প্রতীকী ছবি

মুমিন মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে। সত্যের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলে। অন্যায়ের বিপক্ষে অপ্রতিরোধ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। মানবতার জন্য লড়ে যায়। এটা জীবনকে সুসংহত ও বলিষ্ঠ করে। বিপুল সওয়াবে অভিষিক্ত করে এবং জান্নাতের উপযুক্ত করে তোলে।

এক. অসহায়ের সহায়তায় এগিয়ে আসা

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ জান্নাতবাসীদের নিদর্শনগুলো আলোচনা করতে গিয়ে মানবিকতার কথা উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও সে খাবার অসহায়, এতিম ও বন্দিদের খাওয়ায়।’ (সুরা দাহার, আয়াত : ০৮)

অর্থাৎ প্রকৃত মুমিনরা মানবিক হয়, এর পুরস্কার জান্নাত। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে, সে মুমিন নয়। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১১)

দুই. মানবিক গুণ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক

মানুষের যেকোনো বিপদে মুমিনরা এগিয়ে আসেন। কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা করে। কারণ তারা জানে, মানুষের সেবা করেই আল্লাহকে পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি যদি মানুষকে কষ্ট দেয়, কিংবা কেউ সাহায্য চাইলে সাধ্য থাকা সত্ত্বেও তার সহযোগিতা না করে, তাহলে মহান আল্লাহ রাগান্বিত হবেন। কারণ মহান আল্লাহ অমানবিক লোকদের পছন্দ করেন না।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রূষা করোনি। সে বলবে, হে পরোয়ারদিগার, আমি কী করে তোমার সেবা-শুশ্রূষা করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করোনি, তুমি কি জানতে না যে তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করলে আমাকে তার কাছেই পেতে।... (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৫০)

তিন. দুনিয়া ও আখিরাতে পুণ্য লাভ

মানবিকতা এতটাই মহৎ গুণ যে এর পুরস্কার দুনিয়াতেও পাওয়া যায়। যারা অন্যের সাহায্যে আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রাণ হয়, মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করেন।

রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপৎসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো দরিদ্র ব্যক্তির সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবে, আল্লাহও তার দোষ-ত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬৯)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)

তাই আমাদের সবার উচিত মানবিক হওয়ার চেষ্টা করা। মানুষের প্রতি সদয় হওয়া। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ আমাদের জীবনকে সহজ করে দেবেন।