প্রতীকী ছবি

বাবা-মা একজন সন্তানের সবচেয়ে কাছের মানুষ। উভয়ে সম্পূর্ণ আলাদা সত্তা হলেও দুইজন একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা অসামান্য। কারও অবদান কারও চেয়ে কম নয়। তাদের মৃত্যুর পর সন্তানের বেশকিছু করণীয় রয়েছে। এসব পালনের মাধ্যমে সন্তানরা তাদের জন্য আখিরাতে সহায়ক হবে।

মৃত্যুর পর মানুষের আমলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যে মা-বাবা নেককার সন্তান রেখে কবরে যান, মৃত্যুর পর তার নেকি অর্জনের পথ বন্ধ হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ছাড়া—সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম (জ্ঞান), যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১; তিরমিজি, হাদিস : ১৩৭৬)

মৃত্যুর পরও যেসব আমলের সওয়াব পেতে থাকে

মানুষ মারা গেলে বরজখি তথা কবরের জীবনে থাকে। সেখানে সাতটি আমলের প্রতিদান অব্যাহত থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় বান্দার সাতটি আমলের প্রতিদান অব্যাহত থাকে, (১) যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষা দেবে অথবা (২) নদী খননের ব্যবস্থা করবে অথবা (৩) কূপ খনন করবে অথবা (৪) কোনো খেজুরগাছ রোপণ করবে অথবা (৫) মসজিদ নির্মাণ করবে অথবা (৬) কোরআন কাউকে দান করবে, অথবা (৭) এমন কোনো সন্তান রেখে যাবে, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৭২৮৯; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ৭৩)

মৃত্যুর পর যেসব আমলের প্রতিদান চলমান

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সঙ্গে যুক্ত হয় তা হলো : (১) যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, (২) তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, (৩) কোরআন, যা সে ওয়ারিশি সূত্রে রেখে গেছে অথবা (৪) মসজিদ, যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা (৬) পথিক-মুসাফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা (৭) পানির নহর, যা সে খনন করেছে অথবা (৮) তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার সম্পদ থেকে যে দান-খয়রাত করেছে, তা তার মৃত্যুর পরও তার সঙ্গে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪১)

নেক সন্তানের দোয়ায় মা-বাবার মর্যাদা বৃদ্ধি

মা-বাবা একজন নেক সন্তানের আন্তরিক ও একনিষ্ঠ দোয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। তারা নেক সন্তানের মাধ্যমে সমাজের বুকে যেমন সম্মানিত হন, তেমনি আখিরাতেও তাঁদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ জান্নাতে নেককার বান্দার মর্যাদা বুলন্দ করবেন, তখন সে বলবে, হে আমার রব, কেন আমার জন্য এই উচ্চ মর্যাদা? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১০৬১০)

অর্থাৎ পিতার জন্য নেক সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে সেই পিতাকে আল্লাহ জান্নাতের উচ্চাসন দান করবেন।