জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়েই হাতেখড়ি হয় ক্রিকেটারদের। দেশের জার্সি পড়ে মাঠে নামার রোমাঞ্চ নিয়ে বেড়ে ওঠেন প্রত্যেক ক্রিকেটার। মনের মাঝে ইচ্ছে থাকে বিশ্ব দরবারে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। ওই ইচ্ছা পূরণে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করেন।

কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার মধ্য থেকে উঠে আসা তেমনি একজন বল হাতে চমক দেখিয়েছেন প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। একাই নিয়েছেন ৮ উইকেট। বলছি রংপুরের শেখ ইমতিয়াজ শিহাবের কথা।

জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রংপুরে। পড়েন রংপুর শিশু নিকেতন হাইস্কুলে। দুই ভাই ও বাবা-মাকে নিয়ে তার পরিবার। ইংরেজির প্রভাষক বাবার ইচ্ছেতেই ক্রিকেটে আসা বলে জানান শিহাব। ক্রিকেট খেলায় সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জোগায় তার বাবা-মা ও কোচ নাজিম আজাদ মুন্না। শিহাব রংপুর পান্থকুঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির ছাত্র।

ডানহাতি এই লেগ স্পিনারের আইডল আফগানিস্তানের ক্রিকেটার রশিদ খান। দেশের ক্রিকেটে পছন্দের তালিকার শীর্ষে আফিফ হোসেন ধ্রুব। এছাড়াও ভারতীয় খেলোয়াড় ভিরাট কোহলি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এ বি ডি ভিলিয়ার্সের খেলাও তিনি দারুণ উপভোগ করেন।  

ম্যাচে ৮ উইকেট নেওয়ার অনুভূতি জানি শিহাব বলছিলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। তবে এই ভালো লাগাই চূড়ান্ত নয়। এখন আমি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি। ম্যাচ জিতেছি, ৮ উইকেট পেয়েছি। সব ঠিক আছে। আমার স্বপ্ন এখন একজন বিশ্বমানের লেগ স্পিনার হওয়া।’

শিহাব তার ক্রিকেটে আসার গল্প জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আসলে আমার ক্রিকেট খেলার শুরুটা হয়েছিল একজন ব্যাটসম্যান ও পেস বোলার হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে লেগস্পিন বোলিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ি। আর তারপর থেকেই লেগস্পিনার হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে পথচলা।’  

ক্রিকেট যাত্রার শুরু থেকেই একাডেমির কোচ নাজিম আজাদ মুন্না গড়ে তুলেছেন তাকে। শিহাব বলছিলেন, ‘স্যার সব সময় আমাকে সাহস যোগাতেন। কীভাবে নিজেকে সেরা, দক্ষ এবং অনন্য বোলার হিসেবে উপস্থাপন করা যায় তারও দিকনির্দেশনা দিতেন। আল্লাহর রহমত আর স্যারের অবদানেই আমার এতদূর আসা।’

শিহাবের কোচ নাজিম আজাদ মুন্নার সাথে কথা হলে তিনি শিহাব কে বাংলাদেশ জাতীয় দলে দেখতে চান। জাতীয় দলে ভালো মানের লেগ স্পিনারের সংকট বহু আগে থেকেই। যদিও দুয়েকজন বেরিয়ে এলেও নাম উজ্জ্বল করতে পারেননি। 

ভালো মানের লেগস্পিনারের অভাববোধ থেকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে স্পেশালিষ্ট লেগস্পিন কোচের অভাব। আর তাই ভালো মানের লেগস্পিনার বোলারও বের হতে পারছে না।’

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ছাড়াও আরো অনেক টুর্নামেন্টে খেলেছেন এবং খেলার অপেক্ষায় আছেন শিহাব। জাতীয় দলের আরিফুল হক এবং সাজিদুল ইসলামের সঙ্গে একই টুর্নামেন্টে খেলেছেন। নেট বোলার হিসেবে বল করেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। 

নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি আসলে কখনো নার্ভাস ফিল করি না। ক্রিকেট হচ্ছে গোল বলের খেলা। বোলার যেভাবে চাইবেন ঠিক সেভাবেই তিনি বল করতে পারবেন এবং তার স্কিল কে সঠিক ভাবে সঠিক মুহূর্তে কাজে লাগাতে পারলে যেকোনো ব্যাটসম্যানকেই পরাস্ত করতে পারবেন।’

পরিশ্রম করলে সফলতা ধরা দেবে এ নীতিতেই তিনি বিশ্বাসী। একনজরে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত খেলে আসা সব টুর্নামেন্টের সফলতার দিকে নজর বুলিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এসব সফলতাকে আমি সেভাবে দেখি না। এগুলো আমার লক্ষ্য পূরণে অনুপ্রেরণা মাত্র। যা আমাকে আমার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করছে। আমি নিজেকে সেদিনই সফল মনে করবো যেদিন দেশের জার্সি গায়ে জড়িয়ে জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।’

প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টের ফাইনালে তার দল। বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারলে সুযোগ হবে জেলা পর্যায়ে খেলার। তাই নিজের দূর্বলতাগুলো কাটিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সময়কে কাজে লাগাতে চান তিনি। আপাতত স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো নিজেকে যাচাই করার সুযোগ বলেও তিনি মনে করেন। 

এমএইচ