টেস্টে বাংলাদেশ দল কি জিততেই ভুলে গেছে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয় একেবারে। সাফল্যর মাফকাঠি যদি জয় হয়, তবে উত্তর একবাক্যে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে। মাউন্ট মঙ্গানুই জয় এক পাশে রাখলে সম্প্রতি সাদা পোশাকে দলের পারফরম্যান্স সুখকর নয়, একেবারে মলিন। বরং বলা যায় ওই জয়ই বুমেরাং হয়েছে টাইগারদের জন্য। অনেকটা সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে গড়িয়ে পড়ার মতো। পড়তে পড়তে এখন কেবল মাটি ছোঁয়ারই অপেক্ষা!

এখন কি তবে গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায় থাকবে সাকিব আল হাসানের দল? যেমনটা সাকিব বলেছিলেন অ্যান্টিগা টেস্টে নিজেরা ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর। টাইগার দলপতি টেস্ট বাঁচাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের বার্তাও যে দিয়েছিলেন। সাকিবের কথার সারমর্ম ছিল এমন, উইন্ডিজকে অলআউট করতে না পারলে তাদের ইনিংস ঘোষণার অপেক্ষা করা। অধিনায়কের এমন বার্তা কখনোই লড়াইয়ের উপাদান এনে দেয় না।

তবে বাস্তবতা তো সে কথাই বলছে। মুমিনুল হক চাপ সইতে না পেরে সরে দাঁড়ালেন। আবার টেস্টের নেতৃত্ব সাকিবের মাথায়। প্রত্যাবর্তনটা সুখকর হয়নি তার। গড়িয়ে নিচে পড়ার আগে ‘বিচক্ষণ’ সাকিব নিশ্চয়ই শেষ লড়াই চালাবেন, যদি খড়কুটো ধরেও টেস্ট দলটাকে বাঁচানো যায়। বাঁচানোর প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় টোটকা হবে দলের জয়। সেই লক্ষ্যে সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ক্যারিবীয়দের মুখোমুখি হবে সফরকারীরা।

এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দল বড় অনুপ্রেরণা পেতে পারে ২০০৪ সাল থেকে। সেবার উইন্ডিজের প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেছিল হাবিবুল বাশারের দল। সেন্ট লুসিয়ার এই মাঠে ব্রায়ান লারার দলের বিপক্ষে যেভাবে লড়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, তাতে অর্জনে শুধু জয়টাই মেলেনি। ড্র হওয়া ম্যাচে একাধিক কীর্তি গড়ে বাংলাদেশ। যা দেড় যুগ পরেও আছে টাটকা।

সে ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৪১৬ রান করে বাংলাদেশ, যেখানে ৬৪ রানে লিড নিয়েছিল। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সেবারই প্রথম কোনো দলের বিপক্ষে লিড পায় টাইগাররা। বাংলাদেশের করা সেই দলীয় সংগ্রহ এখনো ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামের সেরা ৩টি সংগ্রহের একটি। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ড্র করা সে ম্যাচে অনবদ্য ব্যাটিংয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে সেঞ্চুরি পান হাবিবুল, মোহাম্মদ রফিক আর খালেদ মাসুদ পাইলট। পরের দুজনের ক্যারিয়ারে সেটাই প্রথম এবং একমাত্র শতক।

বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে চাইলেই সে ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। তবে অধিনায়ক সাকিবের ক্রিকেট দর্শন যেন কিছুটা ভিন্ন। ক্রিকেট পরিসংখ্যান দিয়ে খেলা যায় না বলেই হয়তো মনে করেন তিনি। নাহলে কেনই বা বললেন, ‘এটা এতোদিন আগের ম্যাচে যেটা ছিল সেখান থেকে নেওয়ার মতো কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।’

সাকিব ভাবনার জায়গা নিজের দলের ব্যাটিং বিভাগ। বিশেষ করে নিয়মিত রান পাচ্ছে না টপ অর্ডার। তামিম ইকবাল আর মাহমুদুল হাসান জয় ওপেনিংয়ে টিকে যাবেন, তাদের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। বিপত্তি বেধেছে তিন আর চার নম্বর নিয়ে। অধিনায়কত্ব ছেড়েও মুমিমুল হক ছন্দে নেই। শেষ ৯ আন্তর্জাতিক ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি এই বাঁহাতি। নাজমুল হোসেন শান্তর দশাও প্রায় একই। তাদের দুইজনের মধ্যে একজন যেতে হতে পারেন সাইডবেঞ্চে।

কে যাবেন আর কে থাকবেন- এ নিয়ে দলের মধ্যে আছে দ্বিধাবিভক্তি। অনেকেই চাইছেন মুমিনুলকে একাদশের বাইরে রাখতে। তবে সদ্য নেতৃত্ব ছাড়া মুমিনুলকে এখনি ‘ড্রপ’ করতে অনীহা আছে অনেকের। সেক্ষেত্রে ‘কোপ’টা পড়তে পারে শান্তর ওপর। তবে যাকেই বসানো হোক, ফেরার রাস্তাটা সুগম হয়েছে এনামুল হক বিজয়ের।

ঘরোয়া ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে বাংলাদেশ দলে ডাক পেয়েছেন বিজয়। শুরুতে উইন্ডিজ সফরের টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে স্কোয়াডে নাম ছিল। পরে ইয়াসির আলি রাব্বির চোটে টেস্টেও ডাক পেয়েছেন। ২৯ বছর বয়সী বিজয়ের বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় প্রায় এক দশক আগে। তবে সাকুল্য ৪টি টেস্ট খেলেছেন। ৯.১২ গড়ে করেছেন ৭৩ রান। শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। কাকতালীয়ভাবে বিজয় শেষবার সাদা পোশাকে খেলেছিলেন এই উইন্ডিজের বিপক্ষেই, সেন্ট লুসিয়াতেই। সেই একই প্রতিপক্ষ, একই মাঠে ফেরার ক্ষণ গুনছেন।

বিজয় ফিরবেন কিনা সে বার্তা না দিলেও একাদশে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন সাকিব, ‘আমাদের মাথায়ও কিছু (পরিবর্তনের) চিন্তাভাবনা আছে। ট্রেনিং শেষ হলে আমরা বসে একটা মিটিং করে টিম ডিসাইড করব। আমাদের ইচ্ছা আছে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া যাতে সবাই জানে যে কারা খেলছে আর কারা খেলছে না।’

পরিবর্তন আসতে পারে পেস বোলিং বিভাগেও। মুস্তাফিজুর রহমানকে সাদা বলের দুই সিরিজের কথা ভেবে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট থেকে। সেক্ষেত্রে চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরতে পারেন আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। এমনটি হলে দুইটি পরিবর্তন নিয়ে শেষ টেস্টে উইন্ডিজের মুখোমুখি হবে সাকিবরা।

এক নজরে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ-
তামিম ইকবাল খান, মাহমুদুল হাসান জয়, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক সৌরভ, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, এবাদত হোসেন, সৈয়দ খালেদ ও শরীফুল ইসলাম।

টিআইএস/এনইউ