জীবনের প্রতিটি ধাপেই মানুষকে ছোট, বড় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পড়াশোনা, চাকরি, বিয়ে, ব্যবসা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেক সময় দ্বিধায় পড়তে হয়। এই অনিশ্চয়তার মুহূর্তে একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথনির্দেশনা হলো ইস্তিখারা নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের কোরআনের সুরা শেখানোর মতো গুরুত্ব দিয়ে ইস্তিখারা শেখাতেন।

ইস্তিখারা সম্পর্কে মহানবীর (সা.) শিক্ষা

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইস্তিখারা করার শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, কোনো সিদ্ধান্তের আগে ফরজ নামাজের বাইরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর জ্ঞান, ক্ষমতা ও অনুগ্রহ কামনা করতে হবে এবং নিজের অজ্ঞতা ও সীমাবদ্ধতা স্বীকার করতে হবে। আল্লাহ যদি জানেন সিদ্ধান্তটি দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর, তবে তা সহজ করে দেওয়ার প্রার্থনা করতে হবে। আর যদি তা ক্ষতিকর হয়, তবে সেটি থেকে দূরে রাখার এবং উত্তম বিকল্প দান করার আবেদন জানাতে হবে।

এই শিক্ষা থেকে বোঝা যায়, ইস্তিখারা শুধু একটি নামাজ নয়, বরং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও আত্মসমর্পণের প্রকাশ।
 
ইস্তিখারার গুরুত্ব

মানুষের জীবনে প্রায় সবসময় ছোট, বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অধিকাংশ সময় আমরা সিদ্ধান্তের গুরুত্ব বুঝতে পারি তখন যখন তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখা দেয়। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি সিদ্ধান্তই আমাদের জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে।

আমরা ভবিষ্যৎ জানি না। আজ যেটি ভালো মনে হচ্ছে, কাল সেটিই সমস্যার কারণ হতে পারে। চাকরি, বিনিয়োগ বা পরিকল্পনা ভবিষ্যতে আমাদের ঈমান, জীবিকা কিংবা মানসিক শান্তির জন্য উপকারী হবে কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

এই সীমাবদ্ধতার কারণেই ইস্তিখারার প্রয়োজন। এটি এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের সিদ্ধান্তের ভার তুলে দিই। তিনি অদৃশ্য জানেন, ভবিষ্যৎ জানেন এবং আমাদের মনের গোপন আশা-ভয়ও জানেন।

ইস্তিখারা নামাজ যেভাবে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে

ইস্তিখারা নামাজ আদায় করা খুবই সহজ। অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয় এবং নির্ধারিত দোয়া পড়তে হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন মুমিন নিজের ইচ্ছা ও দুশ্চিন্তা আল্লাহর হাতে সঁপে দেন।

এর ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, অস্থিরতা ও ভয় অনেকটাই কমে যায়। কারণ সিদ্ধান্তের পরিণতি নিয়ে দুশ্চিন্তার বদলে আল্লাহর হিকমত ও রহমতের ওপর ভরসা তৈরি হয়।

ইস্তিখারা মানে এই স্বীকারোক্তি যে, আমরা নিজেরা সব সময় সেরা সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নই। তাই আমরা আল্লাহর সাহায্য চাই, তিনি যেন আমাদের জন্য উত্তম উপায় নির্ধারণ করে দেন।

ইস্তিখারার ফল কী?

অনেকে মনে করেন, ইস্তিখারার পর কোনো স্বপ্ন বা বিশেষ ইশারা দেখতে হবে। বাস্তবে তা নয়। ইস্তিখারার পর একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা-ভাবনা করে পরামর্শ নেয় এবং নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর যে সিদ্ধান্তই সে নেয়, তা আল্লাহর ইচ্ছা ও দয়ার অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এতে অন্তরে এক ধরনের প্রশান্তি আসে। যা দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনে সহায়ক।

ইস্তিখারার মাধ্যমে যেই মানসিক স্বস্তি পাওয়া যায় তার মূল্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনাহীন।

এনটি