ঋতুতে বসন্ত হলেও মধ্য ফাল্গুনে দুপুরের তপ্ত রোদে টানা ৫-৬ ঘণ্টা, এই অবস্থায় একই আসনে বসে খেলা দেখা কি মোটেও সহজ? ডাইনিং রুমের সোফায়, টেলিভিশন সেটের সামনে বসে খেলা দেখলে এর অনুভূতি পাওয়ার কথা নয়। যে অনুভূতিটা হচ্ছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ইস্টার্ন গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের মধ্যকার দ্বিতীয় ওয়ানডে দেখতে আসা শাহ আলমের।

গ্যালারিতে বসে মাথায় উপরে ছোট একটি প্ল্যাকার্ড ধরে রেখেছেন তিনি। রোদের তাপ থেকে পরিত্রাণের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ফল হচ্ছে না খুব একটা। একটু পর পরই সেই প্ল্যাকার্ড মাথা থেকে সরিয়ে বাতাস করছেন, তাতে যদি একটু শরীরের ঘাম শুনানো যায় কিছুটা, খানিক স্বস্তি মেলে। স্বস্তি মিলছে না কড়া রোদে। সেটি মাথা থেকে বেশিক্ষণ সরিয়েও রাখতে পারছেন না শাহ আলম।

বেশ অভিযোগের সুরেই শাহ আলম বলছিলেন, ‘মিরপুর স্টেডিয়ামে খেলা দেখেছি। সেখানে একটি গ্যালারি বাদে সব জায়গায় ছাউনি আছে। চট্টগ্রামে আজ প্রথমবার খেলে দেখতে এসে তো বিপদে পড়েছি। এখানে গ্যালারির উপরে ছাউনি নেই। নিচে গিয়ে যে দাঁড়াবো কিছুক্ষণ, সেখানে তো দাঁড়ানোরও জায়গা পাচ্ছি না। আর কতক্ষণই বা দাঁড়িয়ে থেকে খেলা দেখা যায়? বাধ্য হয়ে এই রোদের মধ্যেই বসে আছি।’

গত নভেম্বর মাসে পাকিস্তান সিরিজের একটি টেস্ট হয়েছিল চট্টগ্রামে। সে সময় বেশ সমালোচনা হয় ভাঙা চেয়ার নিয়ে। গ্যালারিতে দর্শক থাকলেও তারা বসতে পারেননি চেয়ারে। স্টেডিয়ামের প্রায় প্রতিটি চেয়ার ছিল ভাঙা। সে চেয়ারে বসতে গিয়ে অনেকেই পোশাক ছিঁড়ে বাড়ির পথ ধরেন। পরে সমালোচনার পর বসেছে নতুন চেয়ার। এখন রংবেরঙের নতুন চেয়ার শোভা পাচ্ছে গ্যালারিতে। সেই পাকিস্তান সিরিজের পরেই বসানো হয় চেয়ারগুলো।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ছিল না দর্শক উপস্থিতি। এবার আফগান সিরিজে দর্শক ফিরেছে। ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দর্শক প্রবেশের অনুমতি ছিল ৪ হাজারের মতো। সেটি দ্বিতীয় ম্যাচে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দশ হাজার। নতুন চেয়ার, দর্শক ফিরলেও দুর্ভোগ কমছে না!

সাজিদ হাসান নামের এক সমর্থক এসেছেন পরিবার নিয়ে। সঙ্গে ছোট বাচ্চা আছে তার। আক্ষেপ ঝরল তার কণ্ঠে, ‘এভাবে কি রোদের মধ্যে বসে খেলা যায়! শুক্রবার ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে এসেছি খেলা দেখতে। সঙ্গে ছোট বাচ্চা আছে। এই রোদের মধ্যে তো বেশিক্ষণ বসে থাকা যাচ্ছে না। এই অভিযোগ করব কোথায়?’

দর্শকদের এমন অভিযোগ নিয়ে চট্টগ্রামের ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারি রুবেলের কাছে গেলে, নিরুপায়ের কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি) দেখিয়ে দিয়ে বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ভালো বলতে পারবে এই বিষয়ে।

বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু মুঠোফোনে বললেন, ‘আসলে এই বিষয়টা নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে ওভাবে আলোচনা হয়নি। আমাদের প্রায় সবগুলো স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। ক্রিকেট বোর্ডের আন্ডারে শুধু খেলাগুলো পরিচালনা করার জন্য দেওয়া হয়েছে। বাকি যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সব এনএসসির। তবে দর্শকদের চাহিদা যদি থাকে তবে সেটি নিয়ে অবশ্যই কাজ করা হবে। আমরা এনিয়ে কথা বলব।’

টিটু এ ম্যাচে স্টেডিয়ামে উপস্থিত না থাকলেও সিরিজের প্রথম ম্যাচে ছিলেন। তিনি নিজেও দেখেছেন এমন পরিস্থিতি। গ্যালারি ছেড়ে নিচের দিকে একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছেন সমর্থকরা। যেখানে রোদের তাপ গিয়ে পৌছায় না। তবে চাইলেই এখনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিসিবি।

টিটু বললেন, ‘আমি নিজেও দেখেছি সেদিন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দর্শকরা নিচে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে। আস্তে আস্তে বেলা যখন গড়িয়েছে সূর্যের তাপ কমে এসেছে, তখন সবাই আবার গ্যালারিতে ফিরেছে।’

যোগ করেন টিটু, ‘আমাদের যদি সুযোগ বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে তাহলে আমি মনে করি আমাদের অবশ্যই সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তবে ক্রিকেট বোর্ডে আমাদের বেশকিছু বিষয় এখানে আছে। এনএসসি এগিয়ে না এলে আমরা করতে পারবো কিনা সেটিও একটি বিষয়। কারণ আমরা করতে চাইলেও এনএসসি করতে দিবে কিনা।’

গরমে অতিষ্ঠ আর দুর্ভোগ থাকলেও প্রিয় বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার সুযোগ ছাড়তে নারাজ সমর্থকরা।

টিআইএস