ওসমানী মিলনায়তনে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের মিলনমেলা বসেছিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার পেয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের ক্রীড়াবিদরা সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন অতীতের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ। বয়সের ভার ও শারীরিক অসুস্থতায় কিছুটা দুর্বল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। স্বাধীনতার সময় ফুটবল মাঠে পিন্টুর পাশে ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। জীবনের সায়াহ্নেও একই সাথে দুই কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদ। 

ক্রীড়া সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া কাশীনাথ বসাকের সাথে খুনসুটির সুরে প্রতাপ,‌ ‘কিরে কাশী, পুরস্কার পাইলি, অনুষ্ঠান করবি কবে?’ নিকট দূরে দাড়িয়ে থাকা বাস্কেটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকার বলছিলেন,‌ ‘দাদার অনুষ্ঠান আমরাই  করব।’ কাশীনাথ বসাকের সাথে দীর্ঘদিন বন্ধুত্ব সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালামও বেশ উচ্ছ্বাস করেন তার এই প্রাপ্তিতে।

প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ক্রীড়াঙ্গনের প্রিয় মুখ সাংবাদিক কাশীনাথ বসাক। দৈনিক ইত্তেফাকে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করেছেন দুই যুগের বেশি। ইত্তেফাক ছেড়ে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দৈনিক সংবাদে এখন কর্মরত রয়েছেন দশ বছরের বেশি। সাংবাদিকতা শুরুর আগে করেছেন ক্রিকেটের আম্পয়ারিং ও স্কোরিং। জীবনের বেশি সময় খেলার মাঠ ও পত্রিকা অফিসে কাটিয়ে দেয়ার পর মিলল স্বীকৃতি। 

মৃদুভাষী সদাহাস্যজ্জ্বোল কাশীনাথ বসাক স্বল্পভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন এভাবে,‌ ‘৪৩ বছরের কাজের স্বীকৃতি পেলাম। শেখ কামাল একজন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক। তার নামকরণের পুরস্কার পাওয়ায় আরো বেশি ভালো লাগছে।’ 

সাংবাদিকরা ক্রীড়াঙ্গনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়। এর স্বীকৃতি তেমন মেলে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্রীড়া সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করায় বিশেষ ধন্যবাদ দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান সাংবাদিক,‌ ‘আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে মন্ত্রণালয়, এনএসসিকে সাংবাদিকদের সম্মাননা দিতে দেখিনি। গত বছর থেকে শুরু হয়েছে এই ধারা। এজন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে ধন্যবাদ জানাই।’

ক্রীড়াঙ্গনের বিশিষ্ট সংগঠক হারুনুর রশীদ পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। ১৯৯৬ সালে ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারই পেয়েছেন তিনি। এরপরও এই আজীবন সম্মাননাকে তিনি বিশেষ মর্যাদা দিলেন,‌ ‘কামাল না থাকলে আবাহনী ক্রীড়া চক্র হতো না। শেখ কামালের নামে এই পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত।’ 

সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পাওয়া স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম পরিকল্পনাকারী সাইদুর রহমান প্যাটেলের প্রতিক্রিয়াও একই রকম। বলেছেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে শেখ কামালের নামে পুরস্কার পেয়েছি।

মাস তিনেক আগে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছিলেন ভারত্তোলক কাজল দত্ত। আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার পেলেন তার স্ত্রী মোল্লা সাবিরা। কৃতি এই ভারত্তোলকের অনুভূতি একটু ভিন্ন রকম,‌ স্বামী-স্ত্রী দুই জনই কিছু দিনের মধ্যে পদক পাওয়ায় ভালো লাগছে। ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। আব্দুল্লাহ হেল বাকী আজকে তার এই স্বীকৃতি পুরো শুটিংয়ের জন্য আনন্দের মনে করছেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগছে। তবে মনে করি শুটিং অঙ্গনের জন্য আজকের দিনটি বেশ খুশির।’ 

উদীয়মান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া অলিম্পিয়ান আরচ্যার দিয়া সিদ্দিকী আজকের স্বীকৃতির মাধ্যমে অনুপ্রেরণা খুঁজছেন,‌ ‘দেশকে আরো ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা করব।’ ক্রীড়াবিদ ও উদীয়মান ক্রীড়াবিদ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া ক্রীড়াবিদরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে অবসরের পর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়ার আশা করছেন।