গত ৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে প্রশ্ন করা হয়, টেস্টে কেন উন্নতি হচ্ছে না বাংলাদেশ দলের? পাশে দাঁড়ানো এক বোর্ড পরিচালক সভাপতির উত্তর কেড়ে নিয়ে প্রশ্নকর্তার প্রতি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় অবতীর্ণ হলেন।

নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয় আর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্টে লড়াইয়ের ফিরিস্তি শোনালেন। বোঝাতে চাইলেন, টেস্টেও ক্রমশ উন্নতি করছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের দল।

সভাপতি অবশ্য নমনীয় কিছুটা। ঠান্ডা মাথার জবাবে বললেন, ‘আমার মনে হয় না (টেস্ট) দল মোরালি ডাউন। আমরা তিন ফরম্যাটে ভালো ছিলাম না, এখন এক ফরম্যাটে ভালো করছি। ভালো করছি দেখে সামনেও ভালো করতে পারব এমন কোনো গ্যারান্টি কিন্তু নেই। এটার জন্য প্রচুর কাজ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি। সাথে টেস্টে একটু বেশি নজর দিচ্ছি। ক্রিকেটের সার্বিক উন্নতি চাইলে টেস্টের দিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। যদিও সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরম্যাট এখন টি-টোয়েন্টি। আমাদের কাছে টি-টোয়েন্টিও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার আগে ওয়ানডের পর মূল মনোযোগ রাখতে চাচ্ছি টেস্টে।’

ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাট টেস্ট। ২০০০ সালে আইসিসির স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২২ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এই ফরম্যাটে আশানুরূপ পারফরম্যান্স নেই বাংলাদেশ দলের। যা একটু সাফল্য ধরা দেয়, সেটিও খুব বেশি নয়, ধারাবাহিক নয় মোটেও। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের পর নিজেদের আভিজাত্য প্রতিষ্ঠায় কিছুটা রসদ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তাইতো কণ্ঠে জোর পেয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল, হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর নির্বাচক প্যানেলের সদস্যরা।

সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দলের সামনে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচের সিরিজ খেলতে টাইগার ডেরায় লঙ্কানরা। সিরিজের প্রথম ম্যাচ আগামীকাল রোববার। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার পাশাপাশি সমর্থকরা টেলিভিশনে খেলা উপভোগ করতে পারবেন টি স্পোর্টস আর গাজী টিভির পর্দায়।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের এই সিরিজ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি আক্ষেপ ঘোচানোর মঞ্চ। কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জিতে আসলেও ঘরের মাঠে সবশেষ ২৭ মাস টেস্ট জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। হোম ভেন্যুতে এই ফরম্যাটে সবশেষ জয়টি এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ঢাকায়। শুধু চট্টগ্রামের হিসেব কষলে চোখ রাখতে হবে আরো দূরের পরিসংখ্যানে। সাগরিকার পাড়ে টেস্ট জয় এসেছে সেটিও ৫৪ মাস হয়ে গেছে।

নিজেদের হোম ভেন্যুতে সব মিলিয়ে ৬৭ টেস্ট খেলে ৪৪ হারের বিপরীতে মাত্র ১০ জয় পাওয়া বাংলাদেশ দল অবধারিতভাবে চাইবে চট্টগ্রামে জয়ের সংখ্যাটা ১১-তে নিয়ে যেতে। সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের স্বাদ পেতে। লঙ্কানদের সঙ্গে এ পর্যন্ত ২২ ম্যাচে মোটে ১ জয় বাংলাদেশ দলের, ১৭ হারের সঙ্গে ড্র আছে ৪টি।

তবে এসব পরিসংখ্যান দেখতে নারাজ টাইগার দলপতি মুমিনুল, ‘যখন খেলি জেতার জন্য খেলি। এখানেও এই পরিকল্পনা নিয়েই খেলব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। আগে কী হলো না হলো এগুলো নিয়ে কখনও চিন্তা করতে পারবেন না। যারা ৫ দিন চাপ সামলাতে পারবে তারাই ম্যাচ জিতবে। অতীতে কী হয়েছে এসব ভূমিকা রাখে না।’

এই টেস্টে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দল অবশ্য আত্মবিশ্বাসে রসদ পাচ্ছে সাকিব আল হাসান ফেরায়। বাঁহাতি অলরাউন্ডার করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় বাড়তি একজন বোলার বা বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলানোর দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না স্বাগতিক টিম ম্যানেজমেন্টকে।

এ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ কেমন হবে সেটি অবশ্য পরিষ্কার করেননি মুমিনুল, ‘কাল উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেব, ৪টা বোলার নাকি ৫টা বোলার নিয়ে খেলব। সাকিব ভাই এলে কম্বিনেশন ভালো হয়। হয়ত কাল সিদ্ধান্ত নিতে পারব ৩ পেসার নাকি ২ পেসার। চট্টগ্রামে রান বেশি হয়, বোলারের চাহিদা বেশি থাকে। এটার প্রভাব পড়তে পারে।’

তবে সাকিব ফেরায় জায়গা হারাতে হচ্ছে তরুণ ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি রাব্বিকে। অফ স্পিনার নাঈম হাসান খেললে মোসাদ্দেক হোসেনেরও অপেক্ষা বাড়ছে।

এক নজরে প্রথম টেস্টের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ-

প্রথম টেস্টের জন্য বাংলাদেশ স্কোয়াড

তামিম ইকবাল খান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক সৌরভ (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, এবাদত হোসেন, সৈয়দ খালেদ আহমেদ/শরীফুল ইসলাম।

টিআইএস