল্লাহ তাআলার অনিন্দ্য সৃষ্টি। গাছের সঙ্গে মানুষের জীবন-প্রভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাণিদের বেঁচে থাকার জন্য গাছের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যিক। কারণ, সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকা বৃক্ষ প্রাণে শিহরণ জাগায়। ঝিরঝির হিমেল বাতাসে দেহমন জুড়িয়ে আসে।

গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। গবেষকদের মতে, একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। গাছপালা ও বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। চারদিক সজীব-সতেজ ও স্বাভাবিক রাখে।

গাছ আল্লাহকে সিজদা করে

মহান আল্লাহ তাআলাকে গাছ-গাছালি ও বৃক্ষরাজি সিজদা করে। তার তাসবিহ পাঠ ও পবিত্রতা বর্ণনা করে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি কি দেখেননি নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে- সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতমালা বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ আল্লাহকে সিজদা করে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ১৮)

গাছপালা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আরও বলেন, ‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টিবর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।’ (সুরা কাফ, আয়াত: ৭-৯)

গাছ লাগাতে মহানবী (সা.)-এর উৎসাহ

গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। রাসুল (সা.) নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন। ইসলামে গাছ লাগানোর গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণ ইবাদত ও নেক আমল হিসেবে গণ্য।  মহানবী (সা.) নানা সময়ে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেছেন। যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় ও সুস্থ পরিবেশ রক্ষা পায়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে। আর তা থেকে কোনো পোকামাকড় কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২০; মুসলিম, হাদিস : ৪০৫৫)

গাছ লাগানোর সওয়াব

হাদিসে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে প্রেরণা দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। বৃক্ষরোপণ ও গাছ লাগানোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যথার্থ মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন। বান্দার লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে সৃষ্টি জীবের কেউ কিছু খেলেই বা একটু উপকৃত হলেই সওয়াব লেখা হচ্ছে তার আমলনামায়। রোপণকারী ব্যক্তির মৃত্যু হলেও তা সদকা জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষরোপণ করে আর ফলদার হওয়া নাগাদ তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফলের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে সদকার সওয়াব দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৭০২; শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩২২৩)

প্রয়োজন ছাড়া গাছ কাটা নিষিদ্ধ

পরিবেশ শান্ত, শীতল ও মনোমুগ্ধকর রাখতে গাছের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন প্রিয়নবী (সা.)। আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪১)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে [যে গাছ মানুষের উপকার করতো], আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (বায়হাকি, হাদিস: ৬/১৪০)

অবশ্য এই হাদিসের বর্ণনা দুর্বল। হাদিসবিশারদরা দীর্ঘ ব্যাখ্যা ও প্রাসঙ্গিকতা বর্ণনা করেছেন।

তবে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয় কিংবা অন্য কোনো অসুবিধা তৈরি করে- এমন গাছ কাটলে অসুবিধা নেই। পরিবেশ ও স্থানের জন্য ক্ষতিকর হলে গাছ কাটা যায়, এতে কোনো অসুবিধা নেই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ওই গাছের ছায়ায় চলাচল করছে, যেটি সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল- গাছটি মানুষকে কষ্ট দিত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৭)

পরিবেশ বাঁচাতে ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে বৃক্ষরোপণ বাড়াতে হবে। আর গাছ লাগানো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (সা.)-এর বিশেষ আমল। বৃক্ষরোপণ ও গাছের পরিচর্যা করতে তিনি উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।