বাংলার বিশ্বজয়ীরা/ ছবি: ইএসপিএন ক্রিকইনফো

২০২০ সালের আগে কতজন সমর্থকই বা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্বজয় করবে? সবকিছুতে ‘পজিটিভ’ মানুষটির কাছে জানতে চাইলেও হয়তো তিনি নাক সিটকাতেন, ‘বিশ্বকাপ’! অথচ সেই অসাধ্য সাধন করেছে একদল যুবক। তাদেরকে সাপোর্ট দিয়েছিলেন গুটিকয়েক মানুষ। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি গল্প আছে, আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিজয়গাঁথা সাফল্য আছে। যাদের হাত ধরে এসেছে এই বিজয়, এই বিশ্বজয়ের স্বাদ, ১ বছর পর তারা কে কোথায় আছেন?

বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করে গেছেন এমন অনেক রথী-মহারথী উঠে এসেছেন আইসিসির বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলে। যেখানে ব্রায়ান লারা, ইনজামাম উল হক, সনাৎ জয়সুরিয়া, জ্যাক ক্যালিস, হাশিম আমলা, যুবরাজ সিং, আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা যুব দলে দাপট দেখিয়ে মূল দলেও আলো ছড়িয়েছেন। আদর্শ হয়ে রয়েছেন বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে, তরুণ ও উঠতি ক্রিকেটারদের কাছে।

অতীতের কথা পাশ কাটালে বর্তমানও একই সাফাই গাইছে। বর্তমান সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে যারা রাজত্ব করছেন, তাদের সিংহভাগই তো উঠে এসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়েই। হালের বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়াম, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, রশিদ খান, জসপ্রিত বুমরাহ, জোফরা আর্চার, শাহীন শাহ আফ্রিদি, শেখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মাদের সঙ্গে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমান...। এভাবে লিখতে লিখতে খাতার পেজ শেষ হবে, তবুও লিখ শেষ করা যাবে না অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পথ মাড়িয়ে জাতীয় দলে পোক্ত হওয়া ক্রিকেটারদের সংখ্যা।

একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভাল। ১৯৮৯ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দল গঠিত হওয়ার পর, বাংলাদেশ দলের অনেক ক্রিকেটার জাতীয় দলের স্বাদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে থেকে লাল-সবুজের দলটির অধিয়াকের দায়িত্ব পেয়েছেন ১৩ জন ক্রিকেটার। তারা হলেন; আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার সুমন, মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজিন সালেহ, শাহরিয়ার নাফীস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেললে যে সবাই তারকা বনে যাবেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা আসলে অতোটাও সহজ নয়। যুব বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে ডাক পেয়েও থিতু হতে পারেননি, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। পাকিস্তানের রিয়াজ আফ্রিদি, তারিক মাহমুদ। অস্ট্রেলিয়ার গ্যারি পোর্টল্যান্ড, ভারতের অভিষেক শর্মা, উন্মুক্ত চাঁদ, গৌরব ধীমান, ফাইয়াজ ফজল, প্রবীণ গুপ্ত কিংবা বাংলাদেশের আশিকুর রহমান। কতজন মনে রখেছে তাদের? অথচ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তাদের অর্জন বেশ ঈর্ষান্বিত।

এদিকে আকবর আলীর দল তো রীতিমতো ইতিহাস রচনা করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এমন সাফল্য সহসা ধরা দিবে, এমন ভাবনার লোক ছিল কতজন? নিজেদের প্রতি বিশ্বাস ছিল আকবরদের। ওরা ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে বাজিমাত করেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দেশটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন টাইগার যুবারা। ভারতকে হারিয়ে সোনালী বর্ণের ট্রফিখানা উঁচিয়ে ধরেছে অধিনায়ক আকবর ও তার দল। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুম থেকে বাংলাদেশ, এক সুরে বেজে ওঠে, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’

এই তো দিন কয়েক আগে বিশ্বজয়ের এক বছর পূর্তি করলো বাংলাদেশ। বিশ্বজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের হয়ে চট্টগ্রামে আছেন। সেখানে সফরকারী আয়ারল্যান্ড উভসের মুখোমুখি হবে তারা। উপলক্ষটা পানসে হতে দেননি আকবর, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, শাহাদাত হোসেন দিপু, মাহমুদুল হাসান জয়, রকিবুল হাসানরা। কেক কেটে উদযাপন করেছেন তারা। জমিয়ে বেশ আড্ডা দিয়েছেন। সেখানেও ঘুরেফিরে এসেছে বিশ্বজয়ের দিনটির মুহূর্ত।

বিশ্বকাপ জয়ের এক বছর পূর্তি তো হলো। আকবরের দলের সদস্যরা কে কোথায় আছেন? তারা কি বিরাট, সাকিবদের মতো বিশ্ব শাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, নাকি রিয়াজ আফ্রিদি, আশিকুর রহমানদের দলে নাম তুলে হারিয়ে যাওয়ার পথে? ঢাকা পোস্ট তাদের খোঁজখবর নিয়ে, তাদের মন্তব্য সমর্থকদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।

নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে তৃপ্ত আকবর

পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আকবর। মুঘল সম্রাটদের সেরা সম্রাটের পুরো নাম ছিল, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ এই শাসকের ডাকা হতো ‘আকবর দ্য গ্রেট’ নামে। নিজের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সম্রাট আকবর ইতিহাসকে যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, ততটা খুব কম ভারতীয় শাসকই করতে পেরেছিলেন।

সম্রাট আকবর আর আমাদের আকবরের সঙ্গে শুধু নামের মিলই নয়। চরিত্রটাও পুরোপুরি মিলে যায় বৈকি। ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনালে সামনে থেকে লড়াই করেন আকবর আলী। ঠাণ্ডা মাথার অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসটির মাধ্যমে দলকে ৩ উইকেটের জয় এনে দেওয়ার পাশাপাশি প্রথমরের মতো বাংলাদেশকে ইতিহাসের সাক্ষী করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

তবে সম্রাট আকবর নিরক্ষর থাকলেও বাংলার আকবর, বাংলাদেশের আকবর পড়াশোনাও কম যাননা। আকবর ২০১৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পান। ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৪.৪২ পান তিনি। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়ছেন।

বিশ্বজয়ের এক বছর পর নিজের অবস্থান জানিয়ে আকবর বলেন, ‘এক বছর পর যদি বলনে, আমি আমার নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট। যেখানে আছি, ভালো আছি। এর থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না। জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ায় আক্ষেপ নেই। করোনার কারণে তো দীর্ঘদিন খেলাই ছিল না। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ আর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছি। হাই পারফরম্যান্স দলের সঙ্গে আছি। এখানে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ আছে। তো সবেমিলিয়ে যেভাবে আছি এতে তৃপ্ত বলতে পারেন।’

ফিটনেস নিয়ে সচেতন শরিফুল ইসলাম

ফাইনালে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে মাত্র ১৭৭ রান তুলতে পারে ভারত। স্বল্প রানে বেধে রাখতে বড় ভূমিকা রাখেন পেসার শরিফুল। তার ২ উইকেট কথা বলবে কাগজেকলমে। তবে সেই ম্যাচে শারীরিকভাবে বেশ আগ্রাসী ছিলেন শরিফুল। তাতেই চাপে পড়ে যায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাভে ৯ উইকেট নেওয়া শফল বোলারের হঠাৎ কি এমন হয়েছিল?

শরিফুল জানালেন, ‘এর আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে আমরা ওদের সাথে হেরে গেছিলাম। তো সেই ম্যাচ হারার পর ওরা আমাদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেছিল। ওই রাগটা ছিল। যে সুযোগ আসলে যেখানে ওদের মুখোমুখি হবো, এটা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করব। আর ওই (ফাইনাল) ম্যাচে আমরা আগেই জানতাম, আমরা যদি আগে ব্যাট করি তো ওরা আমাদেরকে ছাড়বে না। তো আমরা যেহেতু আগে বল করছি, আমরা শুরু থেকেই এমনটা করছি। ওরাও কিন্তু আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছে।’

এক বছর শেষে প্রাপ্তি আর জাতীয় দলের স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর ভবিষ্যৎ ভাবনায় শরিফুল জানালেন, ‘যদি প্রাপ্তির কথা বলি, শুধু আমার না, এটা আমাদের গোটা দলের সেরা প্রাপ্তি। আমরা বিশ্বকাপের আগে শেষ দুই বছর কঠোর পরিশ্রম করে গেছি, তার ফলটা পেয়েছি বিশ্বকাপে। সেই মুহূর্তটা আসলে ভোলার মত মুহূর্ত না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা যদি বলেন, আমার সবসময়ই চেষ্টা থাকবে ফিট থেকে খেলার জন্য। ভালো পারফর্ম করার জন্য।’

টি-টোয়েন্টি নিয়ে ভাবনা নেই মাহমুদুল হাসান জয়ের

বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে আগের ৫ ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে মোটে ৭৬ রান জয়ের। অথচ সেমিফাইনালের মঞ্চে জ্বলে উঠলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের শতকের উপর ভর করেই ফাইনালের টিকিট পায় যুব টাইগাররা। সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণ করে জয় জানান, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমার শুরু থেকেই ইতিবাচক মানসিকতা ছিল। কারণ, এর আগে আমরা ওদের সাথে খেলেছি, ওদের বোলারদের সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। এসব পরিকল্পনা ছিল, আর চেষ্টা ছিল আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলার।’

ভবিষ্যতের ভাবনা জানাতে গিয়ে জয় বললেন, মূল লক্ষ্য টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে আপাতত ভাবছেন না তিনি, ‘দল আমাকে যেভাবে চায়, চেষ্টা করি খেলাটাকে টেনে লম্বা করার জন্য। সত্যি কথা বলতে টি-টোয়েন্টি নিয়ে আমার এখন তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। সুযোগ আসলে মাঠে নামার চেষ্টা করি, দল আমার কাছ থেকে যেমন আশা করে সেটি দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকে। আমার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেট। তবে আমি এখনই জাতীয় দল নিয়ে চিন্তা করছি না। সামনে যে খেলাটা আসে, ওটাতেই বেশি দৃষ্টি রাখছি।’

পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছেন তানজিম হাসান সাকিব

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে শুধু নামেই মিল আছে তানজিম হাসান সাকিবের। দুজনের অলরাউন্ডার সত্ত্বাকে দূরে রাখলে আর কোন মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বড় জনের সঙ্গে নাম মিলে যাওয়া একেবারেই কাকতালীয় বলছেন ছোটজন। তবে আল হাসানের মতোই বড়মাপের অলরাউন্ডার হওয়ার স্বপ্ন তার। সিলেটের এই পেসারের আইডল অবশ্য দুজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান; মহেন্দ্র সিং ধোনি ও মুশফিকুর রহিম। এর কারণও জানিয়েছেন সাকিব।

ভবিষ্যৎ ভাবনায় সাকিবের সোজাসুজি জবাব, ‘পরিকল্পনা তো প্রত্যেকেরই থাকে। আমার নিজস্ব একটা পরিকল্পনা আছে। আমি আপাতত আমার সেই পরিকল্পনায় দৃষ্টি রাখছি। যদি আমি আমার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি, সেগুলো আমি যত তাড়াতাড়ি প্রয়োগ করতে পারব, আমি তত তাড়াতাড়ি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। আমি কিন্তু সম্প্রতি ব্যাটিং নিয়ে অনেক বেশি কাজ করছি। ব্যাটিংটা আমি অনেক ক্যারি করতে পারছি এখন। এর মধ্যে বিকেএসপিতে কয়েকটা অনুশীলন ম্যাচ খেলছিলাম, সেখানে ব্যাটিংটা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। আমি বোলিংয়ের পাশাপাশি এখন ব্যাটিংয়েও অনেক বেশি সময় দিচ্ছি। স্বপ্ন একজন পিওর অলরাউন্ডার হিসেবেই নিজেকে প্রস্তুত করার। মূলত এটাই আমার পরিকল্পনা।’

নিজে পেসার হলেও কেন দুজন উইকেটরক্ষণকে আদর্শ মানেন সাকিব? ‘এটার মূল কারণ হচ্ছে ধোনি মাঠের ভিতরে সবসময় সক্রিয় থাকে।  মাঠে কি হচ্ছে, না হচ্ছে সব দিকে তার দৃষ্টি থাকে। আপনি দেখবেন ধোনি রিভিউ নেওয়া মানে আম্পায়ারও একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে। এই জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে যে, মাঠের মধ্যে সক্রিয় থাকাটা। মুশফিক ভাইকে নিয়েও একই কথা বলব। উনি বাংলাদেশের উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য আদর্শ। উনিই আমাদের ফিটনেসের সংস্কৃতি তৈরি করেছেন, যেটি বিদেশিদের মধ্যে অনেকেই আছে। বাংলাদেশ এই সংস্কৃতিটা উনি তৈরি করছেন। এজন্যই ওনাকে আমার এত বেশি পছন্দ।’

ধাপে ধাপে এগুতে চান তানজিদ হাসান তামিম

তানজিদ হাসান তামিমের শৈশবের ক্রিকেটীয় ধ্যানজ্ঞানে পুরোটা জুড়িয়ে ছিলেন তামিম ইকবাল খান। স্বপ্ন দেখতেন তামমের সঙ্গে একসঙ্গে ওপেন করার। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই স্বপ্ন মিটেছে ছোটজনের। তবে মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই বলে জানালেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলকে লক্ষ্য বানালেও ধাপে ধাপে এগুতে  চান তামিম।

এ প্রসঙ্গে তামিমের জবাব, ‘আমার প্রিয় ক্রিকেটার তামিম ভাই। আমি ছোট থেকেই টেলিভিশনে ওনার ব্যাটিং দেখি। সেখান থেকেই ভাইয়ের প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। আমার একটা ইচ্ছা ছিল যে, ওনার সঙ্গে এক দিনের জন্য হলেও ব্যাটিং করার। সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আর সত্যি কথা বলতে কি মানুষের অনেক ইচ্ছে থাকে, ইচ্ছের তো শেষ নাই। কখনো যদি সুযোগ হয় ভাইয়ের সঙ্গে জাতীয় দলে ব্যাট করার...!’
 
ভবিষ্যতেত ভাবনায় তাড়াহুড়া নেই তামিমের, ‘বিশ্বকাপ জয় আমাদের জন্য বিশাল এক অর্জন। তবে যেটা চলে গেছে সেটা তো অতীত। ওটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার খুব বেশি কারণ দেখি না। আমার মনে হয় এখন আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ভালো। এখনই জাতীয় দলের ঢুকতে হবে বা এরকম কিছু, সেভাবে চিন্তা করছি না। আমার ভাবনা, সামনে যেখানে সুযোগ আসবে, সেখানে ভালো কিছু করার।’

পরিপক্ব হওয়ার পর জাতীয় দলের ভাবনা শাহাদাত হোসেন দিপুর

মধ্যবিত্ত পরিবার, অভাব-অনটনের সংসার। এর মধ্যে দিপুর বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, তখন বাবাকে হারান তিনি। শুরুর দিকে তো ক্রিকেট ব্যাট কেনার সামর্থ্য ছিল না, ফলে কুড়িয়ে আনা কাঠ দিয়ে ব্যাট বানিয়ে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন দিপু। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন বিকেএসপিতে। তবে সেখান থেকেও বাদ পড়ে যান তিনি। দিপু তো মেনেই নিয়েছিলেন, ক্রিকেটটা আর খেলা হচ্ছেনা। ছেলেটা কি আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলো? পরের গল্প তো সবারই জানান।

সেই দুঃসময়ের স্মৃতি নিয়ে দিপু জানানলেন, ‚মধ্যবিত্ত পরিবারের আসলে যেমনটা হয়। একটু কষ্ট করতেই হয়। আমার ওরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তো আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। এর পর ভাইয়া ছিলেন, উনি আমাকে যেভাবে সাহায্য করছেন, আম্মু ছিলেন। ক্রিকেট সরঞ্জামাদিগুলোর দাম তো আপনারা জানেন। মোটামুটি ভালোই দাম। তখন এগুলো কেনার সামর্থ ছিল না। সুদীপ্ত ভাই নামে একজন ছিলেন, উনি আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। ইরফান শুক্কুর (উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান) ভাইও আমাকে সাহায্য করেছেন।’

বয়সভিত্তিক দলের গণ্ডি পার করা দিপুর স্বপ্ন এবার জাতীয় দল। তবে নিজেকে প্রস্তুত না করে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপাতে চান না তিনি, ‘অবশ্যই চেষ্টা থাকবে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার। যখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে ঢুকলাম, তার এগেই থেকেই জাতীয় দলের স্বপ্ন দেখি। যেমনটা বাকিরা দেখে। যদি সুযোগ আসে তবে আমি চাই, প্রস্তুত হয়েই জাতীয় দলে ঢুকতে। এর জন্য যত সময় লাগে তাতে কোন সমস্যা নাই। আমার লক্ষ্য পরিপূর্ণ হয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেওয়া।’

এখনই জাতীয় দল নিয়ে ভাবনা নেই রাকিবুল হাসানের

যুব বিশ্বকাপ বাঁহাতি ঘূর্ণিতে আলো ছড়িয়েছেন রাকিবুল হাসান। বাংলাদেশ দলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে তার ভূমিকা নেহায়েত কম নয়। ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট তার দখলে। বিশ্ব আসরে হ্যাটট্রিক করার কৃতী গড়েছিলেন রাকিবুল। অথচ তার ক্রিকেটার হওয়ার গল্পটা অন্যরকম। শৈশব থেকেই বড্ড ডানপিটে। লেখাপড়ায় বিন্দুমাত্র মনোযোগ ছিলো না রাকিবুলের। গৃহশিক্ষকের এক মাসের টাকা না দিয়ে সেটি দিয়েই ভর্তি হন একটি ক্রিকেট একাডেমিতে। রাকিবুলের গল্প তৈরি সেখান থেকেই।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বজয়ী দলের সদস্য তিনি। স্মৃতিগত মুছে গেলেও ইতিহাস মনে রাখবে তাকে। বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার এক বছর পর কোথায় দাঁড়িয়ে রাকিবুল? তিনি জানালেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তা নিয়ে খুশি। আক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বলতে পারেন জাতীয় দলের এখনো সুযোগ আসেনি। তবে এসব নিয়ে এখনই কোনও ভাবনা নেই আমার। আমি আমার কাজটা ঠিকমতো করতে থাকলে, সুযোগ ঠিকই একদিন আসবে।’

টিআইএস/এটি