আশুরা বা ১০ মহররম। মুসলিম উম্মাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র চার মাসের একটি ও ঐতিহাসিক নানা কারণে। এছাড়াও মহররমকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। আর আশুরার রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন বলে আশা করেছেন মহানবী (সা.)।

মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র হোসাইন (রা.)। কারবালা প্রান্তরে (৬০ বা ৬১ হিজরির ১০ মুহাররম) তার মর্মান্তিক শাহাদাত ‘আশুরা’-কে আরও গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ফলে কারবালা ও কারবালা সংক্রান্ত ইতিহাস জরুরি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

জুবাইর ইবনে বাক্কার (রহ.) কারবালা সংশ্লিষ্ট ইতিহাস সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষেপে বলেন, হোসাইন ইবনে আলী (রা.) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আর আশুরার জুমার দিনে ৬১ হিজরিতে তিনি শহীদ হন।

তাকে সিনান ইবনে আবি আনাস নাখায়ি হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে খাওলি ইবনে ইয়াজিদ আসবাহি হিময়ারি। সে হোসাইন ইবনে আলীর মাথা শরীর থেকে দ্বিখণ্ডিত করে এবং ওবায়দুল্লাহর দরবারে নিয়ে যায়।

বলাবাহুল্য যে, কারবালার প্রান্তরে সে অশুভ দিনে পাপিষ্ঠরা যে নির্মমতা ও নির্দয়তার পরিচয় দিয়েছে, তা পাষণ্ড হৃদয়েও ব্যথা ও যাতনা সৃষ্টি করে। শাহাদাতের পর হজরত হোসাইন (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শা ও ৩৪টি তরবারির আঘাত দেখা যায়। শরীরে ছিল অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন। তার সঙ্গে মোট ৭২ জনকে হত্যা করে ঘাতকরা।

অন্যায়ভাবে হত্যা করে হোসাইন (রা.)-কে

খিলাফত ব্যবস্থার পুণর্জীবন করাই ছিল হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়েছিলেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতে স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন। 

এক. তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেওয়া হোক। দুই. তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেওয়া হোক। তিন. ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।

কিন্তু পাপিষ্ঠ ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তার কথার বিরুদ্ধাচারণ করে। সে হজরত হোসাইনকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেয়। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

হজরত হোসাইনকে কষ্ট দেওয়া হয়...

ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী অবশেষে হজরত হোসাইন (রা.)- কে অবরুদ্ধ করে ফেলে। তারা ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার শুরু হয়। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করতে আসিনি। এমনকি ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়। খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার কাম্য।’

কিন্তু এরপরও ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অসম যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া ৭০ থেকে ৭২ জন শহীদ হন। হজরত হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান। অবশেষে তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।

ইতিহাস সাক্ষী হত্যাকারীরা ছাড় পায়নি

হজরত হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালা প্রান্তরে তাকে কবরস্থ করা হয়।

ইতিহাস সাক্ষী, হজরত হোসাইন (রা.)-কে কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, মাত্র ৫০ বছরের ব্যবধানে করুণ পন্থায় তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। (সূত্র: কারবালার ইতিহাস, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)।)

আশুরা মানেই কারাবালা নয়; মনে রাখুন

প্রসঙ্গত মনে রাখা জরুরি যে, আশুরা মানেই শুধু কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা নয়। আশুরার ঐতিহ্য আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে আশুরার ঐতিহাসিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, ইসলামের আবির্ভাবেরও বহু আগ থেকে।

আল্লাহ ‍তাআলা হজরত হোসাইন (রা.), তার পরিবার ও বন্ধুজনদের জান্নাতে চির উচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন। হোসাইন (রা.)-এর মতো আমাদের সত্য-ন্যায়ের পথ অবলম্বনের তাওফিক দান করুন।