ধ্বংসস্তূপ থেকে মহাকাব্য। ২৪ রানে ৫ উইকেট থেকে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭৭ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। ২৫৩ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন পার করেছেন মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস। দুইজনই সেঞ্চুরি করে অপরাজিত আছেন। তাদের এই জুটিকে নিজের দেখা অন্যতম সেরা বলছেন টাইগারদের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।

মুশফিক আর লিটন আজ সোমবার টেস্টের প্রথম দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৬৩ বছরের পুরোনো একটা বিশ্বরেকর্ড ভাঙেন। ২৫ রানের কমে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিটা এতদিন ছিল পাকিস্তানের দখলে। ১৯৫৯ সালে ঢাকার বুকেই পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেই ম্যাচে ২২ রানে ৫ উইকেট খোয়ানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে ওয়ালিস ম্যাথিয়াস আর সুজাউদ্দিন তুলে ফেলেন ৮৬ রান। যা পরের ৬৩ বছর ছিল অক্ষত। সেই রেকর্ডটাকেই লিটন আর মুশফিক পাঠিয়ে দেন সাজঘরে।

থামেননি সেখানেই, তৃতীয় সেশনেও একটা রেকর্ড ভাঙেন দু’জনে মিলে। বাংলাদেশের হয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা এতদিন ছিল মুশফিক আর আশরাফুলের। ২০০৭ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই দু’জন মিলে করেছিলেন ১৯১ রান। সেই রেকর্ডটাকেও লিটন-মুশফিক ফেলেন পেছনে। প্রথমবারের মতো ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে দেন ২০০ রানের জুটির স্বাদ। থামেননি সেখানেই, পরে এই জুটি ছুঁয়েছে ২৫০ রানের মাইলফলকও। জুটিতে ২৫৩ আর স্কোরবোর্ডে ২৭৭ রান নিয়ে দিন শেষ করে এসেছেন দু’জনে।

দু’জনের এমন সব কীর্তিতে প্রথম দিনের বাকি সময় নির্বিঘ্নেই পার করে বাংলাদেশ। প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমকে ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমার কোচিং ক্যারিয়ারে টেস্টে দেখা অন্যতম সেরা জুটি এটি। ২০ (২৪) রানেই আমাদের ৫ উইকেট চলে গেছিল। অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম, দুই ব্যাটসম্যানের এটা অসাধারণ চেষ্টা ছিল। অবশ্যই আমরা সকালে ভালো শুরু করতে পারিনি। কিছু ভুল শট ছিল। টেস্ট ক্রিকেট কঠিন, কিন্তু ছেলেরা অসাধারণ স্কিল ও ক্যারেক্টার দেখিয়েছে আমাদের ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে।’

এরপর মুশফিক-লিটনকে নিয়ে আলাদা আলাদা মন্তব্য করেন ডমিঙ্গো। যেখানে মুশফিকের প্রসঙ্গে টেনে জানান, তার ভালো করার যে তাড়না ও ইচ্ছে তা অসাধারণ।

ডমিঙ্গো বলছিলেন, ‘সে (মুশফিক) অন্য অনেকের চেয়ে বল বেশি হিট করে, আমি এমনটা এর আগে দেখিনি। তার ভালো করার যে তাড়না ও ইচ্ছে তা অসাধারণ। আমি মনে করি খেলোয়াড়েরা কিছু ভালোবাসা ও সমর্থন চায় যখন ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক যায় না। সে গত কয়েক ম্যাচে নিশ্চিত টেকনিক নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু সে জানে কীভাবে রান করতে হয়। এটা আসলে পুরোটাই খারাপ সময়ে খেলোয়াড়কে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপার। কেবল ধৈর্য ধরতে হবে এবং তাদের সামর্থ্যে আস্থা রাখতে হবে।’

দিনের খেলা শেষে মুশফিক অপরাজিত আছেন ১১৫ রানে, লিটন আছেন ১৩৫ রান নিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটের তৃতীয় সেঞ্চুরি করা লিটনের প্রশংসা একটু বেশি ঝরল ডমিঙ্গোর কণ্ঠে।

ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমার মনে হয় টেকনিক খুব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। লিটন তার খেলাকে মূল্য দিচ্ছে। সে খুব ভালোভাবে ব্যাটিং টেকনিকে উন্নতি করেছে। সে গত দেড় বছর ধরে টেস্টের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ভালো উপায় পেয়েছে। সে জানে কখন কাজ করতে হবে, আর কখন হবে না। সে ভালো একটা রুটিন মেনে চলছে।'

সঙ্গে যোগ করেন ডমিঙ্গো, ‘কিন্তু এটা তৃতীয় সেঞ্চুরি। তার এখনও অনেক দূর যেত হবে। সে অসাধারণ খেলোয়াড়, দেখার জন্য শান্তির। তার হাতে অনেক সময়। কিন্তু আশা করি এটা সফল টেস্ট ক্যারিয়ারের মাত্র শুরু। সে গত দেড় বছর ধরে দারুণ কাজ করছে। কিন্তু তারটা এখনও শেষ হয়নি।’

টিআইএস/এনইউ