৪৫০ বছর আগের হাতে লেখা কোরআন দেখতে কেমন

সাড়ে চারশ বছর আগের হাতে লেখা পবিত্র কোরআন। তুরস্কের একটি প্রাচীন মসজিদে এমন একটি কপি পাওয়া গেছে। মসজিদটির নাম ঐতিহাসিক সুলতান সেলিম মসজিদ। এটি দেশটির কারাপিনার জেলার কনিয়ায় অবস্থিত। বিভিন্ন তথ্যের বরাতে বলা হয়েছে যে, ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় সেলিম পবিত্র কোরআনের কপিটি উপহার দিয়েছিলেন— তাতে কোরআনের ১০ পারা লেখা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) তুরস্কের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদমাধ্যমকে কারাপিনার মুফতি ইউনুস আয়দিন বলেন, পবিত্র কোরআনের হাতে লেখা সংস্করণ আবিষ্কারের ঘটনায় তারা অত্যন্ত আনন্দিত। ঐতিহাসিক মসজিদে পবিত্র কোরআনের কপিটি পাওয়া গেছে। মসজিদটি ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় সেলিম তৈরি করেছিলেন। হাতে লেখা কোরআনের কপিটি আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, এতে ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় সেলিম ও কারানপুরের নাম উল্লেখ আছে।

জানা গেছে, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মুসতাফা আসকার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করেন। মুস্তাফা আসকার বলেছেন, ৪৫০ বছর আগে হাতে লেখা কোরআনের কপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথি। এরপর সুলতান সেলিম মসজিদে তা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কোরআনটি দেখতে যেমন। ছবি : সংগৃহীত

মুফতি ইউনুস আয়দিন আরও বলেন, সুলতান সেলিম হান কনিয়ার শাহজাদা ছিলেন। তখন তিনি অনেক রকমের শিল্পকর্ম কিনেছিলেন। তিনি বিভিন্নজনকে উপহারও পাঠাতেন। তা পরবর্তীতে সংরক্ষিত ছিল। কারাপিনারেও তা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন তিনি।  ৪৫০ বছর আগের হাতে লেখা কোরআন দেখছেন কারাপিনার মুফতি ইউনুস আয়দিন ও ঐতিহাসিক সুলতান সেলিম মসজিদে।

পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা হলেও, এখানে শুধু ১০ পারা রয়েছে। কোরআন শরিফটি খুবই সুন্দরভাবে লেখা রয়েছে। প্রচ্ছদের ভেতরে ‘তালিক’ লিপিতে তুর্কি ভাষায় লেখা বাক্যের অর্থ, ‘সুলতান সেলিম হান কর্তৃক কারাপিনার শহরে উপহার হিসেবে পাঠানোর জন্য হাতে লেখা।’ 

পবিত্র কোরআনের কপিটি ‘নাসখ’ লিপিতে লেখা হয়েছে। আর সুরাগুলোর শুরু ও শেষ ‘থুলুত’ লিপিতে লেখা হয়েছে। তবে তাতে লেখক ও লেখার সময়ের কথা উল্লেখ নেই।

যে মসজিদে কোরআনটি পাওয়া গেছে। ছবি : সংগৃহীত

আয়দিন আরও জানিয়েছেন, ‘পাণ্ডুলিপিটির অস্তিত্ব সম্পর্কে কারো জানা ছিল না। বরং দীর্ঘকাল তা গুদামঘরে ছিল। তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা এর সম্পর্কে জানতাম না। আমরা বলতে পারব না, তা পরিপূর্ণ কোরআন কিনা। কোরআনের প্রথম অংশ সুরা ফাতিহা দিয়ে শুরু হয়েছে। তা কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ‘থুলুত’ লিপিতে লেখা এ অংশটি খুবই সুন্দর দেখায়। আমরা এটি মসজিদে প্রদর্শন করব।’ 

জেলা গভর্নর ওগুজ সেম মুরাত জানান, ঐতিহাসিক মসজিদটি স্থাপত্যের দিক থেকে এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কোরআনের সন্ধান আমাদেরকে আবেগাপ্লুত করে। মুফতি ও আমাদের সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় মসজিদের আর্কাইভে মূল্যবান অংশটি পাওয়া গেছে। পবিত্র কোরআনের স্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘কারাপিনার শহরের জন্য সুলতান সেলিম হানের উপহার’। তা ১৫০০ সালের সঙ্গে মিলে যায়।’