দেরিতে সন্তান নেওয়ার ভাবনা, ইসলাম কী বলে?
বিয়ের পরেই সন্তান নেবেন নাকি দেরিতে? এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও দোটানায় ভোগেন অনেক নব দম্পতি। আর্থিক স্থিতি, কর্মজীবনের চাপ কিংবা মানসিক প্রস্তুতির অভাব। এসব চিন্তা-ভাবনা করে কেউ কেউ সন্তান নিতে দেরি করার সিদ্ধান্ত নিতে চান এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
ভবিষ্যতের নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের মতামত হলো, সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট নিয়ামত। জীবনের কোন পর্যায়ে, কোন পরিস্থিতিতে সন্তান মানুষের জীবনে কোন শিক্ষা বা কোন পরিবর্তন এনে দেয় তা আগে থেকে অনুধাবন করা ও বুঝা সম্ভব নয়। অনেক মানুষ দেরিতে বা তাৎক্ষণিক সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজেকে সন্তান নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় ভেবে থাকেন; কিন্তু ভবিষ্যত সম্পর্কে নিশ্চত করে কেউ কিছু বলতে পারে না। ভবিষ্যতের নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে।
ধৈর্য, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও ত্যাগের শিক্ষা
বিজ্ঞাপন
বর্তমান সময়ে অনেক দম্পতি সংসার গুছানো, স্থায়ী আয় এবং ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দিতে চান। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মজীবী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলে দাম্পত্য জীবনে নানা চ্যালেঞ্জ আসে। তবে শুধু পার্থিব স্বচ্ছলতার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ ধীরে ধীরে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে পারেন।
সন্তান লালন-পালনের মাধ্যমে অন্যকে সময় দেওয়া, ধৈর্য ধারণ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, পারস্পরিক সম্মান ও ত্যাগের শিক্ষা পায় মানুষ। এই মূল্যবোধ কোনো সম্পদ দিয়ে কেনা যায় না। সমাজ গঠনে সন্তান প্রতিপালনের এই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকলে ইসলামে সন্তান গ্রহণে ভয় না পাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
‘সন্তান চোখের শীতলতা’
পবিত্র কোরআনে সন্তানকে চোখের শীতলতা ও প্রশান্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে—
وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا
আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
সন্তানকে রিজিক দেন আল্লাহ তায়ালা
অনেকে অভাব-অনটন ও বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সন্তান নিতে চান না বা সন্তান নষ্ট করেন। পবিত্র কোরআনে বিষয়টিকে মহাপাপ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং সন্তানের রিজিকের ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়ে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সন্তান এবং সন্তানের অভিভাবক সবার রিজিক দান করেন। বর্ণিত হয়েছে—
وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَكُمۡ خَشۡیَۃَ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُهُمۡ وَ اِیَّاكُمۡ ؕ اِنَّ قَتۡلَهُمۡ كَانَ خِطۡاً كَبِیۡر
অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিজিক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৩১)
আলোচ্য আয়াতে এই নির্দেশটি জাহেলিয়াত যুগের একটি নিপীড়নমূলক অভ্যাস সংশোধনের নিমিত্ত উল্লেখিত হয়েছে। জাহেলিয়াত যুগে কেউ কেউ জন্মের পরপরই সন্তানদেরকে বিশেষ করে কন্যা সন্তানদেরকে হত্যা করত, যাতে তাদের ভরণ-পোষণের বোঝা বহন করতে না হয়।
এক হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটা অবশ্যই বড় কিন্তু তারপর কি? তিনি বললেন, এবং তোমার সাথে খাবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা। (বুখারি, হাদিস : ৪৪৭৭)
শরীরে নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা
দেরিতে সন্তান নেওয়ার জন্য অনেক সময় দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন করা হয়। শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করলে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার রোগ, স্তন, জরায়ু ও লিভারের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
আবার অনেক সময় মানুষ সন্তান গ্রহণে উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষায় দেরি করতে থাকে; কিন্তু ততদিনে সময় গড়িয়ে যেতে পারে। একপর্যায়ে দেখা যেতে পারে আগের মতো আর সন্তান ধারণের সক্ষমতা নেই, অথবা দীর্ঘদিন সন্তান গ্রহণ না করার ফলে মানসিকভাবে এমন অভ্যাস গড়ে উঠেছে যে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময়, ধৈর্য ও নিঃশর্ত ভালোবাসা দেওয়ার মানসিকতা আর নেই আগের মতো।
তাই সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শুধু দুনিয়াবি হিসাব না করে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা জরুরি।
অ্যাবাউট ইসলাম অবলম্বনে
এনটি