প্রতীকী ছবি

কেউ যদি কোনো বৈধ, সুন্দর ও ভালো কিছু দেখে মুগ্ধ হন, তখন বরকতের জন্য দোয়া করা ভালো। কিন্তু একই জিনিস বা বস্তু যতবার আমি দেখা হয়, ততবারই কি ‘আল্লাহুম্মা বারিক’ (হে আল্লাহ্‌! বরকত দিন) বলতে হবে? নাকি একবার বলাই যথেষ্ট?

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন। অনেকে কেউ জিজ্ঞেস করেন যে, কয়েকবার না বললে কি গুনাহগার হতে হবে?

এর উত্তর হলো- আল্লাহর রাসুল (সা.) নির্দেশ (উৎসাহমূলক) দিয়েছেন— মুসলিম ব্যক্তি যদি তার মুসলিম ভাইয়ের কোনো কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয়, তখন সে যেন তাদের জন্য বরকতের দোয়া করে।

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয়, সে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে”। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ২/৯৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫/৩৫৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৯)

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বরকতের দোয়া করেনি; বাহ্যতঃ যা প্রতীয়মান সেটা হলো— দৃষ্টিদানকারীর স্বাভাবিকত দুইটি অবস্থা হয়—

এক. সে ব্যক্তি শক্তিমান বিমুগ্ধতার গুণধারী হওয়া। ফলে তার আশঙ্কা লাগে যে, সে তার ভাইকে বদনযরে আক্রান্ত করতে পারে। তাহলে বরকতের দোয়া করা ওয়াজিব। যেহেতু মুসলিম ভাইদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকা একজন মুসলিমের উপর আবশ্যক।

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু/লাহা/আলাইহি/আলাইহা

ইবনুল কাইয়িমিল জাওজিয়্যাহ (রহ.) বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি তার দৃষ্টির মাধ্যমে বদ-নজর হওয়ার বা ক্ষতি করা এবং দৃষ্টিপ্রদত্ত ব্যক্তিকে আক্রান্ত করার আশঙ্কা করে, তাহলে সে যেন اللهم بارك عليه (উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি বা হে আল্লাহ্‌ তাকে বরকতময় করুন) বলার মাধ্যমে ক্ষতিটা প্রতিহত করে। যেমনটা বলেছিলেন আল্লাহ নবী (সা.) আমের বিন রাবিআকে, যখন তিনি সাহল বিন হানিফকে বদনজরে আক্রান্ত করেছিলেন। তুমি যদি ‘আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি’ বলতে।’ (জাদুল মাআদ, হাদিস : ৪/১৫৬)

আল্লামা ইবনে আবদুল বার্‌র (রহ.) বলেন, এটি বলা ওয়াজিব জানিয়ে বলেন— নবী (সা.)-এর বাণী:  أَلَا بَرَّكْتَ (তুমি বরকতের দোয়া করতে) প্রমাণ করে যে, যদি নজরদাতা বরকতের দোয়া করে— তাহলে তার নজর ক্ষতি করে না এবং সীমাও অতিক্রম করে না। বরং যখন ব্যক্তি বরকতের দোয়া করে না, তখন নজর সীমা অতিক্রম করে। তাই যে ব্যক্তি কোনো কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয়, তার উপর বরকতের দোয়া করা ওয়াজিব। কারণ, সে যখন বরকতের দোয়া করে তখন সে অনিষ্টকে প্রতিহত করে; এর ব্যত্যয় ঘটে না।। (আত-তামহিদ : ৬/২৪০-২৪১)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) তার তাফসিরগ্রন্থে (১১/৪০১) আল্লামা ইবনে আবদুল বার্‌র (রহ.)-কে অনুসরণ করেছেন। অনুরূপভাবে ইবনুল মুলাক্কিনও ‘আত-তাওজিহ’ গ্রন্থে (২৭/৪০১) এই মত উল্লেখ করেছেন।

দুই. যদি ব্যক্তি নজরের মাধ্যমে তার ভাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশংকা না করে এবং নিজের থেকে ক্ষতির কোনো ভয় না করে— তাহলে এমন অবস্থায় দোয়া করা ওয়াজিব বলে এই মর্মে আমরা কোনো প্রামণ্যতা পাইনি। তবে বরকতের দোয়া করা জরুরি। কারণ, এটি তার ভাইয়ের প্রতি আন্তরিকতা ও অনুগ্রহ।

-ইসলাম সুয়ালুন ওয়া জওয়াব অবলম্বনে