নবী মুসা ও মা হাজেরা (আ.) যেভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছিলেন
তাওয়াক্কুল অর্থাৎ, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানুষকে কঠিন মুহূর্তে নির্ভার রাখতে সাহায্য করে এবং কঠিন বিপদ থেকে মুক্ত রাখে। তাওয়াক্কুলের অগণিত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। এমন দু’টি ঘটনা হলো হজরত ইবব্রাহিম (আ.)-এর স্ত্রী হাজেরা (আ.) ও হজরত মুসা (আ.)-এর ঘটনা। কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল।
হজরত হাজেরা (আ.)-এর তাওয়াক্কুল ও ভরসা
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর নির্দেশে শিশু ইসমাঈল ও হাজেরা (আ.)-কে নির্জন মরুভূমিতে রেখে গিয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। খাবার পানীয় যা দিয়েছিলেন তা অল্প সময়ে শেষ হয়ে গেল। মায়ের বুকের দুধও শুকিয়ে গেল। সেই নির্জন মরুতে ক্ষুধায় কাতর হয়ে উঠলেন শিশু ইসমাঈল।
ক্ষুধায় কাতর শিশুকে নিয়ে নির্জন মরুতে একা হয়ে গেলেন মা হাজেরা (আ.)। আশপাশে কোথাও মানুষ নেই, পানি নেই, কোনো প্রাণের সাড়া নেই। ক্ষুর্ধাত শিশুকে নিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়লেন। কোথায় যাবেন? কার কাছে একটু খাবার পানি পাবেন! দিশেহারা হয়ে ছুটোছুটি করতে লাগলেন।
বিজ্ঞাপন
দিশেহারা মা হাজেরা একবার সাফা পাহাড়ে যান, পাহাড়ের চূড়া থেকে মরুর দূর দিগন্তে তাকিয়ে দেখেন, কোনো কাফেলা বা কেউ এদিকে আসছে কিনা! কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন তিনি আবার মারওয়া পাহাড়ের দিকে ছুটলেন। সেখানে গিয়েও নিরাশ হলেন। কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই। এভাবে বারবার দুই পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়াতে থাকলেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলেন।
এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা শিশু ইসমাঈলের পায়ের গোড়ালি থেকে যমযমের পানির উৎস বের করলেন। যা বর্তমান পৃথিবীতেও বিশ্ব মুসলিমের জন্য বরকতের প্রতীক ও আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।
সন্তানের জীবন বাঁচাতে আল্লাহর ওপর মা হাজেরা ভরসা ও সেই দৌঁড়ানোকে আল্লাহ তায়ালা আজও মুসলিম উম্মাহের মাধ্যমে হজ-ওমরাহর গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে জিইয়ে রেখেছেন। কোটি কোটি মুসলমান আজও হজ-ওমরার সময় সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করেন।
উত্তাল সমুদ্র ও ফেরাউন বাহিনীর সামনে মুসা (আ.)-এর তাওয়াক্কুল ও ভরসা
বর্বর শাসন, নির্যাতন আর দাসত্বে জর্জরিত ছিল বনি ইসরাঈল। আল্লাহ তাদের মুক্তির জন্য পাঠিয়েছিলেন হজরত মুসা (আ.)-কে। আল্লাহর নির্দেশে তিনি তার জাতিকে নিয়ে মিসর ছেড়ে গেলে। রাতের অন্ধকারে তারা ছুটে চললেন, কিন্তু ফেরাউন খবর পেয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের তাড়া করল।
চলতে চলতে পথ গিয়ে ঠেকল লোহিত সাগরের সামনে। সামনের বিশাল সমুদ্র, পেছনে বর্বর ফেরাউন। অনেকে হতাশ হয়ে পড়লেন, কেউ কেউ মুসা (আ.)-কে দোষারোপও করলেন। তবে মুসা বললেন,আমার প্রভু আমার সঙ্গে আছেন, তিনি অবশ্যই পথ দেখাবেন।
আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.)-কে লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করতে বললেন। সাগর দ্বিখণ্ডিত হলো। বনি ইসরাইল পার হয়ে গেল, আর ফেরাউন সেই সাগরেই ডুবে গেল। আল্লাহর ওপর ভরসা ও তায়াক্কুল মুসা (আ.)-কে তার জাতিসহ মুক্তি এনে দিলো।
তাওয়াক্কুল আসলে কী
এই দুই ঘটনা শুধু ইতিহাস নয়, তাওয়াক্কুলের শক্তির চিরন্তন উদাহরণ। আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাস ও নির্ভরতা নবী-রাসুলদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি উপাধিও ছিল আল-মুতাওয়াক্কিল—অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা করেন। আর আল্লাহর একটি সুন্দর নাম হলো আল-ওয়াকিল—যিনি সবকিছুর দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতম।
যখন ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট, তিনিই শ্রেষ্ঠ কর্মবিধায়ক।
এনটি