জয়ের খুব কাছে গিয়েও জেতা হলো না মমিনুলদের/ ছবি: বিসিবি

সংক্ষিপ্ত স্কোর
উইন্ডিজ  ৪০৯ ও ১১৭ (বোনার ৩৮, জশুয়া ২০; তাইজুল ৪/৩৬)
বাংলাদেশ  ২৯৬ ও ২১৩ (তামিম ৫০, মিরাজ ৩১; ব্র্যাথওয়েট ১০৫/৪)
ফল- উইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী
সিরিজ- উইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচসেরা- রাকিম কর্নওয়াল
সিরিজসেরা- এনক্রুমাহ বোনার

ঢাকাতেও সেই চট্টগ্রামের দুঃস্বপ্ন। এবারও জয়ের কাছে গিয়ে পথ হারাল দল। এটা কি তবে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ভলোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা উপহার! বাসন্তী রঙে সেজেছে গোটা বাংলাদেশ। ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে বসন্ত বরণ, দুয়ে মিলে গোটা দেশটাই তো আজ রোববার উৎসবে মাতোয়ারা। এমন দিনেও বিষাদের সুর। টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চটা একপাশে রাখলে বসন্তের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। রঙহীন, বিবর্ণ, ছুঁয়ে গেল বিষাদের সুর।

হঠাৎ কি এমন হলো এই দলটার? চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে তো মুমিনুল দরাজ কণ্ঠে বলেছিলেন, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্ণ ১২০ পয়েন্টে চোখ লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। দুই ম্যাচই জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খালি হাতে ফেরাতে না পারলে ফলটা বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। মুমিনুলের সেই প্রতিশ্রুতি তো আগেই পণ্ড হয়ে গেছে, নিজের কথা রাখতে পারলেন কই মুমিনুল!

সিরিজ শুরুর আগে চোখ রাখা যাক, ক্যারিবীয়রা যখন বাংলাদেশ সফরের জন্য দল ঘোষণা করলো। সেখানে প্রথম সারির অনেক ক্রিকেটার নাম না দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করেন টাইগার সমর্থকরা। অধিনায়ক মুমিনুল তো ছিলেন আরও এক কাঠি সরেস, আক্ষেপ নয়, হতাশার বাণী দিয়ে বসলেন তিনি। সে হিসেবে তো উইন্ডিজের এই দলটার বিপক্ষে হেসেখেলে জেতার কথা টাইগারদের।

১২০ পয়েন্টের ৬০ পয়েন্ট আগেই শেষ হয়েছে চট্টগ্রামে। ঢাকা টেস্ট জিতে বাকি ৬০ পয়েন্টে চোখ ছিল স্বাগতিকদের। সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম জয়ের স্বাদের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার পালা আরও বড় হলো ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দলের কারণে। আসল টেস্ট টেম্পারম্যান্ট টাইগারদের বুঝিয়ে দিয়ে গেল ক্যারিবীয়রা। তাতে কি কিছুটা হলেও শিখবে বাংলাদেশ? সে হিসেব কষলে তো শেখার কথা ছিল আরও আগেই।

অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল হতাশাই উপহার দিলেন শুধু, আক্রমণাত্মক অধিয়াকত্বের বুলি আউড়িয়ে সেই চিরাচরিত রক্ষণাত্মক মন্ত্রে বিশ্বাসী হলেন তিনি। তার বোলিং রিপ্লেসপেন্ট থেকে শুরু করে ফিল্ড সেটাপ, সবকিছুর পাশেই প্রশ্ন মার্ক বসেছে। ঢাকা টেস্ট শেষের আগে টেলিভিশন ক্যামেরা বারবার খুঁজে নিল ড্রেসিংরুমে বসা অধিনায়কের চেহারা। মুমিনুলের মলিন মুখখানি একেবারেই ফ্যাকাসে দেখালো। অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন তিনি?

অধিনায়ক মুমিনুল ছাড়াও দায় আছে টিম ম্যানেজম্যান্টের। এক পেসারের গোঁড়ামি আর ব্যর্থ শান্তকে বারবার সুযোগ, ১৮ সদস্যের স্কোয়াড থেকেও চোটে পড়া সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে সৌন্যকে দলে নিয়ে খেলিয়ে দেওয়া। মান রাখতে পারলেন কি সৌম্য? সেই দায়টা আসলে কে নিবে?

বার বার ব্যাট হাতে ব্যর্থ সৌম্য। ওয়ানডে সিরিজে তাকে তিনে খেলাতে পরীক্ষিত সাকিবকে এক ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়। সেই শান্ত পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে ৩ ম্যাচ খেলে করেন সর্বসাকুল্য ২৯ রান। দুই টেস্টের ৪ ইনিংসে করেন ৪০ রান, সর্বোচ্চ ২৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। মিরাজ ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ফিরিস্তি টেনে শেষ করা যাবে না।

ঢাকা টেস্ট জেতার জন্য ২৩১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল উইন্ডিজ। কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব কিছু ছিল না, সেটি তো ব্যাটসম্যানরাই বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। সবার আউট হয়েছেন উইকেটে সেট হওয়ার পর। এতে উইকেটের সঙ্গে ক্যারিবীয় স্পিনারদের কৃতিত্ব থাকলেও দায় এড়াতে পারেন না টাইগার ব্যাটসম্যানরা।

ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের সুবাস ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তামিম। তবে ৫০ করেই নিজের দায়িত্ব শেষ ভেবে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন তিনি। সৌম্য, শান্ত, মুশফিক, মিঠুন কেউই প্রতিরোধ গড়তে পারলেন না। মুশফিক তো ছিলেন আরও কাণ্ডজ্ঞানহীন, ওয়ারিক্যানের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েও তিনি সন্দিহান, বল বোধহয় ব্যাটে ছোঁয়নি। আধুনিক ক্রিকেটে অবশ্য এসব ধোপে টেকে না। স্পষ্ট হয়ে গেল টেলিভিশন রিপ্লেতে।

লিটনকে আউট করে বিজয় উল্লাসে মাতলেন কর্নওয়েল। দলে তার যে ভূমিকা ছিল, সেটি ভালোভাবেই পূরণ করেছেন এই অফ স্পিনার। উইকেট উদযাপনে কর্ণওয়েলের কাঁধে চেপে বসলেন সতীর্থরা। পুরো ম্যাচের প্রতীকী ছবি হয়ে থাকলো সেটি। শেষ বিকেলে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও আলোচনা সাপেক্ষে ৩০ মিনিট বেশি খেলা হয়। তখন লড়াই চালিয়েছেন মিরাজ। সঙ্গে পেয়েছেন রাহিকে। দুজনের পার্টনারশিপের শেষ ৩৫ বলে টেস্ট ক্রিকেটে আসল রোমাঞ্চ উপহার দেন মিরাজ। শেষপর্যন্ত আশা জাগিয়েও পারলেন না তিনি। ১৭ রানে জয় উইন্ডিজের।

এই জয়ের ফলে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ঘরের মাঠে ক্যারিবীয়দের কাছে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ নিতে হলো বাংলাদেশ দলের।

টিআইএস/এটি/এনইউ