বাংলাদেশ দলের এবারের উইন্ডিজ সফরে মাঠের সঙ্গে সমানভাবে আলোচনা ভাগাভাগি করে নিয়েছে মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া ফেরি কাণ্ড। সেন্ট লুসিয়া থেকে ডোমিনিকা, ৫ ঘণ্টার ফেরি জার্নিতে নাস্তানাবুদ হয়েছেন বাংলাদেশ দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। সেই ঘটনার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মুণ্ডুপাত চলছে।

বাংলাদেশ সময় ১ জুলাই ঘটে যাওয়া সেই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বিসিবি। যেখানে ফেরি যাত্রার সিদ্ধান্ত টাইগার বোর্ডের হাতে ছিল না বলেন জানালেন, প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। একই সঙ্গে তিনি জানান, উইন্ডিজ বোর্ডের সঙ্গে চলা এতদিনের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে চান না তারা।

মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে সুজন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব এবং আমাদের কনসার্ন জানাব, যেন ভবিষ্যতে এমন না হয়। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে- ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখেই ফিউচার ট্যুর প্ল্যান বা এ দলের প্ল্যান করে থাকি। এক্ষেত্রে বোর্ড টু বোর্ড সুসম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা বিষয় হল আর সাথে সাথে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম, এ বিষয়টা ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি।’

আরও পড়ুন >> ফেরিতে ভয়ঙ্কর জার্নি, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা

সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেক হয়ে ডোমিনিকা। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার জার্নি। সমুদ্রে ফেরিতে এর আগে এতো সময় কখনোই যাত্রা অভিজ্ঞতা ছিল না বাংলাদেশ দলের কোনো সদস্যের। যাত্রার আগে দলে ছিল দ্বিধাবিভক্ত, অনেকেই এই যাত্রার পক্ষে ছিলেন না। তবে উপায় ছিল না হাতে। বিমান যাত্রার খরচ আর ধাক্কি ছিল তুলনামূলক ঢের বেশি। ফেরি যাত্রা যেমন বাড়তি সময় বাঁচায়, তেমন খরচও।

কিন্তু বিপত্তি বাঁধে দুই দিন আগের সাইক্লোনে। যার কারণে সমুদ্রে ঢেউয়ের তোড়ও বেশি ছিল। এই ঢেউয়ের মধ্যে জার্নি আর ‘মোশন সিকনেসে’, সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক অভিজ্ঞতাই হয়েছে ক্রিকেটারদের।

ফেরির সাইজ খুব বড় নয়। এর সঙ্গে ৭-১০ ফুট উচ্চতার ঢেউ মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ঢেউয়ের ধাক্কায় ফেরি যেভাবে দুলছিল, তাতে দলের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাঁহাতি পেসার শরিফুল, উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ম্যানেজার নাফীস ইকবাল এবং সাপোর্ট স্টাফের এক সদস্য ‘মোশন সিকনেসে’ আক্রান্ত হন। তাদের কয়েকজন বমিও করেন এসময়।

আরও পড়ুন >> বিশ্বসেরা সাকিবের বিশ্বরেকর্ড

নিজামউদ্দিন জানালেন, বাংলাদেশ দল কোনো দেশে সফরে গেলে যাবতীয় সব দায়িত্ব ওই বোর্ডেরই। যেমন কোনো বিদেশি দল এ দেশে এলে বিসিবির ওপর নির্ভর করে সব। তবে পুরো বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, ঘটনা নাকি ততটাও গুরুতর ছিল না।

নিজামউদ্দিনের ব্যাখ্যা, ‘আমি মনে করি বিষয়টা যেভাবে এসেছে আসলে ওরকম ছিল না। আমাদের সাথে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড যোগাযোগ করে আমরা কিন্তু সাথে সাথেই আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছিলাম। আমাদের দলের এই ধরনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেই। এটা আমরা জানিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড জানায়- বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচল সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে, খুব ছোট ছোট বিমান এখানে যাতায়াত করে।’

সঙ্গে যোগ করেন প্রধান নির্বাহী, ‘আমাদের জানাল তারা ফেরি সার্ভিসে ব্যবস্থা করছে যা ছোট ক্রুজ শিপের মতো। এটা নিয়মিত চলাচল করে এবং বাংলাদেশ দল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, আইসিসির অফিসিয়াল, টিভি ক্রু ও ধারাভাষ্যকাররা একইসাথে যাবেন। এই বিষয় নিশ্চিত করার পর আমাদেরও আলোচনা থামিয়ে দিতে হয়। কারণ দুই দল একইসঙ্গে ট্রাভেল করছে। তখন বিষয়টা মেনে নিতে হয়।’

আরও পড়ুন >> গায়ানার পথে সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা

শুধু বাংলাদেশের দলের খেলোয়াড়রাই অসুস্থ হয়েছেন তা না। বাজে আবহাওয়ার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দেরও একইরকম অবস্থা হয়েছিল সেদিন।

নিজমউদ্দিন বললেন, ‘শুধু বাংলাদেশের দলের খেলোয়াড়রাই অসুস্থ হয়েছেন তা না। বাজে আবহাওয়ার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দেরও একইরকম অবস্থা হয়েছে। আমাদের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের এই অভিজ্ঞতা নেই তাই তাদের প্রতিক্রিয়া বেশি ছিল, এটাই স্বাভাবিক। এটা আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে এসেছে যার কারণে আপনারা উদ্বেগ জানাচ্ছেন।’

টিআইএস/এটি/এইচএমএ