নবাগত মুনিম শাহরিয়ার নেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, আড় চোখে তাকিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত। তার এই চাহনির অনেকরকম ভাষা আছে! তবে আপাত দৃষ্টিতে শান্ত যেন পরাজিত দলের সদস্য। খানিক আগেই চ্যালেঞ্জ হেরেছেন মুনিমের কাছে। তবে তিনি যেন আরেক দফা চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব জানালেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত ব্যাটিং করে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়া এই ডানহাতি ওপেনারকে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে থেকেও প্রথম দুই ম্যাচের একাদশে জায়গা পাননি শান্ত। শেষ ম্যাচেও যে তাকে একাদশের বাইরে থাকতে হবে, সেটি একপ্রকার নিশ্চিতই। শেষ মুহূর্তে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে শান্তর জায়গা হবে সাইড বেঞ্চে। ব্যাট হাতে বর্তমান সময়টা ভালো না যাওয়া বাঁহাতি ওপেনার এবার টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হারিয়েছেন। শান্তর বদলে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পেয়েছেন বিপিএলে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা মুনিম।

আজ (রোববার) ওয়ানডে দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনে হাজির টি-টোয়েন্টি দলের ক্রিকেটাররা। যারা ওয়ানডে দলের স্কোয়াডে নেই। এদিন অবশ্য আগেই টুকটাক ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নেন শান্ত। অনুশীলন সেশনের শেষ ভাগে নেটে ব্যাট করতে নামেন মুনিম। নবাগত মুনিমকে দেখে নেটে এগিয়ে এলেন শান্ত। বল হাতে তুলে নিলেন তিনি। শুরু হলো এই দুজনের স্নায়ুযুদ্ধ।

মুনিমকে উদ্দেশ্য করে শান্ত বললেন, ‘আমাকে না মারতে (ছয়) চেয়েছিলি?’ মুনিমের জবাব, ‘এখানে না, সেন্ট্রাল উইকেটে।’ শান্ত চ্যালেঞ্জের বার্তা দিয়ে বললেন, ‘(নেটের) সামনে অনেক জায়গা আছে।’ মুনিম অবশ্য কোনো জবাব দিলেন না। পরক্ষণে শান্তর অফ স্পিন স্লটে পেয়ে মিড অনে হাঁকিয়ে দিলেন মুনিম। বল গিয়ে আছড়ে পড়ল গ্যালারিতে।  মুনিমের চোখে বিজয়ীর হাসি। শান্ত তবুও যেন পরাজয় মানতে নারাজ!

মূলত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ দিয়ে উত্থান মুনিমের। গতবার আবাহনী লিমিটেডের হয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করে নজর কাড়েন তিনি। সে দলের হয়েই শিরোপা জেতেন শান্ত। এবার বিপিএলেও দু’জন খেলেছেন একই দলে, ফরচুন বরিশালের পক্ষে। যেখানে মুনিমকে ওপেনিংয়ে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে শান্তকে। এবার জাতীয় দলেও কি শান্তর জায়গা নেবেন মুনিম? সে আঁচ পেয়েই কি স্নায়ুযুদ্ধে জড়ালেন শান্ত?

সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তোলা থাকল ভবিষ্যতের জন্য। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে টি-টোয়েন্টিতে শান্তর চেয়ে এগিয়ে মুনিম। নির্বাচকরা তার বার্তা দিয়েছেন আফগানদের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মুনিম মূলত সুযোগ পেয়েছেন তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ধরনে। আজ সহ দুদিন অনুশীলন করলেন জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সিতে। নেটেও ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন দুই দিনই।

আফগানদের বিপক্ষে একদিনের সংস্করণে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। এই অনুশীলন দেখে মনো হলো, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়েই যত ভাবনা টাইগার শিবিরে। মুনিম যেমন প্রতিটি বলই বাউন্ডারি আছড়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন, পাওয়ার হিটিং ঝালিয়ে নিয়েছেন কুঁড়ি ওভারের ফরম্যাটের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও। 

তবে নাঈম শেখ ছিলেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ব্যাটিং কৌশল ঝালিয়ে নেন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছ থেকে। ডমিঙ্গোও তাকে শটস খেলতে না দিয়ে বলেছেন, স্ট্রাইক রোটেটে মনযোগ দিতে। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল আপাতত টি-টোয়েন্টি খেলবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে বর্তমানে ওয়ানডেতে রান খরায় ভুগছেন তামিম। সিরিজের তৃতীয় ও ম্যাচে রানে ফিরতে মরিয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

এদিকে সাদা বলের ফরম্যাটে ডাক পেলেও অনুশীলনে বল হাতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না এবাদত হোসেনকে। ব্যাটিংয়েই পূর্ণ মনোযোগ তার। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অন্যতম সদস্য এবাদত। এই ফরম্যাটে ব্যাট করতে নেমে ১৮ ইনিংসে আউট হয়েছেন ৯ বার। যেখানে ৫ বারই ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগে। ৪ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ রান আছে তার নামের পাশে। বাকি ৯ ইনিংসে নট আউট, তবে পাননি রানের দেখার।

এজন্য এখন অনুশীলন নিয়ম করে ব্যাটিং করেন এবাদত। টাইগারদের নতুন ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্সের কাছ থেকে প্রতিদিন অনুশীলনে অন্তত ১০ মিনিট সময় চেয়ে নিয়েছেন। সিডন্সও কথা রাখছেন, প্রতিদিনই এবাদতকে দিচ্ছেন বাড়তি সময়। তবে আজ সিডন্সের চেয়ে স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গেই বেশি কাজ করলেন এবাদত। নেট অনুশীলনে দুই জন মাতলেন খুনসুটিতে। এমনকি বোলার হেরাথ চ্যালেঞ্জ জানালেন এবাদতকে।

চ্যালেঞ্জ ২ ওভারে নিতে হবে ১০ রান। কাল্পনিক ফিল্ডিং সাজিয়ে বোলিং শুরু করলেন হেরাথ, সঙ্গে এক জন নেট বোলার। প্রথম ২ বলে সিঙ্গেল, পরের বলে ছক্কা হাঁকালেন এবাদত। পরের ৩ বলে রান বের করতে পারেননি এবাদত। এভাবে শেষ বলে সমীকরণ দাঁড়ায়, ১ রান করলে জিতবেন এবাদত। সে বলটি কাট করে এবাদতের মুখে জয়ের হাঁসি। শিষ্যকে জিতিয়ে নিশ্চয়ই নিজেও জিতে গেছেন হেরাথ।

টিআইএস/এটি/এনইউ