কাগজকলমে উইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি বাংলাদেশ দলের জন্য কেবলই নিয়মরক্ষার, ম্যাচটি জিতলে বড়জোর প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ নিতে পারবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধুমাত্র দ্বিতীয় পথটি খুব বেশি মূল্য রাখে না। যেহেতু দুই দলের এই ওয়ানডে সিরিজটি আইসিসি সুপার লিগের অংশ নয়, সেহেতু পয়েন্ট নিয়েও চিন্তা নেই টাইগারদের। সে হিসেবে বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষা করাই হতো তামিম ইকবালের দলের বড় সুযোগ।

এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে অবশ্য সেই বার্তা দিয়েছিলেন খোদ অধিনায়ক। তবে আজ শনিবার শেষ ম্যাচের একাদশে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। উপেক্ষিত এনামুক হক বিজয়, তাসকিন আহমেদ। পরিবর্তন একটি। পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ফলে ১০ বছর পর এক পেসার নিয়ে ওয়ানডেতে নামে বাংলাদেশ। এ ম্যাচেও দুর্দান্ত বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বেঁধে ফেলেছে ১৭৮ রানে। এতে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করতে প্রয়োজন ১৭৯ রান।

বাঁহাতি স্পিনার নাসুম থাকার পরেও তাইজুলকে দীর্ঘ ২৮ মাস পর ওয়ানডেতে ফেরায় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সুযোগ পেয়েই লুফে নিয়েছেন এতদিন রঙিন পোশাকে আড়ালে থাকা তাইজুল। নিজে যে ওয়ানডেতে কতটা যোগ্য, তার ছাপ রাখলেন অনবদ্য বোলিংয়ে। নিজের ১০ ওভারের কোটায় মাত্র ২৮ রান দিয়ে একাই নেন ৫ উইকেট। এই সংস্করণে প্রথমবারের মতো ফাইফারের স্বাদ পেলেন তাইজুল।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে নারাজ সফরকারী শিবির। তা না হলে কি আর আগের দুই ম্যাচের মতো এদিনও টস জিতে আগে নিজেদের বোলারদের হাত বল তুলে দেন তামিম? সুযোগ ছিল বিদেশ বিভূঁইয়ে নিজেদের ব্যাটিং গভীরতা পরখ করে নেওয়ার। তবে প্রবল আত্মবিশ্বাসেই হোক বা রক্ষণাত্মক মনোভাবেই হোক, সে পথে আর হাঁটেনি বাংলাদেশ দল। আগের মতো আজও স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় তারা।

বাংলাদেশের দলের প্রথম সাফল্য আসে তাইজুলের হাত ধরেই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ব্রেন্ডন কিংকে বোল্ড করেন। তার টার্ন করা বলে পরাস্ত হয়ে ৯ বলে ৮ রানে ফেরেন কিং। তাইজুল থামেননি সেখানেই। নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানান আরেক ওপেনার শাই হোপকে। তিনিও টার্নের কাছে পরাস্ত। হোপের পা দাগ থেকে বেরিয়ে যায়, খুবই সুক্ষ ছিল। ততক্ষণে সোহান উইকেট ভেঙে দেন। টিভি আম্পায়ারের সহায়তায় সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। হোপ আউট হন ২ রান করে।

পরের ওভারেই আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমান। সাজঘরে পাঠান শামার ব্রুকসকে। বাঁহাতি পেসারের অফ-মিডল স্টাম্পের মাঝে যাওয়া বল ব্রুকসের ব্যাট মিস করে লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন ব্রুকস। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। ৪ রান আসে ব্রুকসের ব্যাট থেকে। এতে ১৬ রান ৩ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।

সেখান থেকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন একাদশে সুযোগ পাওয়া কার্টি আর অধিনায়ক পুরান। তাদের চতুর্থ উইকেট জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। এই জুটি ভাঙেন আরেক বাঁহাতি নাসুম। ইনিংসের ২৭তম ওভারে নাসুমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে তামিমের হাতে ধরা পড়েন কার্টি। ৬৬ বলে ৩৩ রান করে ফেরেন তিনি।

এরপর আবার দৃশ্যপটে তাইজুল। এবার শিকার বানালেন হার্ডহিটার রভম্যান পাওয়ালকে। উইকেট থেকে বেরিয়ে জায়গা করে খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন এই ডানহাতি। ২৮ বলে ১৮ রান করেন তিনি। পাওয়েলের পর তাইজুল আউট করেন কিমো পলকে। নুরুল হাসান সোহানের স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ৬ রানে ফেরেন পল। পরে ক্যারিবীয় অধিনায়ক নিকলাস পুরানকে আউট করে ফাইফারের স্বাদ পান তাইজুল।

৯৩ বলে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি পান পুরান। এরপরই যেন খোলস ছেড়ে বের হন। দুই ছক্কায় ফিফটির পর ১৩ বলে যোগ করেন আরো ২১ রান। তার ব্যাট ধ্বংসাত্মক হওয়ার আগেই বোল্ড করেন তাইজুল। ৪টি চার ও ২ ছয়ে ১০৯ বলে ৭৩ রান করেন এই পুরান। মাঝে অবশ্য প্রথম উইকেটের দেখা পান অফ স্পিনার মোসাদ্দেক। বলের লাইন মিস করে খেলতে গিয়ে আকিল হোসাইন ১ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে ফেরেন।

পরে শেষ উইকেটে শেফার্ড ও জোসেফের ২৫ রানের পার্টনারশিপে দলীয় সংগ্রহ বাড়িয়ে নেয় স্বাগতিকরা। ৪৯ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তাদের ইনিংস থামে ১৭৮ রানে। এতে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৭৯ রান। সফরকারীদের হয়ে তাইজুল ৫ ও নাসুম ও মুস্তাফিজ নেন ২টি করে উইকেট।

টিআইএস/এনইউ