এবার সুখের হাসি হাসতে চান সেই ভাইরাল বাবা-মেয়ে
রাতারাতি এভাবে তারকা খ্যাতি পেয়ে যাবেন স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি! ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ হতেই মুঠোফোনে একের এক কল, খুদে বার্তা। ইনবক্স উপচে উঠেছে শুভেচ্ছায়। একটা ছবি, এক মুহুর্তের ভিডিও চিত্র। ব্যস, জীবনটা পাল্টে দিয়েছে আবদুল্লাহর। তিনি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রিয় মুখ।
রোববার অ্যাডিলেড ওভালে পা রাখতে গিয়েই দেখা তার সঙ্গে। কথা বলতে গিয়ে দূর থেকে কিছুটা অপেক্ষা করতে হলো। কারণ তিনি ও তার কন্যাটি যে এখন সেলেব্রেটি তকমাটাও পেয়ে গেছেন! সবার ছবি তোলার আবদারটাও রক্ষা করতে হচ্ছে! হাসিমুখেই ফটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা!
বিজ্ঞাপন
সেই পর্ব যেন শেষই হতে চাইছে না। তারপরও মুখোমুখি হতেই বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলায় যেন দুলছিলেন তিনি! নিজের পরিচয়টা দিলেন শুরুতে-তিনি সুন্নাহ আবদুল্লাহ। থাকেন মেলবোর্নে। এখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ী হয়েছে। তবে নিজেকে সিলেটের মানুষ বলেই পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করেন।
আবদুল্লাহ তার কন্যাটিকে পাশে নিয়ে বলছিলেন, ‘আসলে প্রথমে বুঝিনি, এত কিছু হয়ে যাবে। ওই দিন খুবই আপসেট ছিলাম। আমার কন্যাটি মাঠে আসার আগে যত্ন করে টাইগারের ছবি একেছে। আর মাঠে এসে ভারতের বিপক্ষে যখন ওভাবে হেরে গেলাম-তখন খুব খারাপ লাগছিল। ওই সময় বাবার মনের অবস্থা দেখে খেলায় বাংলাদেশ হারার পর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই। আবেগে কেঁদে ফেলি আমরা। আর সেই দৃশ্যটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। সব জায়গায় ভাইরাল!’
বিজ্ঞাপন
এমন ব্যাপারটায় অন্যরকম ভালো লাগা ছুঁয়ে যাচ্ছে এই টাইগার ভক্তের। জাতীয় দলের পতাকা হাতে অ্যাডিলেড ওভালের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে এখন। এটা আমি মনে করি ক্রিকেটের প্রতিটি বাংলাদেশি দর্শকদের ভালো লাগার প্রতিচ্ছবি।’
জানালেন, ভারত ম্যাচ শেষে ফিরে গিয়েছিলেন মেলবোর্নের বাড়িতে। সেই মোমেন্টাম ধরে রাখতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা দেখতে ছুটে এসেছেন কন্যা আর পরিবার নিয়ে।
পাশে দাঁড়িয়ে ভাইরাল কন্যা জাফরিন। দুই গালে বাংলাদেশের পতাকা। একদম টাইগার সেজে এসেছে। বাবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলছিল, ‘আমি বাংলাদেশের ক্রিকেট ভালবাসি। আমার ফেভারিট ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।’ সঙ্গে জানালো পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দেখতেই ছুটে এসেছেন তারা!
তার আগে অবশ্য ‘তারকা’ খ্যাতিটাও উপভোগ করে যাচ্ছেন ১৯ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা আবদুল্লাহ। খবরটা প্রচার হতেই সিলেটের আত্মীয়-বন্ধুরা ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েই যাচ্ছে, ‘কী বলবো, ভারতের বিপক্ষে হারের পর আমার ভিডিওটা যখন ছড়িয়ে পড়ল, তখন প্রথম রাতে আমি ঘুমোতে পারিনি। এতো সমবেদনা জানাচ্ছিল। এরপর আসলে সেই খারাপ লাগাটা চলে গিয়েছিল। সবার ভালবাসা আর মানুষ যে ক্রিকেটের প্রতি এতোটা আন্তরিক, এইসব ব্যাপারগুলো খেয়াল করা উচিত। খেলার মধ্যে যেন সুষ্ঠু পরিচালনা হয়।’
সন্দেহ নেই ভারতের ক্রিকেটার বিরাট কোহলির ফেইক ফিল্ডিং আর ভেজা মাঠে খেলা নিয়ে আইসিসি অফিসিয়ালদের একচোখা আচরণেই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আবদুল্লাহ, ‘দেখুন ২০১৫ সালে এখানে এই অ্যাডিলেডে একটা সুখবর স্মৃতি ছিল। এখান থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলাম বিশ্বকাপের। সেই সুখকর স্মৃতি থেকে এখানে আসা। একটা পর্যায়ে ভারতের বিপক্ষে যখন জয়ের কাছাকাছি ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল অ্যাডিলেড থেকে একটা ভাল খবর নিয়ে ফিরবো। কিন্তু তখনই মাঠে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা দেখলাম মাঠে। আমাদের ক্রিকেটারদের ওপর অনেক কিছু ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তখন আমি নিজেও আবেগে জর্জরিত হয়েছিলাম।’
সেই আবেগেরই বহিঃপ্রকাশটা হলো চোখের নোনাজলে। এটাই হয়তো বাংলাদেশ। ভালো লাগায় আমরা হেসে উঠি, দুঃখে-কষ্টে ফেলি চোখের জল। দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসলেই কেবল এমনটা হয়!
এটি/এনইউ