মেহমানদারিকে উত্তম গুণ বলে শরিয়তে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নবিজি (স) মেহমানের সম্মান করতে তাকিদ দিয়েছেন। মেহমানের যথাযথ আপ্যায়ন ও কদর করা একজন মুসলমানের ইমানি কর্তব্য। পাশাপাশি মেহমানেরও মেজবানের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে।

মেহমানদারি সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সমাদর করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে মেহমানদারি করে না, তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস :১৭৪১৯)

মেজবানের প্রতি মেহমানের যে দায়িত্ব এবং কারও ঘরে-বাসায় মেহমান হলে যেসব আদব ও নিয়ম-নীতি লক্ষ্য রাখা উচিত— সেগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

এক. চক্ষু সংযত রাখা ও দৃষ্টি অবদমিত রাখা

আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

দুই. আওয়াজ ও কণ্ঠস্বর নিচু রাখা, অহেতুক চিল্লাপাল্লা না করা

লোকমান (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রেখো। নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গাধার কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯)

তিন. খাবার শেষ হলে মেহমান এই দোয়া পাঠ করা

আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফি-মা রাজাকতাহুম। ওয়াগফির লাহুম ওর্হামহুম।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৪২)

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাদের রিজিকে বরকত দান করুন, তাদের ক্ষমা করুন এবং তাঁদের ওপর অনুগ্রহ করুন।

চার. খাবার শেষে কোনো কাজ না থাকলে চলে যাওয়া

অহেতুক বসে থেকে মেজবানের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। মহানবী (সা.)-এর এক ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘খাওয়াদাওয়া শেষে তোমরা চলে যাও। তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়। সে তোমাদের উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)

পাঁচ. দীর্ঘ সময় বা দীর্ঘদিন থেকে মেজবানকে বিরক্ত না করা

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। মেহমানের পারিতোষিক (বিশেষ মেহমানদারি) এক দিন ও এক রাত। (স্বাভাবিক) মেহমানদারি তিন দিন। এর অতিরিক্ত মেহমানদারি সদকাস্বরূপ। মেহমানের জন্য বৈধ নয় যে সে মেহমান হতে হতে মেজবানকে বিরক্ত করে ফেলবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৫; মুসলিম, হাদিস : ৪৮)