ছবি : সংগৃহীত

কোরবানি ও ঈদুল আজহা ইসলামের অন্যতম ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার কৃপা লাভে সামর্থ্যবানরা পশু উৎসর্গ করে থাকেন। আর অন্যসব আমল ও ইবাদতের মতো এগুলোও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) হিজরতের পর প্রতিবছর কোরবানি করেছেন।

কোরবানির বহু বিষয়-আশয় ও নানা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। পাঠকদের উদ্দেশে পাঁচটি নির্বাচিত হাদিস-প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলো-

এক. নবী করিম (সা.)-এর কোরবানি

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) দুইটি সাদা-কালো বর্ণের (বড় শিং বিশিষ্ট) নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে— বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর নিজ হাতে জবেহ করলেন। (বুখারি, হাদিস : ২/৮৩৪)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) ঈদগাহে জবেহ করতেন এবং নহর করতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২/৮৩৩)

অতএব কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম হলো- গরু, ছাগল ও দুম্বা জবাই করা হবে এবং উট নহর করা হবে। নবী করিম (সা.) এমনটাই করেছেন।

দুই. কোরবানির পশু জবাইপ্রসঙ্গ

শাদ্দাদ ইবনে আওছ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ওপর অনুগ্রহ অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা জবাই করবে— তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করো। প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫২)

তিন. কোরবানির পশুর বয়স

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা (কোরবানিতে) ‘মুছিন্না’ ছাড়া জবেহ করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী ভেড়া-দুম্বা জবেহ করতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫৫)

কোরবানির পশুগুলোর ক্ষেত্রে উটের বয়স অন্তত পাঁচ বছর হতে হবে। আর গরু ও মহিষের হতে হবে দুই বছর। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার হতে হবে এক বছর। প্রসঙ্গত, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে উপরোক্ত হাদিস থেকে জানা গেল যে, তা ছয় মাসের হলেও চলবে। তবে তা বিশেষ কারণে কিংবা ভেড়া ও দুম্বা দেখতে এক বছর বয়সীর মতো দেখালে।

চার. কোরবানি করার সময়

বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, ‘আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে— তার কাজ আমাদের তরিকা (পদ্ধতি) মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে (তার কাজ তরিকা মতো হয়নি) অতএব তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) কোরবানি নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২/৮৩২)

অন্য হাদিসে আছে কোনো কোনো সাহাবি ভুলক্রমে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করেছিলেন। নবী করিম (সা.) তাদের পুনরায় কোরবানি করার আদেশ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২/৮২৭)

পাঁচ. কোরবানির গোশত খাওয়া-সংরক্ষণ

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) তিনরাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর (অবকাশ দিয়ে) বলেন, ‘খাও, পাথেয় হিসাবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫৮)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে যে, ‘খাও, সংরক্ষণ কর এবং সদকা করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫৮)