প্রতীকী ছবি

মানুষের সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু ইসলাম চাপিয়ে দেয়নি। কারণ, ইসলাম সহজাত, জীবনঘনিষ্ঠ ও স্বভাবজাত ধর্ম। আল্লাহর দেওয়া সব বিধানের মধ্যে নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অসুস্থ হলেও নামাজ আদায় করতে হয়। তবে সে ক্ষেত্রে ইসলাম কিছুটা অবকাশ দিয়েছে।

সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বসে নামাজ পড়ার বিধান

ইসলাম অসুস্থের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ আদায়ের সুযোগ দিয়েছে। তবে এর জন্য বিশেষ নীতিমালা রয়েছে। দাঁড়াতে ও সিজদা করতে সক্ষম— এমন ব্যক্তির জন্য নামাজে কিয়াম বা দাঁড়ানো ফরজ।

দাঁড়াতে বা সিজদা আদায়ে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ ফরজ-ওয়াজিব নামাজ বসে আদায় করে, তবে নামাজের ফরজ ছেড়ে দেওয়ার কারণে তার নামাজ হবে না। নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। (দুররে মুখতার, জাকারিয়া বুক ডিপো : ২/১৩২)

হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়

সিজদা করতে সক্ষম ব্যক্তি যদি নামাজের কিছু অংশে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এবং পুরো সময় দাঁড়িয়ে থাকতে অপারগ থাকে, তবে যেটুকু সময় দাঁড়াতে পারবে, তা কোনো লাঠি বা দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে হলেও সেটুকু দাঁড়ানো ফরজ। এ অবস্থায় যদি না দাঁড়ায় এবং কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বসেই নামাজ আদায় করে, তবে নামাজ হবে না। (দুররে মুখতার : ২/২৬৭)

আরও পড়ুন : নামাজ কখন ভেঙে ফেলা যাবে?

কেউ যদি দাঁড়াতে সক্ষম, কিন্তু রুকু-সিজদা বা শুধু সিজদা করতে সক্ষম না হয়, তার জন্য বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। সে ইশারার মাধ্যমে রুকু-সিজদা করবে। এ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার চেয়ে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করা উত্তম। (দুররে মুখতার : ২/৫৬৭, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৩৬)

না দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে যখন

কিছু অক্ষমতা রয়েছে, যেগুলোর কারণে দাঁড়ানোর আবশ্যকতা রহিত হয়ে যায়। তা সাধারণত দুই প্রকার :

এক. হাকিকি বা মৌলিক অর্থাৎ এমন অক্ষম, যে দাঁড়াতে পারে না।

দুই. হুকমি বা বিধানগত অর্থাৎ সে এমন অক্ষম নয় যে দাঁড়াতে পারে না, বরং দাঁড়ালে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অথবা এমন দুর্বলতা থাকে, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অক্ষমতা বলে বিবেচিত।

যেমন- অসুস্থতা, যার ব্যাপারে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তাররা পরামর্শ দেন যে দাঁড়ালে রোগ বৃদ্ধি পাবে অথবা সুস্থতা ফিরে আসতে বিলম্ব হবে কিংবা দাঁড়ানোর কারণে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয়—এসব অবস্থায় বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। (দুররে মুখতার মাআ রদ্দুল মুহতার : ২/৫৬৫)

আরও পড়ুন : গাড়িতে যেভাবে নামাজ পড়বেন

চেয়ারে নামাজ আদায় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই বিধান

যে ক্ষেত্রে শরয়ি ওজরের কারণে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার অনুমতি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে সিজদার সময় ইশারার ওপরই ক্ষান্ত হওয়া উচিত। উল্লিখিত দীর্ঘ আলোচনার সংক্ষিপ্ত নিম্নরূপ :

এক. যে ব্যক্তি দাঁড়াতে সক্ষম নয়, কিন্তু যেকোনোভাবে মাটিতে বসে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করতে পারে, তাকে মাটিতে বসেই রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করতে হবে। চেয়ার ইত্যাদিতে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না।

দুই. আর কেউ যদি দাঁড়াতে পারে, কিন্তু কোমর বা হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় সিজদা করার শক্তি না রাখে অথবা সে মাটিতে বসতে পারে, কিন্তু রুকু-সিজদার শক্তি রাখে না, এরূপ লোক মাটিতে বসে নামাজ আদায় করবে। চেয়ার ইত্যাদির ব্যবহার তাদের জন্য উচিত নয়। হ্যাঁ, যদি কোনোভাবেই মাটিতে বসা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তখন চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এ অবস্থায় চেয়ার ব্যবহার করলেও সাদামাটা চেয়ার ব্যবহার করবে। আসলে অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থাভেদে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের বিভিন্ন হুকুম হতে পারে। তাই এ বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য কাম্য নয়।