নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামবে কাল, ২৪ অক্টোবর। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফর্ম্যান্স আশা দেখাচ্ছে না খুব একটা। এমন অবস্থাতেও অবশ্য স্বপ্নের ফানুস ওড়ানো বন্ধ নেই ক্রিকেটপ্রেমীদের; তাদের সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে আশা রাখছেন তারকা কোচ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমও।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা, শান্ত-সৌম্যের ব্যাটিং পজিশন, সাব্বির-সাইফউদ্দিনের বাদ পড়া প্রসঙ্গসহ আরো বিভিন্ন দিক নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিচে তুলে ধরা হলো-

ঢাকা পোস্ট : বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কেমন করবে বলে মনে করেন আপনি?
ফাহিম : আমরা যদি দেখি সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের যে রেজাল্ট সেটা ভালো হয়নি। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে আমরা হয়তো ম্যাচ জিতিনি তবে ম্যাচ জয়ের কাছাকাছি ছিলাম। ইনডিভিজুয়ালি পারফর্ম করার যে ব্যাপারটা সেটা আমরা দেখেছি এ সিরিজে। এটা অন্যরা খেয়াল করেছে কিনা জানিনা তবে আমার মনে হয়েছে ম্যাচ জেতার মানসিকতা, ভালো খেলার তাগিদ, এই জিনিসগুলো অনেকদিন অভাব ছিল দলে। এই সিরিজে মনে হয়েছে দলটা আবার সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। এসব ভরসা করেই আমার কাছে মনে হয় বিশ্বকাপে অন্তত দুটি ম্যাচ আমরা জিতবো কোয়ালিফায়ার থেকে আসা দল গুলোর (নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবুয়ে) বিপক্ষে। অন্যান্য দল গুলোর বিপক্ষেও আমরা ভালো প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে পারবো।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্বকাপ দলে ওপেনার হিসাবে কাদের দেখছেন?
ফাহিম : আমার মনে হয় লিটন ওপেন করবে না, তিন নম্বরে খেলবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো উপায় না থাকায় শান্ত এবং সৌম্যকেই (ওপেনিংয়ে) খেলাতে হবে। কারণ তারা ছাড়া দলে প্রোপার কোনো ওপেনার আর আমাদের নেই, যারা ইনিংস উদ্বোধন করতে পারবে এমন। তাই এখানে চিন্তা ভাবনা করার কোনো সুযোগই নেই। যদিও ডানহাতি-বামহাতি সুযোগ থাকবে না যদি শান্ত-সৌম্য ওপেন করে তাহলে। দুজন বাঁহাতি নিয়েও খেলা যায় সেটা সবশেষ সিরিজেও দেখেছি। সাকিব-আফিফের ভালো পার্টনারশিপও দেখেছি আমরা।

ঢাকা পোস্ট : সাকিবের প্রতি চাওয়া কী থাকবে?
ফাহিম : আস্থার জায়গা তৈরী করা, যেটা সে অলরেডি শুরু করে দিয়েছে। খুব অল্প সময়ে মানসিক পরিবর্তনের যে ছোঁয়া সেটা শুরু হয়েছে বলবো। আশা করছি দলকে একটি ইউনিট হিসেবে দেখতে পারবো, সঙ্গে মানসিকভাবে শক্তিশালী।

ঢাকা পোস্ট : মোস্তাফিজের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো না, দলের জন্য বড় চিন্তার কারণ কিনা এটা?
ফাহিম : মোস্তাফিজ, সাকিব, লিটন ভালো খেলা মানে ভালো। ওরা ভালো মানের ক্রিকেটারই ওদের কাছ থেকে যদি ভালো খেলা পায় সেটা তো দলের জন্যই দারুণ ব্যাপার। যদিও মোস্তাফিজ সেই ভালো খেলাটাই খেলতে পারছে না। এটা নিয়ে চিন্তা নিশ্চয়ই থাকবে, সে ভালো খেললে দলের ভালো। তবে ওর রিপ্লেসমেন্ট নিশ্চয়ই আমাদের আছে। মোস্তাফিজের জায়গায় শরিফুল খুব একটা খারাপ করছে না। তবে বিশ্বকাপের মধ্যেই যদি আগের মোস্তাফিজকে ফিরে পাওয়া যায় তাহলে দারুণ ব্যাপার হবে। ওখানে কোচরা আছে নিশ্চয় তাকে নিয়ে কাজ করছে। আমি আশা করবো যেই বোলিং করুক না কেন আমাদের বোলাররা ভালো করুক।

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ দলের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা কতটুকু আপনার কাছে?
ফাহিম : প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে কিন্তু এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা নামিবিয়ার কাছে হেরে গেছে। সে হিসেবে কিন্তু অনেক কিছু বলা যায়। তবে আমি সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে দেখি না। আমি বাংলাদেশকে এমন একটা জায়গায় দেখি যারা হয়তো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করবে কে সেমিফাইনাল যাবে সেখানে। নেট রান রেটের একটা ব্যাপার থাকবে সেখানে বাংলাদেশ ভালো ভূমিকা পালন করবে। আমি নিশ্চিত এমন অবস্থায় সব দলই বাংলাদেশ দলকে সমীহ করেই খেলবে।

ঢাকা পোস্ট : সাব্বির এবং সাইফউদ্দিন বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে দেশে ফিরে এসেছেন এটাকে কিভাবে দেখছেন?
ফাহিম : ওরা মেধাবী এবং ওদের মধ্যে সেই সম্ভাবনা ছিলো বলেই কিন্তু ওদের জাতীয় দলে ডাকা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক সাব্বিরকে ওপেনার হিসেবে সেট করানো হয়েছে যেটা তার জন্য কঠিন ছিলো। যে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে না তার জন্য এমন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলাটা সহজ ছিল না। সে এমনি অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিল না, ওর জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। 

একইসময়ে ইনজুরির কারণে সাইফউদ্দিনও কিছুদিন দলের বাইরে ছিল। খেলা তো প্রতিনিয়ত বদলায়। ছয় মাস যখন কোনো খেলোয়াড় টি-টোয়েন্টি থেকে বাইরে থাকে, ফিরে এসে তার জন্য কঠিন হয়ে যায়, তখন মানিয়ে নেওয়াটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এরা দুজনেই মেধাবী খেলোয়াড়, আমাদের উচিত হবে তাঁদের পাশে থাকা। আমি নিশ্চিত যে সাইফউদ্দিনের মধ্যে একজন ভালো অলরাউন্ডারের সম্ভাবনা রয়েছে। আমি বলছি না বেন স্টোকসের মতো হয়ে যাবে। আমাদের যে অবস্থা সেখানে যদি একজনকে পায় যে ৭ কিংবা ৮ নম্বরে ভালো ব্যাটিং করতে পারে, এবং টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডেতে বোলিং করতে পারবে সেটা কিন্তু আমাদের দরকার। কিন্তু আমাদের এ ধরনের খেলোয়াড় নেই। সুতরাং এদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। সেম বিষয় সাব্বিরের ক্ষেত্রেও, বড় শট খেলতে জানে সে। তাকেও যদি আমরা একটু যত্ন নিই বছর খানেক পরে হলেও সাব্বিরকে আমরা মিডল অর্ডারে দেখতে পারবো। সো ওদেরকে ভালো সুযোগ দিতে হবে, এবং যত্ন নিতে হবে। কিভাবে কি করলে ওদের ফিরে আসাটা সহজ হয় সেটা নজর দিতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : ফিনিশার হিসাবে কোন ক্রিকেটারের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে আপনার?
ফাহিম : সবার উপরেই ভরসা রাখতে হবে। ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে সোহান পারেনি কিন্তু আগের একটা ম্যাচে পরপর দুই ছক্কা মেরে দিয়েছে এটাও আছে কিন্তু। সো নেগেটিভ চিন্তা না করে ওদের যদি পজিটিভ ভাবনাটা দেওয়া যায় তাহলে ওরা আরো ভালো করবে। ব্যাপারটা হচ্ছে কি আমরা তো অনেকদিন ধরেই ভালো খেলছি না। আর এরা এমন সময়ে শুরু করেছে যখন বাংলাদেশ দল খুব একটা ভালো খেলছে না। সো ঐই মানসিকতার মধ্যেই কিন্তু এরা ছিল। আমি নিশ্চিত আস্তে আস্তে এদের মানসিকতার দারুণ পরিবর্তন হবে। এবং সেটা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই। রাব্বিকে দেখেছেন ভালো খেলতে, আফিফ কেমন খেলে সেটা সম্পর্কে জানি। আমাদের মধ্যে সবকিছু আছে এখন শুধু প্রমাণ করার সময়।

এসএইচ