দুই পাশে ঝাউবন, পাশ থেকেই ভেসে আসে বঙ্গোপসাগরের গর্জন। ঠিক সমুদ্রের কোল ঘেঁষে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এখানেই শান্তির সাদা পতাকা উড়েছিল। বাংলাদেশের সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের বন্ধুত্ব আর ভ্রাতৃত্বের স্মারক হয়ে উঠেছিল লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কিন্তু সেখানেই কিনা জোয়ার আসার আগেই বিপৎসংকেত, উড়ল লাল পতাকা! মিলনমেলার যে ক্রিকেট লিগে আনন্দটাই মুখ্য, সেখানেই কিনা ছড়াল অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তাপ!

ঘটনা শনিবারের। মাঠে চলছিল নিছকই আনন্দের ক্রিকেট। যেখানে হার-জিত বড় কোনো বিষয়ই নয়। কিন্তু উৎসবের রঙিন সময়ে দেখা গেল একেবারেই অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। আচমকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন তেড়ে যাচ্ছেন তারই অগ্রজ আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানের দিকে। প্রভাবশালী এই বোর্ড পরিচালক বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন রকিবুলের সঙ্গে। অনেকে এগিয়ে এসে সুজনকে আটকানোর চেষ্টা করেন। তাকে আটকাতে বেশ বেগই পেতে হয়েছে। তার মধ্যেই এই বোর্ড পরিচালক রাগ আটকাতে না পেরে উপড়ে ফেলেন মাঠের পাশে থাকা স্পনসর প্রতিষ্ঠানের ছোট্ট ছাউনি। মুখের কথা তো চলছিলই।

শেষ অব্দি অবশ্য বুঝিয়ে-শুনিয়ে খালেদ মাহমুদকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ততোক্ষণে দুই সাবেক অধিনায়কের এমন কাণ্ড ‘রাষ্ট্র’ হয়ে যায়। তোলপাড় ওঠে ক্রিকেটাঙ্গনে। প্রশ্ন ওঠে, কী এমন ঘটল যে বয়সে সিনিয়র রকিবুল হাসানের দিকে তেড়ে এলেন প্রভাবশালী বোর্ড ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ?

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খোদ ম্যাচ রেফারি রকিবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঢাকা পোস্টকে এ নিয়ে সরাসরি কিছুই বলতে চাননি তিনি। জানালেন, ‘অন্য জায়গায় খেলা নিয়ে ইয়ে হয়েছে। যেহেতু আমি টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান। আইনের মধ্যে যা আছে তা-ই। কিন্তু হ্যাঁ, আমার হতাশা লেগেছে (সুজন মারমুখী হওয়ায়), আমি হতাশ। কিন্তু এ নিয়ে আমি কথা বলব না। এটা কবর হয়ে গেছে। আমার এটা নিয়ে কিছু বলার নেই।’

সুজনের সঙ্গে আসলে কী হয়েছে? কেন তেড়ে এলেন? মাঠের এই ঝগড়া মিটমাট হয়েছে কি না― সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন রকিবুল হাসান। কথার ইতি টেনে জানালেন, বোর্ডিং পাস নেওয়া হয়ে গেছে, তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার বিমানে উঠবেন। কোনো অভিযোগ দাঁড় না করালেও বিষয়টা যে তিনি মানতে পারেননি, সেটা জানিয়ে রাখলেন। 

বোর্ডের প্রভাবশালী পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন নিজে কোনো কাঠগড়ায় দাঁড়াতে নারাজ। যেন প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচেন তিনি। প্রকাশ্যে কক্সবাজারের মাঠে ম্যাচ রেফারি রাকিবুল হাসানকে মারতে উদ্যত হওয়ার প্রসঙ্গটা তুলতেই রোববার তিনি জানান, এ নিয়ে কিছুই বলবেন না। ঢাকার ফ্লাইট ধরার প্রসঙ্গ টেনে শুধু বললেন, ‘এই প্রসঙ্গে নো কমেন্টস।’

এই বাদানুবাদ নিয়ে রকিবুল-সুজন মুখ না খুললেও স্টেডিয়াম পাড়া ঠিকই তোলপাড়। দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বটাও নাকি বেশ কিছুদিনের। গুঞ্জন আছে সাকিব আল হাসানের জাতীয় দল ছেড়ে আইপিএল খেলার সিদ্ধান্ত ছাড়াও বেশ কিছু ইস্যু জড়িত আছে এমন কাণ্ডের পেছনে।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার সকালে খাবার টেবিলে বসে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এক বিতর্ক ছড়ানো মন্তব্য করেন রকিবুল। সেটি কানে যেতেই এমন মারমুখী হয়ে উঠেন সুজন।

বিস্ফোরণটা হলো ক্রিকেট মাঠে, সবার সামনে। গোটা ক্রিকেট অঙ্গন এ ঘটনায় বিব্রত হলেও এ নিয়ে চুপ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। রোববার ঢাকা পোস্ট থেকে বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এ নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। সবাই হতবাক! তবে সন্দেহ নেই কক্সবাজারের এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ম্লান করে দিয়েছে ক্রিকেটারদের মিলনমেলার আনন্দ।

এটি