সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেটই শুধু নয়, গোটা দেশের সবচেয়ে বড় তারকা কে? এমন প্রশ্নে সাকিব আল হাসানের বাক্সেই যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়বে সেটি কোনো সমীক্ষা ছাড়াই বলা যায়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিরিজগুলোতে বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে খেলাতে যেমন মরিয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, তেমনি তাকে মাঠে দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকেন সমর্থকরা। যার প্রতিফলন দেখা গেল চলমান বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ঢাকা টেস্টে।

চতুর্থ দিনের প্রথম দুই সেশনে ম্যাড়ম্যাড়ে রূপ নেয় ঢাকা টেস্ট। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস আর দীনেশ চান্দিমালের জমাট রক্ষণে দিশেহারা বাংলাদেশি বোলাররা। অবস্থা এতোটাই প্রতিকূল যে, নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে শের-ই-বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি। তবে তখনো গোটা মাঠে কম করে হলেও হাজার তিনেক দর্শক। সেই নিষ্প্রাণ গ্যালারিতে প্রাণের সঞ্চার ফেরানোর দায়িত্বটাই যেন নিলেন সাকিব।

দ্বিতীয় সেশনের পর দক্ষিণ প্রান্তের বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে থাকেন ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ’ তকমা পাওয়া বাঁহাতি অলরাউন্ডার। যখন পূর্ব প্রান্ত থেকে বল ছোড়েন বোলার, তখন সাকিব ফিল্ডিং করেন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে। যখন দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বল করে, অর্থাৎ পূর্ব প্রান্তে ব্যাটিং করে, তখন সাকিবের জায়গা বদলে হয় লং অন। সেক্ষেত্রে সাকিব যখন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ফিল্ডিং করেন, তখন সেটি হয় ইস্টার্ন গ্যালারির সামনে। লং অনে দাঁড়ালে সেটি হয় সাউদার্ন গ্যালারির সামনে।

এই দুই গ্যালারি দর্শকদের গোটা এক সেশন আনন্দে মাতিয়েছেন সাকিব। কখনো শ্যাডো করে, কখনো দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে, কখনো জার্সি দেখিয়ে বিনোদন দেন সাকিব। গ্যলারি থেকে স্লোগান শুরু হয়, ‘শিরায় শিরায় রক্ত, আমরা সাকিব ভাইয়ের ভক্ত।’ কখনো আওয়াজ ওঠে, ‘দশ টাকার পেপসি, সাকিব ভাই...।’ 

সাকিব যখন ইস্টার্ন গ্যালারির সামনে ফিল্ডিং করছিলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই দুই তলার গ্যালারি থেকে নিচে নেমে আসছিলেন সমর্থমরা। তাদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া সমর্থকের আধিক্য বেশি। এজন্য তৎপর থাকতে হচ্ছিল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের। এই নিরাপত্তা দেওয়ার মাঝেই উপস্থিত এক নিরাপত্তাকর্মী সাকিবের এমন খুনসুটি নিজের মোবাইলে ভিডিও চিত্রে ধারণ করতে থাকেন। তখন তার সঙ্গে কিছুটা খুনসুটিয়ে মাতেন সাকিব।

নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্দেশ্য করেন সাকিব বলেন, ‘ভাই কি টিকটক করছেন নাকি?’ আবার কখনো দেশের সার্বিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা সেরেছেন ফিল্ডিংয়ের মাঝেই। সেই নিরাপত্তাকর্মী মিরপুর পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত থাকার সুবাদে মাঝেমধ্যেই সাকিবকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান। তবে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নিজের অনুভূতি শেয়ার করতে গিয়ে বলছিলেন, যতবারই সাকিবকে দেখেন, বাড়তি রোমাঞ্চ অনুভব করেন তিনি।

গ্যালারির খুদে সমর্থকদের সাকিবকে ঘিরে বাঁধভাঙা উল্লাস অবশ্য থামানো যায়নি। দুপুরে তপ্ত রোদে সমর্থকরা সাকিবের কাছে পানির বোতল চান। সাকিবও হতাশ করেননি তাদের। গ্যালারির উদ্দেশ্যে একটি পানির বোতল আর একটি জুসের বোতল ছুড়ে মারেন তিনি। কাড়াকাড়িতে যার একটির মালিকানা দাবি করেন মিরপুর এগারো থেকে খেলা দেখতে আসা স্কুলছাত্র রাশিদুল হাকিম আরিয়ান। 

উচ্ছ্বাসিত আরিয়ান বলছিলেন, ‘আমরা ইস্টার্ন গ্যালারিতে খেলা দেখছিলাম। পরে সাকিব ভাই এখানে ফিল্ডিং করতে এলে আমরা স্লোগান দিই তার নাম ধরে। তিনি আমাদেরকে হাতের ইশারায় বললেন, তোমরা নিচে আসো। আমরা গেলাম, হাই-হ্যালো করলাম। সাকিব ভাইকে বললাম, ভাই আপনার মাথার ক্যাপটা দেন, এক বোতল পানি দেন। পরে সাকিব ভাই হাই দিলেন। এরপর প্রথমে পানির বোতল দিলেন এবং পরে জুসের বোতলটা দিলেন।’

সাকিব অবশ্য এই খুনসুটি মাঠেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। সংবাদ সম্মেলনের অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, ম্যাচে বা দিনের খেলায় যিনি ভালো করেন, তাকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয় দলের মুখপাত্র হিসেবে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম বারের মতো ৫ উইকেট পেয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পারফর্মারের খেতাব নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এলেন তিনি। সেখানেও চললো তার রসিকতা।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে দলের সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার জানালেন, সবার মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করে রাখতে। রসিক সাকিব এবার বললেন, ‘নাহলে কি ফাইন (জরিমানা) করবে?’

এক সিনিয়র সাংবাদিক খানির দূর থেকে প্রশ্ন করাতে সাকিবের খুনসুটি, ‘আপনি এতো দূরে কেন, করোনা হয়েছে নাকি?’

আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে সাকিব ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছুটি নিতে চান, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল কয়েকদিন ধরে। সংবাদ সম্মেলনের একদম শেষে আসল প্রসঙ্গটি। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশ তো ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ফরম্যাটেই খেলতে যাচ্ছে। আপনি খেলবেন তো? মিডিয়া ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে সাকিব বললেন, ‘আমার নাম নেই?’ জবাবে মিডিয়া ম্যানেজার জানালেন, ‘আছে তো।’ সাকিব বললেন, ‘তাহলে?’ 

গুঞ্জন আছে, সাকিব নাকি আজকাল টেস্ট ক্রিকেটটা খুব বেশি উপভোগ করেন না। এই ফরম্যাট থেকে বাইরে থাকতেই টেস্ট সিরিজ সামনে এলে ছুটি নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় ‘মিস্টার’ অলরাউন্ডারের। এমন একটি দিনের পর তাই প্রশ্ন রয়ে যায়, সাকিব টেস্ট খেলতে না চাওয়ার ভাবনায় পরিবর্তন আনছেন নিশ্চয়ই!

টিআইএস/এইচএমএ