ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন : কলেজজীবনে আমার অনেক বন্ধু এভাবে মান্নত করতো যে, এ পরীক্ষায় পাস করলে বা ফার্স্ট ক্লাসে উত্তীর্ণ হলে আল্লাহর রাস্তায় এত টাকা দান করবো কিংবা এতটা রোজা রাখব। আবার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কেউ কেউ মান্নত করতো, শুকরিয়া আদায়ের জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়বো।

ইদানিং আমার কিছু বন্ধু বলছে, মান্নত করা ঠিক নয়। হাদিসে মান্নত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মান্নতের মাধ্যমে বাস্তবে কোনো উপকার হয় না; বরং এটা গুনাহের কাজ।

আমার জানার বিষয় হচ্ছে, আসলেই এ ধরনের কোনো হাদিস আছে কি না? থাকলে থাকলে হাদিসের অর্থ কী? মান্নত করা কি গুনাহ? বিষয়গুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ওয়াজিব নয়, এমন কোনো নেক কাজকে নিজের উপর ওয়াজিব করে নেওয়াকে মান্নত বলে। মান্নত দুইভাবে হতে পারে—

এক. কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া এভাবে মান্নত করা। অর্থাৎ আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ার মান্নত করছি বা কিছু টাকা সদকা করার মান্নত করছি। এ ধরনের মান্নত করা জায়েজ। এতে অসুবিধা নেই।

দুই. শর্তযুক্ত মান্নত করা। এটা এভাবে হতে পারে যে, আমি পরীক্ষায় পাশ করলে— এত টাকা সদকা করব। অথবা অমুক সুস্থ হয়ে গেলে, দুই দিন রোজা রাখব।

মান্নতের এই প্রকারের প্রতি হাদিসে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত হাদিস সহিহ বুখারি-মুসলিমসহ হাদিসের আরো অনেক কিতাবে বিশুদ্ধ সনদে একাধিক সাহাবির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) মান্নত করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, মান্নত কোনো কিছু ফিরিয়ে দিতে পারে না। মান্নতের মাধ্যমে কেবল কৃপণদের কিছু সম্পদ বের করে আনা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৬০৮)

অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বনি আদমের জন্য যা নির্ধারণ করে রাখেননি, মান্নত তা তাদের জন্য নিয়ে আসতে পারবে না। তবে  কখনো কখনো মান্নত তাকদিরের মোতাবেক হয়ে যায় এবং এর মাধ্যমে কৃপণ লোকদের থেকে এমন সম্পদ বের করে নিয়ে আসা হয়, যা সে বের করতে চায়নি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৪০)

উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদরা দুইটি কথা বলেছেন—

এক. মান্নত তাকদীর পরিবর্তন করে দেয়— এমন বিশ্বাস করে মান্নত করা নিষেধ। দুই. ইবাদতের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্য কাজের সঙ্গে শর্তযুক্ত করা। অর্থাৎ এমন নিয়ত করা যে, আমার এ কাজটি পূর্ণ হয়ে গেলে আমি এত টাকা সদকা করবো। এভাবে কোনো ইবাদতকে শর্তযুক্ত করা অপছন্দনীয় ও অসুন্দর। ক্ষেত্র বিশেষে নিন্দনীয়ও বটে।

অবশ্য মান্নত করার এই পদ্ধতিটি অপছন্দনীয় হলেও এটি গুনাহ নয়। কেউ এমন করে মান্নত করলে, সে গুনাহগার হবে না। ইমাম তাহাবি (রহ.) বলেন, মান্নত করা গুনাহের কাজ, তাই রাসুল (সা.) হাদিসে নিষেধ করেছেন; ব্যাপারটা এমন নয়। (শরহু মাআনিল আছার : ২/৩০৭)

প্রসঙ্গত, হাদিসের উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞাটি হলো- মান্নত করা উচিত কি না— এ বিষয়ে। তাই কেউ মান্নত করে ফেললে, তার জন্য সেটা পূর্ণ করা ওয়াজিব। পবিত্র কোরআন-হাদিসে মান্নত পূর্ণ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কোরআন মজিদে সৎলোকদের বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘তারা মান্নত করার পর তা পূর্ণ করে। (সুরা দাহর, আয়াত :  ০৭)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের মান্নত করে, তাহলে সে যেন সেটা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৯৬)

লক্ষণীয় যে, হাদিসে যে মান্নত পূর্ণ করার কথা এসেছে, তা হচ্ছে ভালো কাজের মান্নত। কোনো গুনাহের কাজের মান্নত নয়। গুনাহের কাজের মান্নত করা সম্পূর্ণ হারাম; তা পূর্ণ করাও হারাম। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আর যে কোনো গুনাহের মান্নত করল, সে যেন গুনাহটি না করে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬৯৬)

তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারি : ১১/৫৮৭; শরহু মাআনিল আছার লিত-তাহাভি : ২/৩০৭; মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৫৪৩; বাজলুল মাজহুদ : ১৪/২৪৬

প্রশ্নটি করেছেন : রবিউল ইসলাম  সোহাগ, মালিবাগ, ঢাকা।

ঢাকা পোস্টের ইসলাম পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠাতে মেইল করুন: dhakapostislam@gmail.com