প্রতীকী ছবি

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। তবে এ ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো, ইবাদতকারী বৈধপন্থায় জীবিকানির্বাহ করতে হবে। অবৈধ উপার্জনে জীবনযাপন করলে শারীরিক ও আর্থিক কোনো প্রকার ইবাদতই কবুল হবে না।

বৈধ উপায়ে আত্মকর্মসংস্থানের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সালাত সম্পন্ন হলে তোমরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ো। আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সুরা জুমা, আয়াত : ১০)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমাদের উপার্জিত পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৭)
 
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্রগুলো আহার করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)

পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ করো, তার ইবাদত করো এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তারই কাছে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ১৭)

নবীজি (সা.) অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। নিজে কর্মব্যস্ত থাকতেন এবং সঙ্গীদের হালাল জীবিকা উপার্জনের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বৈধ পন্থায় জীবিকা অর্জনের তাগাদা দিয়ে বলেন, ‘বৈধ জীবনোপকরণের তালাশ করা অন্যান্য ফরজের সঙ্গে আরেকটি ফরজ।’ (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ৯৯৯৩)

নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্য আহার করাই প্রকৃত সম্মানের জীবন। এতে আত্মতৃপ্তি ও প্রশান্তি মিলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা জ্বালানি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নিয়ে আসা উত্তম;  কারও কাছে চাওয়ার চেয়ে । চাইলে প্রার্থীত ব্যক্তি কখনও দিতেও পারে, আবার নাও পারে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭৪; মুসলিম, হাদিস : ১০৪২)

রিজিক অন্বেষণের সাধনায় কোনো পেশাই ছোট নয়। কোনো হালাল কাজকে অবজ্ঞা করা যাবে না। বরং সকল বৈধ কাজই উত্তম। নবী-রাসুলগণ শ্রমিক হিসেবে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন, ছাগল চরাতেন। আদম (আ.) নিজে  ছিলেন একজন কৃষক। জমিতে ফসল ফলাতেন। নিজ হাতে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন। তার এ কাজে স্ত্রী হাওয়াও সাহায্য করতেন। দুই জাহানের সরদার নবীজি (সা.)-ও অল্প কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীর ছাগল চরাতেন। নবীজি বলেন, ‘ব্যক্তি নিজ হাতে উপার্জনের খাবারের ছাড়া উত্তম কোনো খাবার খেতে পারে না। দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।’ (বুখারি, হাদিস :২০৭২)

ইসলাম একদিকে সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মের নির্দেশনা দিয়েছে। অপরদিকে দিয়েছে, কর্মজীবীদের সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ ও ন্যায়সঙ্গত পারিশ্রমিক প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার শ্রমের মূল্য চুকিয়ে দাও।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩)

আমরা এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে জানলাম যে, ইসলাম প্রথাগত বৈরাগ্যবাদের ধর্ম নয়। ঘর-সংসার ছেড়ে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানোর সুযোগ ইসলামে নেই। বরং  এ ধর্ম আলস্য ও কর্মবিমুখতা বিরোধী। এখানে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রচেষ্টাকে ইবাদত বলে গণ্য করা হয়। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী হালাল রিজিক তালাশ করা প্রত্যেক মানুষের ওপর ফরজ। আর শরিয়তের বিধাবনাবলি মেনে প্রাত্যহিক কাজকর্ম ঠিক মতো পালন করলে তা-ও ইবাদত বা সাওয়াব ও পুণ্যের কাজ বলে গণয় হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বৈধ পথে উপার্জন করার ও হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। আমিন। 

এম. এ. ইউসুফ আলী।। মাস্টার্স, অধ্যয়নরত আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মেইল : yousufngn@gmail.com