মুস্তাফিজুর রহমানের টেস্ট ফরম্যাটে খেলা নিয়ে নাটকীয়তা কম হলো না। এসব নাটকের অবসান হয়েছে আপাতত। টেস্ট খেলতে না চাওয়া কাটার স্পেশালিস্টকে আসন্ন উইন্ডিজ সিরিজের স্কোয়াডে রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দুই পেসার তাসকিন আহমেদ আর শরিফুল ইসলামের চোটের কারণে না থাকায় একাদশেও দেখা যেতে পারে এই বাঁহাতি পেসারকে। তবে মুস্তাফিজকে তিন ফরম্যাটে খেলাতে গেলে টিম ম্যানেজমেন্টকে ‘ক্যালকুলেটিভ’ হতে হবে বলে জানালেন, মাহবুব আলী জাকি।

দেশের স্বনামধন্য পেস বোলিং কোচ জাকি বলছিলেন, ‘আপনাদের কাছে খেলোয়াড় আছেই অল্প কয়েকজন। এমন না যে মুস্তাফিজ না খেললেও প্রচুর আন্তর্জাতিক মানের পেসার আছে। আছেই ৪-৫ জন সব মিলিয়ে। সুতরাং ও (মুস্তাফিজ) সহ যারা আছে খেলাতে হবে। এদের ছাড়াতো জেতা সম্ভব না। এই কজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কিন্তু এখন এদের খেলাতে হলে, এক ফরম্যাট থেকে আরেক ফরম্যাটে নিতে হলে প্রস্তুতি, ম্যানেজমেন্ট সব ক্ষেত্রেই ক্যালকুলেটিভ হতে হবে।’

সঙ্গে যোগ করেন জাকি, ‘বোলিং কোচ, ট্রেনার ও ফিজিও বসে যদি জিনিসটা ডিজাইন করে আমার মনে হয় বেটার হবে। আমার কাছে মনে হয় মুস্তাফিজ লম্বা স্পেল করতে পারে। তার সেই ফিটনেস আছে। কিন্তু যেটা বললাম লম্বা খেলা, এবার আরও সিরিজ আছে। এবার আমাদের বাইরে অনেক সিরিজ। আমার কাছে মনে হয় এদের টাইম টু টাইম কেয়ার করা উচিৎ।’ 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন মুস্তাফিজ, প্রায় দেড় বছর আগে চট্টগ্রামে সেই টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিল এই উইন্ডিজ। এই দীর্ঘ সময়ে লাল বলের সঙ্গে সম্পর্কটা মলিন হয়েছে বাঁহাতি পেসারের। এর মাঝে তো টেস্টের প্রতি অনিহার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন মুস্তাফিজ। এর কারণও ছিল বৈকি। ২০১৯ সালে জাতীয় দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো দায়িত্ব নিয়েই মুস্তাফিজকে বার্তা দেন, লাল বলে আরও শিখতে হবে। 

যদিও পরে ততকালিন পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করেন মুস্তাফিজ। টেস্ট খেলতে না চাইলেও জাকির সঙ্গে চলতি বছরের শুরুতে বেশ কয়েকটি সেশন করেন লাল বলে। মুস্তাফিজের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করার প্রেক্ষিতে জাকি তাই স্পষ্টই জানালেন, টেস্টের প্রতি কখনোই অনীহা ছিল না মুস্তাফিজের। জৈব সুরক্ষা বলয়ের জন্য সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন ফিজ। এখন টেস্ট খেলার জন্য মানসিকভাবে পুরোপুরি ফিট আছেন বাঁহাতি পেসার।

জাকির ব্যাখা, ‘মানসিকভাবে ফিট না হলে সে আসলে ঐ কাজটা (ফাঁকা সময়ে আলাদা কাজ) করতো না। সে কিন্তু এটার জন্যই তৈরি হচ্ছিল। সে নিজেও বলেছে আমি সব ফরম্যাটে খেলবো। কিন্তু এর মানে এই না যে আপনি তারে টানা দুই-তিনটা সিরিজ খেলাবেন। তাকে খেলাতে হলে আপনাকে ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে এ জায়গায় আরও স্পষ্ট হলে ভালো।’ 

মুস্তাফিজ তিন ফরম্যাটের জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে চাইলে জাকির জবাব, ‘আমার কাছে মনে হয় (তিন ফরম্যাটে মুস্তাফিজের কন্টিনিউ করা)। ঐ যে বললাম আমাদের কাছে প্লেয়ারই আছে কয়টা। জিততে হলে এদের সব জায়গায় খেলাতে হবে। আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের পুরো ক্যালকুলেটিভ হতে হবে।’

দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে ফিরে ক্রিকেট উইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট একাদশের বিরুদ্ধে তিন দিনের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দুই দিন মাঠে নামেননি মুস্তাফিজ। তৃতীয় ও শেষ দিনে বল হাতে নেমেই প্রত্যাবর্তন রাঙিয়েছেন এই পেসার। সাদা পোশাকে মাঠে নেমেই নিজের প্রথম ওভারে পেয়েছেন জোড়া উইকেটের দেখা। পরে নিয়েছেন আরও ১ উইকেট। তবে সব মিলিয়ে হাত ঘুরিয়েছেন ৬ ওভার। 

জাকি মনে করেন, ‘ওয়ার্কলোড ব্যাপারে এমনটা হতে পারে। এই কোচ বারংবারই মুস্তাফিজকে হিসেব করে খেলানোর পরামর্শ দিয়েছেন, এখানে ওয়ার্ক লোডের বিষয় থাকেই। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার যেহেতু বিদেশি কোচরা আছে তারা বেশ ভালো অভিজ্ঞ। তারা ভালোই জানে কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে, এটা করতেই হবে। কারণ এগুলো আমাদের বড় সম্পদ। এমন না যে আরও ১০ টা আছে। এই এক-দুইটা খেলোয়াড়ই আছে। আমরাও যখন কাজ করি তাদের সাথে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হয়।’ 

সঙ্গে যোগ করেন ‘তাকে কয়টা ম্যাচ খেলাবেন, কোন ম্যাচে বিশ্রাম দিবেন, কিভাবে রিহ্যাবে আনবেন সবকিছু হিসাব করেই খেলাতে হবে। মুস্তাফিজ, তাসকিন, শরিফুল, এবাদত, খালেদ ঢুকেছে। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র দুইজন যেহেতু আছে বাকিদের ম্যানেজ করে খেলাতে হবে।  তরুণ যারা আছে তারা অনেক ম্যাচ খেলতে পারবে কারণ তারা ঢুকেছেই মাত্র কিছুদিন হল। সিনিয়রদের ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ এদের তো আপনাকে খেলাতে হবে, এদের না খেলালে বাংলাদেশ জিতবে না।’

জাকির ভাবনা, বাংলাদেশ দলের টেস্ট জিততে গেলে পেস বোলিং বিভাগকে শক্ত করতে হবে আগে। সেখানে মুস্তাফিজের বিকল্প দেখেন না তিনি। তবে ম্যাচ বা সিরিজের গুরুত্ব বিবেচনায় পেসারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর মত তার।

টিআইএস/এটি