সিডনিতে খুঁজে পেয়েছিলাম এক টুকরো বাংলাদেশ। তারপর ব্রিসবেনের গ্যালারিও রঙিন করে তুলেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সংখ্যায় কম হলেও তাদের যেন ছাড়িয়ে গেলেন অ্যাডিলেডের টাইগার ভক্তরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে একটুর জন্য হাত ফস্কে গিয়েছিল জয়। ৫ রানের সেই হারে অনেক বিতর্ক লেগে আছে। যেখানে বঞ্চিত হয়েছেন সাকিব আল হাসানরা। না হলে ম্যাচটা জিতেই মাঠ ছাড়তে পারতো দল।

সেই হারের যন্ত্রণা একপাশে রেখে রোববার ফের মাঠে হাজির প্রবাসীরা। কেউ এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার অন্য শহর পার্থ থেকে। কেউ আবার ছুটে এসেছেন মেলবোর্ন থেকে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেকেই দূরের শহর থেকে ড্রাইভ করে এসেছেন। কেউবা আবার ডমেস্টিক উড়ানে! সবারই একটাই লক্ষ্য-প্রিয় মাতৃভূমির হয়ে স্লোগান তোলা।

অ্যাডিলেড ওভালের মাঠের পাশেই দেখা মিলল সেই ভাইরাল বাবা-কন্যার। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ অফিসিয়ালদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জয় বঞ্চিত হওয়া ম্যাচ শেষে বাবার-সঙ্গে চোখের ফেলেছিলেন ছোট্ট জাফরিন। এই ম্যাচ দেখতেও তারা এসেছেন সুদূর মেলবোর্ন থেকে। 

দুই সন্তানকে নিয়ে ছুটির দিনে এসেছেন আরেক দম্পতি। গায়ে লাল-সবুজের জার্সি। আর মুখে হাসি। স্লোগানে স্লোগানে বলছিলেন, এমন সুযোগ দেশের বাইরে আমরা পাই না। এবার যেহেতু পেলাম, হাতছাড়া করিনি। সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছি। এটা ওদের দেশপ্রেম শেখানোর একটা অংশ বলতে পারেন!

মায়ের সঙ্গে এসেছে ছোট্ট আরেক শিশু, তার স্মৃতিতে অবশ্য এই ম্যাচটা থাকবে না। কারণ এখনো কিছু বুঝে উঠার সুযোগ নেই। মাথায় বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ দিয়ে তৈরি করা ব্যান্ড। পাশ থেকে ওর মা বলছিলেন, ‘ছেলেকে বাংলাদেশ চেনাচ্ছি এখন থেকেই।’ 

মাঠের বাইরে দেখা মিলল ভিনদেশি বাংলাদেশের সমর্থকেরও। তারা এসেছেন টাইগার জার্সিতে। একজন তো বলেই দিলেন, ‘আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতবে বাংলাদেশ। আমি সাকিব আল হাসানের ফ্যান। ও যেন ভাল করে সেটাই চাইবো।’

ছোট একটা ডামি টাইগার নিয়ে এসেছেন আরেক ভক্ত। যিনি অ্যাডিলেডেই থাকেন। এখানকার ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। তার গলায় উচ্ছ্বাস, ‘খেলায় যাই হোক আমরা আছি বাংলাদেশের সঙ্গে। সমর্থন তো দিতেই হবে। সঙ্গে হুংকারও দিলেন সেই ভক্তটি।’ 

অ্যাডিলেড ওভালের পাশে দেখা মিলল লুঙ্গি পরিহিত আরেক বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ততে। তিনি বলছিলেন, ‘এমন একটা মঞ্চে আমাদের প্রিয় পোশাক লুঙ্গিকে চেনাতেই এমনটা করেছি আমি। খুব ভাল লাগছে। দেশের বাইরে যখন এমন সুযোগ আসে তখন সেটি হাতছাড়া করতে চাই না।’ 

এরই পাশে একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পাকিস্তানের এক ভক্ত। আরেকটু সরাসরি বলা যায় কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরানের ভক্ত তিনি। বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটারটি এখন পুরোদস্তর রাজনীতিবিদ। সেই তো সেদিন গুলিবিদ্ধ হলেন। তার সুস্থতা কামনা করলেন পাকিস্তানের সেই নাগরিকটি। প্ল্যাকার্ডে যা লেখা, তার বাংলা অনেকটা এমন, ‘ইমরান খান, দ্রুত সেরে উঠুন, পাকিস্তানের আপনাকে প্রয়োজন।’ 

আবার এক নারী টাইগার ভক্ত সঙ্গে এনেছেন একটা বার্তা। যেটি দেশে থাকা তার মায়ের উদ্দেশ্যে এনেছেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ লেখা রয়েছে, ‘মা আমি এখানে।’

এমনই আনন্দ আয়োজন বসেছে অ্যাডিলেড ওভালে। সেখানে যারাই জিতুক, জিতবে আসলে ক্রিকেট আর এমন অন্তপ্রাণ ক্রিকেটপ্রেমীরা!

এটি/এজেড/এনইউ