হারিয়েই গিয়েছিলেন তিনি! এই দেশে যেমনটা হয়-একবার প্রচারের আলোটা হারালে সবশেষ! এভাবে কতোজন কতোভাবে যে হারিয়ে গেছেন। কিন্তু হার মানেননি তাসকিন আহমেদ। দ্বিগুণ পরিশ্রম করেছেন। লড়েছেন স্রোতের বিপরীতে। সেই পরিশ্রম-একাগ্রতা বিফলে যায়নি। এখন তো তিনি তারকাদেরও তারকা! শুক্রবার অ্যাডিলেডের কারেন রল্টন ওভাল মাঠে গিয়েও এমনটা আঁচ করা গেলো!

এমনিতে তারকা খ্যাতিতে দেশের বাইরে বাংলাদেশ দল মানেই সাকিব আল হাসান। তাকে ঘিরেই থাকে গ্ল্যামারের প্রায় পুরোটা। কিন্তু দিন পাল্টাচ্ছে! রল্টন ওভালের মাঠ থেকে ব্যাটিং অনুশীলন শেষে তাসকিন বের হতে যাবেন, তখনই পড়লেন ফটোগ্রাফ শিকারিদের পাল্টায়। চলল সেলফি তোলার সঙ্গে অটোগ্রাফ নেওয়াও। প্রবাসী সমর্থকদের সময়ও দিলেন। সঙ্গে দোয়া চেয়ে ছুটে গেলেন সাজঘরে!

মজার ব্যাপার হলো কিছুক্ষণ বাদেই সাকিব আল হাসান আর সৌম্য সরকার অনুশীলন থেকে ফিরলেও ঠিক এমন করে তাদের ঘিরে ধরেননি ভক্তরা। এসবই আসলে মাঠের পারফরম্যান্সের পুরস্কার। তাসকিন মন জয় করে নিয়েছেন সবার। চলতি বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ৮ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ১৫।

সেই সাফল্যটাই ধরে রেখে এগিয়ে যেতে চান তাসকিন। আর এমন ছন্দ একদিনে পাননি। অ্যাডিলেডের মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে এই পেসার বলছিলেন, ‘গত দুই বছর একই নিয়মে চলছি। লক্ষ্য থাকছে যে উন্নতি করার। আমি উন্নতি করতে চাই, এটা আমার প্রধান লক্ষ্য।’

সঙ্গে ক্যারিয়ার নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথাটাও শোনালেন ২৭ বছর বয়সী এই পেসার, ‘দেখুন, প্রতিটি সিরিজ, প্রত্যেক টুর্নামেন্ট বা ম্যাচ থেকে এখনো শেখার চেষ্টা করছি কিভাবে নিজেকে আরো উন্নতি করা যায়। আমার স্বপ্ন সবসময় আমি ওয়ার্ল্ড ক্লাস হতে চাই এবং ধারাবাহিক হতে চাই।  প্রধান লক্ষ্য উন্নতি এটা নিয়েই এগোতে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।’ মানে সাফল্যের ক্ষুধাটা ধরে রাখছেন তাসকিন।

পরিশ্রম করলে তার সুফল মেলে। এই কথার বড় প্রমাণ তাসকিন। যখন পথ হারিয়েছিলেন, তখন লড়াই করে গেছেন। সেই লড়াই তাকে আজ নিয়ে এসেছে এই অব্দি। তবে সাফল্যের পথে হাঁটলেও সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করলেন না, ‘নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ভালো হচ্ছে যাতে আরো ভালো করতে পারি সামনে এটাই লক্ষ্য।  কারণ দেখুন আমার এখনো উন্নতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। আমি একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হতে চাই। সেটা ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং সবকিছুতেই। দলে যাতে ইমপ্যাক্ট থাকে এটাই আমার প্রধান লক্ষ্য। উন্নতির জায়গা এখনো অনেক আছে, সবাই দোয়া করবেন যাতে সুস্থ রেখে আরো নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারি।’

এই সন্তুষ্টির সঙ্গে প্রবাসে মাঠে হাজির দর্শকদের কথাটাও মাথায় আছে তাসকিনের। হোবার্টের পর সিডনিতে প্রবাসীদের জনস্রোত নেমেছিল। ব্রিসবেনের পর অ্যাডিলেডেও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন প্রবাসীরা। তাইতো তাদের আরও একবার ধন্যবাদ জানিয়ে রাখলেন তাসকিন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। এত ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসী সবাই আমাদের সমর্থন করতে আসছে। শেষ ম্যাচে অসাধারণ দর্শক ছিল, যেটা আমাদের বাড়তি অনেক প্রেরণা দেয়। আপনারা এভাবে আমাদের সাপোর্ট করেন এটাই  আমাদের জন্য ভালো হবে।’

এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকরাও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। শর্তহীন ভালবাসা নিয়ে হাজির হয়েছেন প্রতিটি ম্যাচে। জয়-পরাজয় যাই হোক স্লোগানে স্লোগানে মুখর করছেন চারপাশ! 

এটি/এনইউ