ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন কখন পড়তে হয়

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন— কি শুধু মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই পড়তে হয়? এর উত্তর হলো- না, শুধু এই সময় পড়তে হয় না। বরং ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়ার অনেক কারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে।

অনেকে মনে করেন, মানুষের মৃত্যুসংবাদ পেলে কেবল ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়তে হয়। অথচ এই পবিত্র বাক্য আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ রাখার বড় উপায়। তার প্রিয় বান্দা হওয়ার ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের অন্যতম একটি পরিভাষা। এ সম্পর্কে আয়াতটির আগের ও পরের আলোচনা থেকেই তা সুস্পষ্ট।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারা (মুমিনরা) কোন মুসিবতে আক্রান্ত হলে বলে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬)

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনের সংক্ষিপ্ত মর্মার্থ

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, একজন মুমিনের যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ সামনে এলেই বলবে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। মুমিন ব্যক্তির এ কথা বলার অর্থ কেবল মুখে বলা নয়; বরং মনে মনে একথা স্বীকার করে নেওয়া যে, ‘আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন’। তাই আল্লাহর পথে যখন আমাদের যেকোনো জিনিস কোরবানি করা হয়, তা ঠিক তার সঠিক ক্ষেত্রেই খরচ, ব্যবহৃত ও গৃহীত হয়।

আর ‘আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে’— এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল আমাদের এ দুনিয়ায় থাকতে হবে না। একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবেই।

ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন কি শুধু মৃত্যু সংবাদ শুনলে?

শুধু মৃত্যুসংবাদ শুনলে— ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলতে হয়। অথচ এ ধারণা ঠিক নয়। একটি হাদিসে উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো মুমিন ব্যক্তি যখন কোনো বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয় এবং আল্লাহ তাকে যা বলতে বলেছেন (নিচে উল্লেখিত) তা বলে, তখন আল্লাহ তাকে ওই মুসিবতের উত্তম বদলা এবং আগের চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১৮)

দোয়াটির আরবি :

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا

আরবি উচ্চারণ : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।

বাংলা অর্থ : আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এরচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।

আরও পড়ুন : দৈনন্দিন ব্যবহৃত কিছু ইসলামি পরিভাষা

যেসব কারণে ইন্নালিল্লাহ পড়বেন

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা (এসব) বিপদে পতিত হয়, তখন বলে- [ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন] নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সেসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

এ তিনটি আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট। কারা ইন্নালিল্লাহ পড়বেন, কোনো পরিস্থিতিতে পড়বেন এবং পড়লে কী উপকার হবে— তা এখানে উঠে এসেছে।

বর্ণিত আয়াতের আলোকে এ কথা পরিষ্কার যে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কয়েক ধরনের পরীক্ষা করবেন। বিপদ-আপদ (ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্ট) দেবেন। কিন্তু বিপদের এসব মুহূর্তে মুমিন বান্দা সবর করবেন। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলবেন- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এর ফলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী এসব বান্দার প্রতি আল্লাহ অফুরন্ত রহমত ও অনুগ্রহ পাঠাবেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবন সুখময় ও সমৃদ্ধ করুন। সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।